Header Ads

Header ADS

আদর্শ পাত্রের বৈশিষ্ট্য

। আদর্শ পাত্রের বৈশিষ্ট্য ।

• ধার্মিকতা

পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজতে বলা হয়েছে, তেমনি পাত্রের বেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে পাত্রের ক্ষেত্রে প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো তার দীনদারী ও চরিত্র।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনদার এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী পুরুষের সাথে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছেন। সৎকর্মশীলতা এবং উত্তম চরিত্রের জন্য প্রশংসিত কোনো পুরুষ কোনো নারীকে বিয়ে করতে চাইলে তার প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আবু হুরায়রা, ইবনে ‘উমর এবং আবু হাতিম আল-মুযানি রাদিআল্লাহু আনহুম বর্ণনা করেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমার কাছে আসে এবং তুমি তার দীন এবং চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হও, তা হলে তাকে বিয়ে করো—যাতে করে পৃথিবীতে ফিৎনা এবং বড় ধরনের বিপর্যয় ছড়িয়ে না পড়ে।”
[আত-তিরমিযি, ইবনু মাজাহ এবং আরও অনেকে হাদীসটি সংকলন করেছেন। আল-আলবানি হাদীসটিকে হ়াসান বলে মত দিয়েছেন (সহ়ীহু়ল জামে’, হাদীস নং ২৭০ এবং আস-সহীহাহ, হাদীস নং ১০২২)]

• উত্তম চরিত্র

কোনো নারী যখন একজন দীনদার এবং উত্তম চরিত্রের কোনো পুরুষকে বিয়ে করে, তখন তার হারানোর কিছুই থাকে না—সে তাকে স্ত্রী হিসেবে রাখলে উত্তম আচরণের সাথেই তাকে রাখবে; আর সে যদি তাকে তালাক দিতে চায়, তা হলে সেটাও সে উত্তম আচরণের সাথেই করবে। অধিকন্তু, স্বামী দীনদার এবং উত্তম চরিত্রের হলে তা স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি সকলের জন্যই কল্যাণকর। এতে তারা দীনের জ্ঞানার্জন এবং আরও ভালোভাবে দীন পালনের ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহায়তা করতে পারবে।

কোনো পুরুষের যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো না থাকে, তা হলে একজন নারীর উচিত হবে সে পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ না করা। বিশেষ করে যদি সে সালাত আদায়ের ব্যাপারে অবহেলা করে, মদ্যপানে আসক্ত হয়, ব্যভিচারে কিংবা এই ধরনের অন্যান্য বড় পাপে লিপ্ত থাকে। স্বামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থসম্পদ এবং সামাজিক পদমর্যাদা যেন কখনোই একজন নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাপকাঠি না হয়।

• আর্থিক অবস্থা

দুঃখের বিষয়, বিয়ের জন্য ছেলে খোঁজার সময় মেয়ের পরিবার বা অভিভাবক ছেলের ঈমান-আকীদা এবং তাক্বওয়ার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রথমেই তার অর্থ-সম্পদের দিকে নজর দেয়। অধিকন্তু, আজকের দিনের অধিকাংশ মুসলিম নারীরাও অনৈসলামী মতাদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। অথচ তাক্বওয়া, উত্তম চরিত্রই কেবল টেকসই ও প্রেমময় দাম্পত্য-সম্পর্কের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু অধুনা মুসলিম নারীরা এ ধরনের স্বামী আর খোঁজে না। তারা স্বামী হিসেবে এমন পুরুষকে খুঁজে বেড়ায় যে ঐশ্বর্যশালী, যার রয়েছে উচ্চ পদমর্যাদা কিংবা যে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কোনো বিশেষ ডিগ্রিধারী। আর এমনটি করতে গিয়ে তারা দীন-ধর্ম, নৈতিকতা এবং সর্বোপরি সখু পর্যন্ত বিকিয়ে দিচ্ছে।

আমরা অবশ্যই মুসলিমদেরকে দারিদ্র্যের মাঝে জীবন কাটানোর আহ্বান জানাচ্ছি না। তবে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলছি, অর্থসম্পদ এমন একটি গৌণ বিষয় যেটাকে কখনোই দীন এবং উত্তম চরিত্রের সমকক্ষ মনে করা উচিত নয়। তা ছাড়া দারিদ্র্য কিংবা সচ্ছলতা কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। বিত্তশালী কোনো ব্যক্তি অল্প দিনের মধ্যেই দরিদ্র হয়ে যেতে পারে, আবার দরিদ্র কোনো ব্যক্তিও অল্প সময়ের মধ্যেই সচ্ছল হয়ে যেতে পারে।

• আচার-ব্যবহার ও সৌজন্যবোধ

অনেক সময় মানুষের সাধারণ দীনদারি, সালাত, সিয়াম, চরিত্র ঠিক থাকলেও আচারব্যবহার ভালো থাকে না। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, বাইরের মানুষদের সাথে বেশ অমায়িক ব্যবহার করলেও ঘরের মানুষদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকে। এ স্বভাবের কারণে নিজেদেরদের সম্পর্কগুলো একেবারে ভেঙে না দিলেও সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করে দেয়।

ইসলামে যে উত্তম চরিত্রের কথা বলা হয়েছে সেটা কেবলই অশ্লীলতা ও যিনা- ব্যভিচার থেকে দূরে থাকার কথা বোঝায় না; বরং আচার-ব্যবহারও এর মধ্যে শামিল। কোনো পাত্রের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় খেয়াল করুন তার আচার-ব্যবহার কেমন; সে তার পরিবার-পরিজন, অফিস কলিগদের সাথে কীভাবে মেশে; ড্রাইভার, দারোয়ান কিংবা কাজের লোকদের সাথে কেমন আচরণ করে। মুখে হাসি রেখে কথা বলে, নাকি সারাক্ষণ বদমেজাজি হয়ে থাকে।

• চেহারা

পুরুষদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন কঠোর কঠিন ও দুরূহ কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি কাজ করা, বিশাল ভারী বোঝা বহন করা, হাজার ফুট মাটির গভীরে খনিতে নেমে খনিজ দ্রব্য উত্তোলন করা, সমুদ্রযাত্রার মতো দুঃসাহসিক কাজ, উঁচু উঁচু ইমারত নির্মাণসহ যত রকম কঠিন কায়িক পরিশ্রমের কাজ আছে এগুলো করা পুরুষের দায়িত্ব। তাই পুরুষের সাধারণ শারীরিক কাঠামোর মধ্যে নারীর মতো কোমলতা, সৌন্দর্য, কমনীয়তা নেই। আল্লাহই পুরুষকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষের সৌন্দর্য তার পৌরুষদীপ্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিহিত। তাই তার চেহারা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পুরুষের চেহারার সৌন্দর্য তার দাড়ির মধ্যে পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে 'Beard for a man is like mane for a lion.' অর্থাৎ ‘পুরুষের দাড়ি হলো সিংহের কেশরসম’।

মুখে দাড়ি না থাকা একটি নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য। দাড়িবিহীন একজন সুস্থ সবল সুগঠিত চেহারার যুবককে কোমলমতি একজন নারীর সাথেই সামঞ্জস্য আনা যায়। এ জন্য অনেক বিদ্বান লোকেরা দাড়িহীন লোকদের দিকে তাকানোকে কিছুটা নারীদের দিকে তাকানোর সাথে তুলনা করেছেন। তাই পাত্রের চেহারা দেখার ক্ষেত্রে দেখুন তার দাড়ি আছে কি না।

['ভালোবাসার চাদর' বই থেকে]

No comments

Powered by Blogger.