দাম্পত্য জীবনে বারাকাহ লাভের জন্য জরুরী কিছু বিষয়
দাম্পত্য জীবনে বারাকাহ লাভের জন্য জরুরী অথচ সবচেয়ে উপেক্ষিত:
আজ আপনাদের কে দুটি এমন বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যা প্রায় বিবাহে, দাম্পত্য জীবনে হয়ত এড়িয়ে যান বা অজ্ঞতার কারণে ভুলে থাকেন। অথচ বিষয় দুুটি সুখি দাম্পত্যের জন্য সহায়ক ও বরকতের জন্য জরূরী।
বিষয় দুটি হচ্ছে,
১. অতিথিবৃন্দ কর্তৃক বর ও কণের জন্য বরকতের দোআ করা।
২. স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর কপালে হাত রেখে রাসূল সা. এর শিখানো দোআ।
#অতিথিবৃন্দ কর্তৃক বর ও কণের জন্য বরকতের দোআ করা:
আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন যে বর্তমানে যারা বিবাহ অনুষ্ঠান সমূহে উপস্থিত হন তাদের মধ্য হতে হয়ত কিছু মানুষ পাওয়া যাবে যারা এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই মূলত এই দুআটি জানেন না বা বিবাহ অনুষ্ঠানে পাত্রের সাথে দেখা করে অথবা একান্তে এ দুআটি করেন না। অথচ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। আসুন জেনে নেই সেই দুআটিতে মূলত কি আছে।
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিবাহিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন,
بَارَكَ اللهُ لَكَ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْر
“বা-রাকাল্লা-হু লাকা ওয়াবা-রাকা ‘আলাইকা ওয়া জামা‘আ বাইনাকুমা ফী খাইরিন্”
অর্থঃ আল্লাহ আপনার জন্য বরকতদান করুন, আপনার উপর বরকত নাযিল করুন এবং কল্যাণের সাথে আপনাদের উভয়কে একত্রিত করুন।
(আবু দাঊদ, নং ২১৩০; তিরমিযী, নং ১০৯১; ইবন মাজাহ, নং ১৯০৫)
- আসুন বিষয়টির একটু গভীরে যাই। কি হতে পারে এই দুআটি পাঠ করলে?
১. এর মাধ্যমে মুসলিমদের পারস্পরিক সৌহাদ্য বৃদ্ধি পায়।
২. দুআ করা ইবাদাত। যাতে আছে কল্যাণ। আল্লাহ চাইলে অপর দম্পতির প্রতি আপনার দুআ আপনার দাম্পত্যকে সুন্দর করে দিতে পারেন।
৩. এ দুআর মাধ্যমে দুআকারীর বদ-নজর থেকে নব্য দম্পতি মুক্ত হয়ে যায়।
৪. মুসলিমদের দুআর মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় উভয়ের দাম্পত্যে বারাকাহ ও কল্যাণের পথ সহজ হয়ে যায়।
৫. বর্তমানে ভুলে যাওয়া একটি সুন্নাহকে জিন্দা করার অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল হবে ইংশাআল্লাহ।
৬. অতিথিদের পক্ষ থেকে নব দম্পতিদের প্রাপ্য হক হচ্ছে দুআ যা উপঠৌকন দিয়ে আদায় হয় না। আর বিবাহ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হলে তাতে উপস্থিত হওয়া ও উভয়ের জন্য দুআ করা রাসূল সা. এর নির্দেশ। সেই হক্ব আদায় হয়ে যায়।
৭. বর্তমানে অনেকেই বিবাহকে সামাজিক অনুষ্ঠান মনে করেন; এর মাধ্যমে এটা প্রকাশ হয় যে এটা মূলত একটি ইবাদাত।
উপরোক্ত বিষয়গুলো নজরে রেখে একটি বিষয়টির প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হচ্ছে বদ-নজর। বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেক মানুষ উপস্থিত হয়। এছাড়া বিবাহ অনুষ্ঠান যত বড় ও জাকজমক হয় তত মানুষের জিহ্বা ও চোখের আপদের সম্ভবনা বেড়ে যায়। তার একটি প্রতিরোধক হচ্ছে এ দুআটি। মানুষ যখন কারো জন্য বরকতের দুআ করে তখন তার মনে কোন ধরনের হিংসা বা আফসোস বিদ্যমান থাকে না। যেটা বদ-নজর ও এর প্রভাবের অন্যতম কারণ।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَىْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا " .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘কুদৃষ্টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাস্তব’। কোন বিষয় যদি ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত, তাহলে ‘কুদৃষ্টি’ ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত এবং তোমাদের (কুদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের) -কে গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করাবে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৯৫
