কবি আল মাহমুদ এবং সেক্যুলারদের হিংসাত্মক মনোভাব
আযানকে নিয়ে নাকি একবার ব্যাঙ্গ করেছিলেন কবি শামসুর রাহমান!
এই শামসুর রাহমান এবং #আল_মাহমুদ দু'জনেই কিন্তু ছিলেন সমসাময়িক কবি! একটা সময় এ নিয়ে অনেক হৈচৈ, মাতামাতি, এমনকি হানাহানি পর্যন্ত হয়েছে! মগজহীন আবেগী কিছু নামধারী মুসলিম তখন এতটাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল যে, সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সময় পর্যন্ত তাদের কাছে ছিল না !?
শামসুর রাহমানকে ভাল করে পড়ে থাকলে ব্যাপারটা সহজেই বোধগম্য হবার কথা যে, তিনি এই টাইপের কথা সরাসরি কোথাও লেখেননি। কিন্তু পড়বে, সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে এত সময় কোথায় এদের ? তখন তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগটি তুলল কে? কেন? এসব নিয়েও এদের কখনো ভাবার সময় হয়নি! ভেবে দেখেনি- এমন মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে মাঝখান দিয়ে ফায়দা লুটছে কারা!
শামসুর রাহমানের অনেক ভাল কবিতা আছে। পড়ার মত। কিন্তু তার এমনও কিছু কবিতা আছে যা অশ্লীলতাকেও হার মানায়। অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ! কিন্তু সেক্যুলারদের কাছে আজ সেগুলোই অাধুনিক কবিতা! আজকাল আধুনিক কবিতা বলতে এরা তাই বুঝে! এই আধুনিক কবিতার নাম করে এরা যে বাংলা কবিতাকে কতটা নিম্নস্তরে নামিয়ে এনেছে, এই বোধটুকুও বোধহয় আজ এদের নেই! (এসব যখন এ লেখার আলোচ্য বিষয় নয়, তাই এসব নিয়ে অন্যদিন বলা যাবে) ।
শামসুর রাহমান ছিলেন স্ব-ঘোষিত #নাস্তিক! সুতরাং তাঁর ব্যক্তি-আদর্শে প্রভাবিত হবারও বিন্দুমাত্র কোনো কারণ নেই! তিনি মনে-প্রাণে ছিলেন ইসলাম-বিদ্বেষী! আকারে-ইঙ্গিতে, কৌশলে, তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন! ইসলামকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। তার রাজনৈতিক দর্শনও ছিল ভিন্ন। এটা থাকতেই পারে। তারপরও তাকে আমি একজন কবি হিসেবেই দেখেছি, যেটুকু পরিত্যাগ করার করেছি; যার কারণে সেদিনও এসব নিয়ে কথা বলেছি, আজকে যেমনটি বলছি কবি #আল_মাহমুদকে নিয়ে!
শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদ দু'জন সমসায়িক কবি হলেও, শামসুর রাহমান ইসলাম-বিদ্বেষি হবার কারণেই বামপন্হীদের কাছে হয়ে উঠলেন তুমুল জনপ্রিয়, আল মাহমুদও একটা সময়ে ছিলেন তাই; কিন্তু একটা সময় পর তিনি তাঁর ভুল বুঝে ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়লে বামপন্থীরা একজোট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে শুরু করল, একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দিতে লাগল! এমনকি তাঁর ফ্যামেলিকে নিয়েও মিথ্যা অপবাদ দিতে লাগল- কবিকে নাকি তাঁর পরিবারের লোকেরা দেখাশুনা করে না! অথচ বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো ! কবির ছেলেমেয়েরা সবাই তাঁর আশেপাশেই থাকেন। তাঁর ছেলের বউয়েরাই তাঁর যেটুকু সেবাযত্ন করেছেন- সেই চিত্র বাস্তবে না-দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন !আজকাল কয়টা ছেলের বউদের মধ্যে এমন মনোভাব খুঁজে পাওয়া যাবে?
আর মিডিয়া? মিডিয়া তো পুরোটাই এই বামদের দখলে। যারা মুখে তো আদর্শের বুলি আওড়ায়, কিন্তু কাজ করে ঠিক তার উল্টো। যার কারণে বাংলা-সাহিত্যের এত কালজয়ী লেখা লিখেও তিনি তাদের কাছে কোনো মূল্যায়ণ পেলেন না। তাঁর মৃত্যুর খবরটাও তাদের ইনার পেজে স্থান পায় ! টিভিতে অতটা গুরুত্ব দিয়ে সংবাদের শিরোনাম করা হয় না! পাতি কবি, খুচরা লেখক, হিংসুটে লোকগুলো তাঁকে আজীবন কষ্টই দিয়ে গেছে! তাঁকে কোণঠাসা করে রেখেছে!
