আরবী কিভাবে শিখবেন/?
▌আরবী কিভাবে শিখবেন?
.
এ-বিষয়টা নিয়ে শুরুতে অনেকেই একটু কনফিউযড থাকেন। একেক জন এ ক্ষেত্রে একেক রকম উপদেশ দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে একটা গল্প বলি।
.
এই তো কদিন আগের কথা। আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে কল করেছিলাম। বেসিকলী আমার স্ত্রীর দিকের অনেকেই হাফেজ্জী হুজুরের আত্মীয়। তো তাদের অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে আমার শ্বশুর বাড়িতে খবর দিয়ে যাচ্ছে সালাফির সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়ে কত অনর্থই না হয়েছে। নানা রকম গাইয়া সাইয়া বই ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমাকে দেওয়ার জন্যে। অনেক ক্ষেত্রে উষ্মা প্রদর্শনকারীনীদের অনেকেই নারীকুল হতে। তো শাশুড়ি আম্মা পরেছেন মহা বিপাকে। শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। ধীরে সুস্থে তাদের কিছু বুঝিয়ে বলতে পারছেন না। এদিকেও কিছু বলতে পারছেন না। এরই মধ্যে একটা খবর এল শ্বশুর বাড়ির ঐ দিককার কোন এক গাইয়া হুজুর আহলে হাদিস হয়ে গিয়েছেন। এতে তার প্রতি তার স্বজনদের নাকি অসহনীয় অত্যাচার চলছে। তো আমাকে খুব করে অনুরোধ করেছে আমি যেন কল করি।
.
আমি কাজের আর জীবনের চাপে কল করবার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। ব্যক্তিগতভাবে আমি আসলে খুব বেশী উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। যাই হোক স্ত্রীর অসংখ্য অনুরোধের মুখে কলিং কার্ড কিনে কল করে বসলাম। ওপাশ থেকে যে লোকটা কল ধরল সে বলতে থাকল সে কুরআনের হিফযখানা চালায়। তার পরিচয়টা না দিই আপাতত। তার ভায়রা দেওবান্দী মাসলাকের বিখ্যাত আলিমদের একজন। তো সে আমাকে বললো হাদিস যে আল কুরআন যে এক প্রকার হাদিস এ কথা সত্য নয়। তারপর আমাকে হাদিস পড়ে শুনাল ৭৩ ফিরকার যাতে "মা আনা আলাইহি" এর হা দ্বামীর আল মুত্তাসিল এর অর্থ নাকি শুধু কুরআন। তারপর বললো "আপনি তো ইংরেজি বাংলা পড়ে পড়ে ইসলাম শিখেছেন। নিশ্চয়ই নোমান আলী খানের নাম শুনেছেন। আমিও নোমান আলীর মত একটা কার্যক্রম করি"। আবার বললো "আমি আগে দেওবান্দী ছিলাম, আমিই ফেনীতে আহলে হাদিস এনেছিলাম, এখন কোন দল করি না। সব গোমরাহ।" তারপর আমাকে দাওয়াত দিতে চাইলেন। আমি ততক্ষণে অনেকটা বাক্যহারা। ও প্রান্তে ফেনীর হুজুর বলেই যাচ্ছে... "আমি আরবদের গিয়েও শিখিয়েছি।" আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাই কি শিখালেন? বললেন "আমার নিজস্ব কারিকুলাম। ইংরেজি আর বাংলা বিষয়েও আমার বই বাহির হওয়ার পথে।" (আমি প্রায় মূর্ছা যাব কিনা ভাবছি। আমি আসলেই গাইয়া সাইয়াদের বুঝি না। লক্ষ্য করেছি এরা প্রায় শখের বশে ইংরেজি গ্রামার বিষয়ে বই লেখে। কেন লেখে এটার একটাই ব্যাখ্যা আছে। ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স।) তারপর আমাকে চ্যালেঞ্জ করা শুরু করলেন। আমার এ পর্যায়ে মেজাজ বেশ খারাপ হয়ে গেল।
.
