Header Ads

Header ADS

অন্দরমহল - ১ | জাফর বিপি

একদল লোক পানির ভেতর লুঙ্গীবিহীন দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের এই বেহায়াপনা দেখে হযরত আবু মুসা (রা.) বললেন, এমন করার চেয়ে আমার নিকট একবার মরে জীবিত হওয়া, আবার মরে জীবিত হওয়া এবং পুনরায় মরে জীবত হওয়া অধিক প্রিয়। 

তিনি অন্ধকারে গোসল করলেও কাপড় না পরা পর্যন্ত কুঁজো হয়ে বসে থাকতেন, আল্লাহকে লজ্জা করার কারণে সোজা হতে পারতেন না। [আবু নুআঈম] 

সিদ্দিকে আকবার হযরত আবু বকর (রা.) আল্লাহকে লজ্জা করার কারণে বাইতুল খালায় (টয়লেটে) মাথা ঢেকে যেতেন। [কানয্] 

উসমান (রা.) যদি কোনো বন্দি ঘরেও থাকতেন, আর সেখানে তার গোসল প্রয়োজন হতো, সেখানেও তিনি গোসলের জন্য খালি গা হতে পারতেন না। লজ্জায় তার মেরুদণ্ড সোজা হতে পারতো না। 

একবার রাসূল (সা.) এর সামনে আবু বকর (রা.) ও আয়িশা (রা.) সহ কয়েকজন উপস্থিত ছিল, তো এমন সময় উসমান (রা.) ভেতরে আসার অনুমতি চাইলে তিনি আয়িশা (রা.)কে সরে যেতে বলেন। পরে আলাপ শেষে সবাই চলে গেলে আয়িশা (রা.) রাসূল (সা.)কে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তখন তুমি আমার পাশে থাকলে না সে কথা বলতে পারতো, আর না সে মাথা উঠাতে পারতো।

তাঁর এই লজ্জাশীলতার দরুণ ফেরেস্তারা পর্যন্ত তাঁকে অত্যধিক লজ্জা করে। [বিদায়াহ] 

এ ছিল আমাদের পূর্বসুরিদের লজ্জা। যেটা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। যেটা ছাড়া ঈমান অপূর্ণ। 

আজ আমাদের মাঝে কোনো কুমারী মেয়ের মধ্যেও কি এই লজ্জা উপস্থিত আছে? কিংবা এর কিয়দাংশ? যত লজ্জাবতী নারীই হোক, একাকী কিংবা অন্ধকারে গোসল অথবা পবিত্রতা অর্জনের সময় আল্লাহকে লজ্জা করার দরুণ সাহাবাদের মতন এমন সংকোচবোধ কি আমাদের মাঝে আসে? ছেলেদের কথা না হয় বাদই দিলাম। 

এ তো গেল ড্রয়িংরুমের লজ্জা। এবার একটু অন্দরমহলে আসি। 

শরিয়াহ সম্মতভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো পর্দা নেই। এ কথার মানে কি এই আসে যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনো লজ্জাও থাকতে নেই? 

আম্মাজান আয়িশা (রা.) এবং রাসূল (সা.) তাদের সফল দাম্পত্য জীবনে উভয়েই কেউ কারো লজ্জাস্থানের প্রতি চোখ তুলে তাকাননি। একথা তো বেশ প্রসিদ্ধ। এখানে আমি এটা বলতে চাচ্ছি না, এটা নাজায়েজ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সবই জায়েজ। আমি বলতে চাচ্ছি, তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝেও লজ্জাশীলতার ব্যাপারটি কেমন ছিল। তাই আল্লাহকে লজ্জা করেই এই ব্যাপারটি থেকে বিরত থাকা উত্তম মনে করি।

তাছাড়া অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, লজ্জাশীলতার দিক থেকে যে দম্পতি যত বেশি সেন্সেটিভ, তাদের দাম্পত্য জীবন তত বেশি শ্রদ্ধাশীল, মার্জিত ও সম্মানজনক। ব্যক্তিত্বের দিক থেকেও তারা অন্যদের চেয়ে অনেক উন্নত।

আজকাল তো টিনেজ বয়সের বাচ্চাদেরও মাইনাস পাওয়ারের চশমা লাগে। ইন্টারনেটের উদোম রাজ্যে বাতাস খেতে খেতে অধিকাংশেরই আজ এই দশা। তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যাদের অন্য কারণে প্রকৃতই চোখের সমস্যা। সেটা ভিন্ন ব্যাপার।

তবে বিশেষত অবিবাহিতদের বলব, ক'দিন পর তো বিয়ের মাধ্যমে সবই পাবেন। তাই সাময়িক সময়ের জন্য কী দরকার এত উতলা হওয়ার? সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করুন। না থাকলে রোজা রাখুন। একটু সবর করুন। আল্লাহকে ভয় করুন। 

আজ আপনার চোখের এই অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের তোহফা স্বরূপ আগামীকাল এই চোখে গলিত সীসা ঢালা হবে। তাই ডিভাইসের স্ক্রিনে প্রতিটি পলক ফেলার পূর্বে সেই সীসার কথা একটু স্মরণ রাখলে আর ভয় নেই। আর এপারে আধা ইঞ্চি মোটা চশমার আজাব থেকেও বেঁচে যাবেন। মুক্ত চোখে আজীবন রবের অপূর্ব সব সৃষ্টি দেখতে পারবেন। এবং ফিরদাউসের অপরূপ সব নিয়ামাহ দেখে দেখে চক্ষু-কলিজা-জান-প্রাণ সব শীতল করতে পারবেন। 

সেখানে কারো জন্যই কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। আর ক'টা দিনই তো, দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। সেখানে অনিন্দ্য ও অকল্পনীয় সব উদ্যানে অবাধ বিচরণ ও স্বাধীনতার চিরস্থায়ী এলান শুনিয়ে দেয়া হবে। 

||অন্দরমহল-১||

~জাফর বিপি

No comments

Powered by Blogger.