আসুন আরেকটি হাদীস লক্ষ্য করি,
و حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَاهُ يَقُولُ اغْتَسَلَ أَبِي سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ بِالْخَرَّارِ فَنَزَعَ جُبَّةً كَانَتْ عَلَيْهِ وَعَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ يَنْظُرُ قَالَ وَكَانَ سَهْلٌ رَجُلًا أَبْيَضَ حَسَنَ الْجِلْدِ قَالَ فَقَالَ لَهُ عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ وَلَا جِلْدَ عَذْرَاءَ قَالَ فَوُعِكَ سَهْلٌ مَكَانَهُ وَاشْتَدَّ وَعْكُهُ فَأُتِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأُخْبِرَ أَنَّ سَهْلًا وُعِكَ وَأَنَّهُ غَيْرُ رَائِحٍ مَعَكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَأَتَاهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ سَهْلٌ بِالَّذِي كَانَ مِنْ أَمْرِ عَامِرٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَامَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ أَلَّا بَرَّكْتَ إِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ تَوَضَّأْ لَهُ فَتَوَضَّأَ لَهُ عَامِرٌ فَرَاحَ سَهْلٌ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ
আবূ উমামা ইবনু সহল ইব্নু হুনাইফ (র) থেকে বর্ণিতঃ (জুহফার নিকটবর্তী) খাব্বার নামক স্থানে আমার পিতা আবূ সহল (ইব্নু হানীফ) গোসল করার মনস্থ করে জুব্বা খুলে ফেললেন। আমির ইব্নু রবীয়া দেখতেছিলেন। আমার পিতা সহল সুন্দর ও সুদর্শন লোক ছিলেন। আমির বললেন, আজকের মতো আর কোনদিন আমি এত সুন্দর মানুষ দেখিনি, এমন কি এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট কোন যুবতীও দেখিনি। (আমিরের এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই) তৎক্ষণাৎ সহলের গায়ে জ্বর এল এবং জ্বরের বেগ ভীষণ হল। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলল, সহলের জ্বর এসেছে এবং সে আপনার সাথে যেতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহলের কাছে এলেন, সহল আমিরের সেই কথা নকল করে শোনালেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন মুসলমান নিজের ভাইকে কেন হত্যা করে ? অতঃপর আমিরকে বললেন, তুমি (বারাকাল্লাহ) বললে না কেন? বদ নজর (কুদৃষ্টি) সত্য। সহলের জন্য ওযূ কর, তাকেও ওযুর পানি দাও। আমির সহলের জন্য ওযূ করলেন এবং ওযুর পানি তাকে দিলেন। অতঃপর সহল ভাল হয়ে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে গেলেন, আর তাঁর কোন অসুবিধা তখন ছিল না। (বুখারী ৫৭৪০, মুসলিম ২১৮৭)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৬৮৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
তাই আপনার প্রতি, আপনার বিবাহ, দাম্পত্য, বিবাহ অনুষ্ঠানের বিষয়ে বদ-নজরকে উপেক্ষা করা যায় না। তাই উপস্থিত সকলেরই দুআটি পড়া উচিত। আর যেহেতু অধিকাংশই এ দুআটি জানে না তাই আমরা কিছু প্রক্রিয়ায় এ বিষয় অতিথিদের সচেতন করে তুলতে পারি।
আমাদের করনীয়:
১. দাওয়াত নামা বা কার্ডে এই দুআটি উল্লেখ করে সবাইকে এই দুআটি এসে পড়ার অনুরোধ করা যেতে পারে।
২. ওলীমাহ অনুষ্ঠানে গেটে/ বসার স্থানে/ সবার নজরে পড়ে এমন স্থানে দুআটি লিখে রাখা যেতে পারে।
