তাকওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত
''তাকওয়া"
তাকওয়া (আরবি: تقوى) হল, আল্লাহর ভয় এবং এটি একটি ইসলামী শব্দ।
.
🌸তাকওয়ার অর্থ____
.
🍁ইবনে রজব (রহ:) বলেন, “তাকওয়া মানে আনুগত্য শীল কর্মের মাধ্যমে এবং নাফরমানি মূলক বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্রোধ এবং শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।”
.
🍁কুশাইরী (রহ:) বলেন, “প্রকৃত তাকওয়া হল, শিরক থেকে বেঁচে থাকা, তারপর অন্যায় ও অশ্লীল বিষয় পরিত্যাগ করা, অতঃপর সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বিরত থাকা, এরপর অনর্থক আজেবাজে বিষয় বর্জন করা।”
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রা:) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে: আল্লাহ্র আনুগত্য করা- নাফরমানি না করা, তাঁকে স্মরণ করা- ভুলে না যাওয়া, তাঁর কৃতজ্ঞতা করা- কুফরী না করা।”
সাহ্ল বিন আবদুল্লাহ্ বলেন, “বিশুদ্ধ তাকওয়া হল- ছোট-বড় সব ধরণের গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা।”
.
🌸সহজ কথায় বলতে গেলে_______
🌼"তাকওয়া হলো তাই, যখন ফেইসবুকের ওয়ালজুড়ে আপনি একটা মুভির এতো এতো রিভিউ দেখার পরও, এতো এতো বিচার-বিশ্লেষণ দেখার পরও, ওই মুভির লিঙ্কে ক্লিক করেন নি, মুভিটা দেখেন নি, কারণ, আপনি জানেন, মুভিটা দেখলে আপনার নফস তৃপ্ত হবে, কিন্তু অখুশি হবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা। নফসের তৃপ্তি আর আল্লাহর সন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টিটাকে বেছে নেওয়ার নামই তাকওয়া।"
~আরিফ আজাদ🥀
.
🌼"গুনাহ করার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও গুনাহের সাজার ভয়ে গুনাহের মজা ত্যাগ করাকে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি বলে।"
~মুফতি মুশতাকুন্নবি (হাফিঃ)🥀
.
.
☘️কোন ব্যক্তির তাকওয়া আছে কি না তা তিনটি বিষয় দ্বারা সুস্পষ্ট হয়:
ক) যা এখনো অর্জিত হয়নি সে বিষয়ে আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখা।
খ) যা পাওয়া গেছে তাতে পূর্ণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং
গ) যা পূর্বে পাওয়া যায়নি তা নিয়ে হতাশ না হওয়া।
.
🌼সাওরী বলেন,
প্রকৃত তাকওয়া হল- “পাপ ছোট হোক আর বড় হোক তা পরিত্যাগ কর; এটাই আসল তাকওয়া। সতর্ক হও সেই ব্যক্তির ন্যায় যে কাঁটা বিছানো পথে সাবধানতার সাথে চলে।”
পাপ ছোট তাই তাকে তুচ্ছ মনে কর না; কেননা ছোট ছোট কঙ্কর দ্বারাই গঠিত হয়েছে বিশাল পাহাড়।
.
🍁তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপায়:
.
☘️ফরয-নফল সবধরনের ইবাদত অধিকহারে করা।
.
🍁আল্লাহ্ বলেন: “হে লোক সকল তোমরা ইবাদত কর তোমাদের রবের যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়াবান হতে পার।” [সূরা বাক্বারা- ২১]
.
🌸রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা‘যীম করা, তাঁর সুন্নতকে বাস্তবায়ন করা, তা প্রচার-প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা চালানো, শুধু তাঁর নির্ধারিত পদ্ধতিতেই আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর নৈকট্য কামনা করা। তাঁর দ্বীনের মাঝে কোন বিদআতের অনুপ্রবেশ না ঘটানো। আর সেই সাথে যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকা। যেমনটি ত্বলক বিন হাবীব বলেন, ‘তাকওয়া হল- তুমি আল্লাহ্র আনুগত্যের কাজ করবে তাঁর নির্দেশিত পথে এবং আশা করবে আল্লাহ্র প্রতিদানের। তুমি আল্লাহ্র নাফরমানি ছেড়ে দিবে তাঁর নূরের ভিত্তিতে এবং আল্লাহ্র শাস্তির ভয় করবে।
.
🌸তাকওয়ার ৫ টি ফলাফল:
.
🍁আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর বান্দাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সুসংবাদ দিয়েছেন। নির্ধারণ করেছেন তাকওয়ার জন্য সুন্দর ফলাফল এবং সম্মান জনক পরিণতি। তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
.
১) দুনিয়া এবং আখেরাতে আনন্দের সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “যারা ঈমান এনেছে এবং তাওক্বওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া এবং আখেরাতে।” [সূরা ইউনুস- ৬৩-৬৪]
২) সাহায্য ও সহযোগিতার সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের সাথে থাকেন, যারা আল্লাহ্কে ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম করে।” [সূরা নাহাল- ১২৮]
৩) জ্ঞানার্জনের সুযোগ লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “এবং আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ্ তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন।” [সূরা বাক্বারা ২৮২]
৪) সত্যের পথ পাওয়া এবং হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারা: আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে; তবে তিনি তোমাদেরকে (হক ও বাতিলের মাঝে) পার্থক্য করার তাওফীক দিবেন।” [সূরা আনফাল- ২৯]
৫) গুনাহ মাফ এবং বিরাট প্রতিদানের সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, তিনি তার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং বিরাট প্রতিদানে ভূষিত করবেন।” [সূরা ত্বালাক- ৫]
.
🍁🍁প্রকাশ্যে পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নাম তাকওয়া নয়; বরং গোপন-প্রকাশ্য সবধরনের পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নামই আসল তাকওয়া। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তুমি যেখানেই থাকনা কেন আল্লাহকে ভয় কর।” [তিরমিযী]
No comments