স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য
ইসলামে যেমন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব র কথা বলে দিয়েছেন,তেমনি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব র কথা বলে দিয়েছেন।ইসলামে নারীদেরহক এর ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, "রাসুল(ﷺ) বলেছেনঃ ‘আমার কাছ থেকে মেয়েদের প্রতি সদাচারণ করার শিক্ষা গ্রহণ করো। কেননা, নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টাই সবচেয়ে বাঁকা। অতএব, তুমি যদি তা সোজা করতে চাও, তবে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখো, তবে বাঁকা হতেই থাকবে। কাজেই মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করো।" [
এই কারণে ইসলাম প্রত্যেকের মাঝে ভালোবাসা তৈরির জন্য বেশ কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য দিয়েছে। ইসলাম প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব কি হবে, তা খুব সুন্দর ভাবেই বলে দিয়েছে আর ইসলামের এসব হুকুম-আহকাম সূমহ যদি নারী-পুরুষ উভয় অনুসরণ করে, তবে ইনশা আল্লাহ একটি সুখী পরিবার তৈরি হবে।
১. স্ত্রীর ভরণ পোষণ করা
প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব তার স্ত্রীর ভরণ পোষণ করা। স্ত্রীর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, আরামদায়ক বাসস্থান, উপযুক্ত পোশাক এবং অনান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো, স্ত্রীর দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা। হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ “তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে।
– আবু দাউদ : ২১৪২
স্ত্রীর চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল চাহিদা পূরণ করতে হবে। আর স্বামীর মৌলিক দায়িত্ব হলো হালাল পথে উপার্জন করা।
২. শারীরিক চাহিদা পূরণ
মানুষের সামাজিক চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে জৈবিক চাহিদা। অপরদিকে বিবাহ হল এই জৈবিক চাহিদা পূরণের হালাল মাধ্যম।
তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।
– বাকারা : ২২৩
ইসলামে স্ত্রীর এই চাহিদাকে অনেক বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছে। হযরত উমর রাঃ আদেশ প্রদান করে দেন, কোন বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীর নিকট থেকে ৪ মাসের বেশী আলাদা বা দূরে থাকতে পারবেনা।
৩. স্ত্রীর মতামতকে সম্মান করুন,গুরুত্ব দিন।
তার পছন্দকে গুরুত্ব দিন।
একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর কথাকে মর্যাদা দেয়া। ।স্ত্রী হলো তার অর্ধাংশ। তাই স্ত্রী যেকোন বিষয়ে মতামত প্রদান করার অধিকার রয়েছে।
৪. স্ত্রীর পিতা-মাতাকে সম্মান করা
স্ত্রীর পিতা-মাতা তথা শ্বশুর শাশুড়িকে সম্মান করতে হবে। সেই সাথে স্ত্রীর পরিবারের অনান্য সদস্যর সাথেও সুন্দর সম্পর্ক রাখতে হবে।এতে স্ত্রী ও আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাল বয়বহারে উতসাহিত হবে।রাসূল স: খাদিজা রা: মারা যাবার পর ও তার বান্ধবি দের খোজ খবর রাখতেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই পরিপূর্ণ ঈমানদার যিনি তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা চরিত্রবান। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে ভাল।
– তিরমিযী -১/২১৭-১৮; আহমাদ-২/২৫০, ৪৭২; আবূ দাঊদ হা. ৪৬৮২;
৫. স্ত্রীকে আঘাত কিংবা মারধর করা যাবে না
এটা একদম প্রাথমিক বিষয় যে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে মারধর করবে না। কেননা একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো স্ত্রীর যত্ন এবং নিরাপত্তা রক্ষা করা। একজন রক্ষক কখনোই ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে না।
মনে রাখতে হবে মেয়েটির পিতা-মাতা তার হাতে তুলে দিয়েছে মেয়েটির জীবনের দায়িত্ব নেয়ার জন্য, শোষণের জন্য নয়। একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর একজন ভাল বন্ধু হওয়া। পরস্পরের মধ্যে যদি কখনো বাত বিতণ্ডা হয় তবে উভয় পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আর কখনো স্ত্রীর মুখে আঘাত করা যাবে না।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি।
– সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫,
৬. ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনে উৎসাহ প্রদান
স্বামী দ্বীনদার হলে স্ত্রীকে দ্বীন পালনে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। স্ত্রীর ইসলামের জ্ঞান না থাকলে তাকে অবশ্যই ইসলামী জ্ঞান প্রদান করুন।
এমন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না যা তার ইসলাম পালনে বাঁধা তৈরি করে। তার পর্দার বিধান নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। তার বসবাসের পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বামীর দায়িত্ব।
৭. স্ত্রীর গোপন কিছু অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে না
স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে যখন কোন বিষয় সংঘটিত হয়, তা কখনোই অন্যের কাছে প্রকাশ করা যাবে না।
৮. কৃতজ্ঞতা এবং প্রশংসা করা
স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতিটি ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান করা। স্ত্রী যদি স্বামীকে কোন হাদিয়া দেয় তাহলে তা হাসিমুখে গ্রহন করুন।স্ত্রীকেও হাদিয়া দিন।তারা আপিনার থেকে খুব ক্ষুদ্র হাদিয়া তেও অনেক বেশি খুশি হবে।
স্ত্রীর রান্নার প্রশংসা করুন,
সৌন্দর্যের প্রশংসা করুন
শিশু-লালন পালনের সহযোগীতা করুন।
তার কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, স্বামীর সামান্য একটু প্রশংসা স্ত্রীকে অনেক বেশী খুশি রাখে।
৯. স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যান,স্ত্রীকে সময় দিন।এতে পারিবারিক বন্ধন সুঢ়দ হবে।
স্ত্রীকে সার্বক্ষনিক চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি রাখলে এম্নিতেই মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। পারে।তার আত্মীয় স্বজনের বাসায় গমন করা যেতে পারে। এতে করে তার মধ্যে সতেজতা আসবে।
১০. হাসি মুখে কথা বলুন।
স্ত্রীর সাথে হাসি মুখে কথা বলাটাও একটা ইবাদত। তার সাথে হাসি ঠাট্টা করুন। আনন্দ-ফুর্তি কিংবা শরীয়ত মোতাবেক যেকোন বিনোদন বা খেলাধুলাও করা বৈধ।
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলে তাঁকে অতিক্রম করে যাই।
– আবূ দাউদ ২৫৭৮, আহমাদ ২৩৫৯৮, ২৪৪৬০
উক্ত হাদিসে দেখা যায় স্বয়ং রাসূল সাঃ তাঁর স্ত্রীর সাথে খেলাধুলা করতেন।
স্বামী এবং স্ত্রী কখনোই একজন আরেক জনের প্রতিদন্ধি, প্রতিযোগী নয়,তারা একজন আরেকজন এর সহযোগী।
"তথ্যসংগৃহিত"
No comments