৩. এই দুআটির গুরুত্ব বিষয়ে সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন করে তোলা যেতে পারে।
৪. আমরা নিজেরাও যারা এ বিষয়ে অবগত আছি তারা দুআ করে অপরকে উৎসাহ করা যেতে পারে।
৫. বিবাহ পরবর্তী আপনাদের দাম্পত্য জীবনের এমন কিছু প্রকাশ্যে উপস্থাপন না করা যাতে বদ-নজরের বা হিংসার সম্ভবনা রয়েছে। অবশ্যই এ কারণ সামাজিক মিডিয়া যেমন ফেসবুকে এমন কিছু শেয়ার করা ঠিক নয়।
আমরা সকলে চেষ্টা করলে আল্লাহর ইচ্ছায় এই মৃতপ্রায় সুন্নাতটি আবার অনুশীলনে নিয়ে আসা সহজ হবে (ইন শা আল্লাহ্)।
আসুন দ্বিতীয় বিষয়টি জেনে নেই।
.
#স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর কপালে হাত রেখে কল্যাণের দোআ:
অনেকে বিষয়টি যেভাবেই নিক, এ বিষয়টি সত্য যে মানুষের চিন্তা, নজরের মাধ্যম অকল্যাণ আসতে পারে। যাকে বদ-নজর বলা হয়। ঠিক এমন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে। ব্যক্তির উপর কিছু বিষয়েও অকল্যাণ থাকতে পারে যেমনটা বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الشُّؤْمُ فِي الْمَرْأَةِ وَالدَّارِ وَالْفَرَسِ ".
আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্ত্রী, বাড়িঘর এবং ঘোড়ায় অশুভ আছে।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৯৩
অতএব যেখানে শরীয়াতের কোন শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয় সেখানে শয়তানের প্রভাব বেশি থেকে যায়। তাই নব দম্পতির জন্য দুআর এর পাশাপাশি স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কপালে হাত রেখে দুআ করা অতীব জরূরী। অন্যথায় দাম্পত্য জীবনে শয়তানের প্রভাব থেকে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। যার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন অসুখি ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। আল্লাহ সবাইকে হিফাযত করুন।
আসুন দুআটি জেনে নেই,
রাসূল সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো মেয়েকে বিয়ে করে, বা খাদেম গ্রহণ করে, অথবা বাহন ক্রয় করে, তখন যেন সে বলে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৬০
সম্পূর্ণ হাদীস হলো:
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا تَزَوَّجَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً أَوِ اشْتَرَى خَادِمًا فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَإِذَا اشْتَرَى بَعِيرًا فَلْيَأْخُذْ بِذِرْوَةِ سَنَامِهِ وَلْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ زَادَ أَبُو سَعِيدٍ " ثُمَّ لْيَأْخُذْ بِنَاصِيَتِهَا وَلْيَدْعُ بِالْبَرَكَةِ " . فِي الْمَرْأَةِ وَالْخَادِمِ
আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন নারী কে বিয়ে করে অথবা কোন দাসী ক্রয় করে তখন সে যেন বলেঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর মধ্যকার কল্যাণ এবং এর মাধ্যমে কল্যাণ চাই এবং তার মধ্যে নিহিত অকল্যাণ ও তার মাধ্যমে অকল্যাণ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই”। আর যখন কোন উট কিনবে তখন যেন সেটির কুঁজের উপরিভাগ ধরে অনুরূপ দু’আ করে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ সাঈদের বর্ণনায় রয়েছে অতঃপর তার কপালের চুল ধরে বলবে। স্ত্রী এবং দাসীর ব্যাপারেও বরকতের দু’আ করবে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৬০
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
আসুন সবাই এ দুটি বিষয়ে আমল করি। এতে দাম্পত্য জীবনে শয়তানের সকল কু-প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ইংশাআল্লাহ।
No comments