এক #আল_মাহমুদ বাংলা-সাহিত্যের কি অমূল্য সম্পদ ছিলেন তা তাঁকে ভাল করে না-পড়লে ধারণা করাই সম্ভব না! তাঁকে নিয়ে যাদের এতটা জ্বলন তারা হয়ত তাঁর সাহিত্যকে ধারণ করারই ক্ষমতা রাখে না; অ-সাহিত্যিক, অথবা চেতনা বিক্রি করে নিজের ফায়দা হাসিল করা চাটুকার জাতীয় প্রাণি! একটা #সোনালি_কাবিন-ই চিনিয়ে দেয় আল মাহমুদ কি! বাংলা-সাহিত্যের একটি সেরা কাব্যগ্রন্থ এটি! '#পানকৌড়ির_রক্ত' বাংলা-সাহিত্যের একটি সেরা গল্পগ্রন্থ। '#পাখির_কাছে_ফুলের_কাছে' বাংলা-সাহিত্যের একটি সেরা কিশোর কাব্য। '#উপমহাদেশ' বাংলা-সাহিত্যের সেরা উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটা! '#যেভাবে_বেড়ে_উঠি' বাংলা-সাহিত্যের সেরা আত্মজৈবনিকগুলোর মধ্যে একটি। আরো অসংখ্য গল্প এবং কবিতা তো রয়েছে-ই! যারা তাঁর সাহিত্যের ধারেকাছেও পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে না, সেইসব নষ্টরা যখন তাঁকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে- তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে- সারাজীবন সাহিত্যের পেছনে ব্যয় করেও এরকম কয়টা লেখা লিখতে পেরেছেন? তাহলে কিসের জোরে এত বড় বড় কথা বলেন??
#আল_মাহমুদ ভাইকেও আমি বা আমরা একজন কবি হিসেবেই মূল্যায়ণ করি! তাঁর অসাধারণ সাহিত্যকর্মের জন্য তাঁকে মন থেকেই শ্রদ্ধা করি। তাঁর সাথে যতবারই দেখা হয়েছে, কথা হয়েছ- তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কথা বলিনি! আমি কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ নিয়ে চলি না, আমার এটার প্রয়োজনও নেই; তাই কবিকে আমি একজন কবি হিসেবেই দেখেছি! তিনিও আমাদের এই কারণেই ভালবাসতেন! আপন ভাবতেন!
তাঁর কি কোনো দোষ ছিল না? আছে, অবশ্যই আছে। ধর্মের দিকে ঝুঁকে যাবার আগেও অনেক ছিল; ঘাঁটলে অনেক পাওয়া যাবে ! কিন্তু সেই ভুলগুলো তিনি বুঝতে পেরেছেন বলেই সে পথে আর পা বাড়াননি। তাহলে সেসব নিয়েএত কথা কেন? এরপরেও তাঁর কিছু ভুল ছিল। কিন্তু সেই ভুলের পরিমাণ কতটা? শামসুর রাহমান, সৈয়দ হকদের মত লেখকদের তুলনায় তাঁর ভুলগুলো কি খুব বেশি ওজনদার ছিল? এতটাই অমার্জনীয় ছিল? এই সমস্ত লেখকরা যখন মস্তবড় ভুল করেও খুব সহজেই পার পেয়ে যায়, সেখানে #আল_মাহমুদকে নিয়ে এত জ্বলন কেন? যেখানে জঘণ্য কাজ করেও ঐসব লেখকেরা চাটুকারিতার জোরে সুশীল তকমা পেয়ে যায় সেখানে #আল_মাহমুদকে নিয়ে এত কাহিনি কেন?
যারা সব সময় দেশের মানুষকে মানবতার ছবক দিয়ে বেড়ায়, মুখে-মুখে প্রগতিশীলতার বুলি আওড়ায়; সব সময় বলে- লেখকদের কোনো জাত-ধর্ম নেই, তাদের পরিচয় একটাই- তারা লেখক, তারা সবকিছুর উর্ধ্বে; আজ সেইসব চেতনাজীবিদের কাছে জানতে ইচ্ছে করছে-
১. তাহলে কবি আল মাহমুদ কি ছিলেন? তাঁর বেলায় এই কথাটি প্রযোজ্য হল না কেন ?
২. তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাঁকে নিয়ে যদি এতই আপত্তি তাহলে শামসুর রহমান, সৈয়দ শামসুল হকদের বেলায় সেই একই কথা প্রযোজ্য হল না কেন? আপনাদের মুক্তমনা স্বভাবটা তখন কোন ভাগাড়ে থাকে?
৩. গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে যে মুখে এতটা ফেনা তুলে ফেলেন- এইটাই কি গণতন্ত্র চর্চার নমুনা? এমন দেশ-ই চেয়েছিলেন আপনারা?
দেশের এত বড় একজন জ্ঞানী, গুণী ব্যক্তি চলে গেলেন- রাষ্ট্র থেকেও একটা শোকবার্তা এল না। অথচ দেশের অনেক থার্ডক্লাস লেখক, বুদ্ধিজীবি আহ্ উহ্ করলেও তাদের জন্য শতটা ফ্যাসিলিটির বন্দোবস্ত করা হয়! জাস্ট পলিটিক্যাল কারণে! কি চমৎকার পলিটিক্যাল গেম!
কবি #আল_মাহমুদকে এমনিতেও শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হত না। কিন্তু তাঁর আগে আপনারাই 'না' করে দিলেন! বিষয়টা একদিক দিয়ে ভালই হল। দেশের মানুষজনও নতুন করে চিনে রাখল অপনাদের ! যেখানে দেশের এতবড় একজন মানুষের প্রবেশের অনুমতি মিলে না সেই দেশে এমন শহীদ মিনার....! এই শহীদ মিনারটা তাহলে কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে?
তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে সমাহিত করতে দেয়া হয়নি, অনুমতি দেয়া হয়নি ঢাবি'র কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করার! মনের ভেতর এতটা হিংসাত্মক মনোভাব ধারণ করে নিজেদেরকে মুক্তমনা বলতে লজ্জা হয় না ?
যারা বলে আল মাহমুদ জামাতিদের টাকায় চলতেন- তারা হয়ত জানেই না, আল মাহমুদ যদি চাইতেন, শামসুর রহমান, সৈয়দ হক'দের মত চাটুকারিতা করতে পারতেন, নিজের মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ, মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে দালালি করতে পারতেন- তাহলে তিনি যতটা না আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করেছেন তারচেয়ে শতগুণ বেশি রাজার হালে জীবনযাপন করতে পারতেন! সেজন্য তাঁকে কিছু করতেও হত না, যেসব জায়গা থেকে তাঁকে বাড়ি-গাড়ি, বিত্তের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল, অফার দেয়া হয়েছিল তাঁদেরকে শুধু 'হ্যাঁ' শব্দটি বললেই হত! আজীবন বিলাসি জীবনযাপন করতে পারতেন। দেশ-বিদেশ ঘুরতে পারতেন। সেসবকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মূল্যবোধটাকে বিসর্জন দিতে পারেননি বলেই শেষ বয়সে এসে তাঁকে তাঁর গুলশানের ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে মগবাজার তাঁর ছেলের বাসায় থাকতে হয়েছে! এসবের কতটুুকু জানেন আপনারা? অনেকে তো জেনেও এমন মিথ্যাচার করছে ! কেন?
ব্যক্তি আল মাহমুদকে চিনতে হলে সবার আগে তাঁর এই জায়গাগুলোকে শনাক্ত করতে হবে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাঁর সম্পর্কে প্রকৃত সত্যটা না-জেনে হিংসার বশবর্তী যারা অহেতুক মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে এরা কতটা অমানুষ হতে পারে, এটা ভাবতেও আজকাল ঘৃণা হয়!
কবি #জীবনানন্দ_দাশকে জীবিত থাকতে কেউ 'কবি' বলেই মেনে নিতে চায়নি; আল মাহমুদের বেলায় বিষয়টা তা না হলেও- আজকে যারা তাঁর বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছে, এর শূণ্যতা একদিন সবাইকে উপলব্দি করতে হবে!
যারা এমন জঘণ্য চিন্তা মনের ভেতরে লালন করে চলে, মুক্তমনার নাম করে অশান্তির বীজ ছড়িয়ে দেয়, তাদের কাছ থেকে কতটা ভাল কিছু আশা করতে পারে এই জাতি? এদের লেখা সাহিত্য পড়ে কি শিখবে আগামীর প্রজন্ম? কতটা সৎ এবং সু-নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠবে ? যারা সাহিত্য করার নামে সভাকবি, দালালি করাটাকেই মুখ্য করে নিয়েছে, যাদের কাছে সাহিত্যের চাইতে চামচামিটাই মুখ্য- এরা আর যাই হোক, লেখকের 'ল' ধারণ করারও যোগ্যতা রাখে না ! এদের মত অসৎ, চাটুকার, মূল্যবোধহীন লোকদের ঘৃণা করলেও 'ঘৃণা' শব্দটাকেও চরম অবমূল্যায়ণ করা হবে!
কবি আল মাহমুদ এবং সেক্যুলারদের হিংসাত্মক মনোভাব ।। হূুসাইন আহমদ শ্রাবণ
No comments