বাংলাদেশের এই সব মাদ্রাসার দেওবান্দী মিথ্যুকদের ন্যুনতম ভদ্রতা বোধও অনেক সময় থাকে না। প্রথমত আমাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কল করিয়েছে। দুই আমার কেনা কার্ডের টাকায় আমি বিদেশ থেকে কল করেছি, এখন এই টাকায় সে বাহাস করতে চায়। বেটা বাহাসের শখ থাকলে নিজের টাকায় কল কর। আমি তাকে বললাম, "যদি বাহাস করতে চান তাহলে আমি খুবই প্রস্তুত কোন সমস্যা নেই, কিন্তু আমি আমার নিজের টাকা খরচ করে এভাবে কেন করব। দিন ক্ষণ ঠিক করবেন, উভয়ের উপযুক্ত সময়ে করা যাবে। আমাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফোন করিয়ে আপনারা অলরেডি একটা অপরাধ করেছেন। আমার সময় এবং অর্থ দুটোই মূল্যবান। আপাতত রাখি।"
.
যাইহোক, এ গল্পটা এজন্যে বললাম কারণ বাংলাদেশেও অনেকে এই সব হুজুরদের ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন মার্কা কারিক্যুলাম পড়ে মাথা নষ্ট করে থাকতে পারেন। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বইয়ের সিলসিলাহ আর আমার মত উল্লেখ করছি। সবাই একমত হতে না পারেন।
.
মাদিনা আরাবিক সিরিযঃ
এ সিরিযটি আসলে শিক্ষকের সাথে পড়বার জন্যে প্রস্তুত করা। কারণ বইয়ের বাহিরেও অনেক বিষয় শিক্ষক পড়িয়ে দেবেন এটা এক্সপেক্ট করা হয়। অধিকাংশ ক্লাসিকাল বইয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা সত্য। এ সিরিজটি মূলত নাহুর দিকে ফোকাস করে লেখা হলেও সারফের অনেক বিষয় এতে রয়েছে। এ সিরিযের লক্ষ্য মূলতঃ ক্লাসিকাল বই পত্র পড়া। স্পোকেন আরাবীর জন্যে আপনার এ সিরিযের সাথে সাথে অন্য কিছুও পড়তে হবে।
.
আরাবীয়্যাতু বাইনা ইয়াদাইক ও আরাবিয়্যাতু লিন নাশিঈনঃ
এ সিরিয দুটো মূলতঃ স্পোকেন আরাবীর দিকে ফোকাস করে লেখা বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত। বাইনা ইয়াদাইকে প্রচুর পরিমাণে হিওয়ার বা কথোপকথন রয়েছে। এ সিরিজটা যারা মিশ্রে গিয়ে পড়েন তাদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু অন্য দেশে উস্তাদের কাছে পড়লেও আমি লক্ষ্য করেছি যারা এ সিরিযটা যারা পড়েন তাদের বই পড়বার স্কিল অতও ভালো হয় না। লীন নাশিঈন সিরিযটার সব গুলো বই পড়ে দেখিনি। আমি প্রথম দুই পার্ট দেখে আমার মন্তব্য লিখছই। তাই শেষের দিকে কি রকম তা বলতে পারছি না।
.
নোমান আলী খানের আরাবী প্রোগ্রামঃ
নোমান আলই খানের নিজস্ব আরাবী প্রোগ্রাম রয়েছে। আমার চেনা এক ভাই এ প্রোগ্রাম শেষ করে ভালোই আরবি বলছেন। কিন্তু পড়বার স্কিল খুব খারাপ। ই'রাব একদম বোঝেন না। নোমান ভাই বলেন উনার প্রোগ্রাম নাকি কোরআনের আরবীর দিকে ফোকাসড। যেহেতু আমি নিজে কিনে দেখিনি, তাই আমার মন্তব্য ১০০% জেনে করা নয়। তবে প্রসেস শুনে বুঝলাম বেসিকালি ইংরেজি ভাষার সাথে তুলনা করে করে পড়ানো হয়। তবে হানাফি মাদ্রাসা স্টাইলে ফি'ল এর বিভিন্ন আবওয়াব গুলো মুখস্থ করানো হয়। আমি ভাইকে বললাম, ভাই তুমি কিভাবে সার্ফের রুলস গুলো কাজ করছে বুঝে পড়তে পারো। কিন্তু ভাই কমফর্টেবল ফীল করেন নি। আমার আরেক চেনা ভাইও এই কোর্স ফলো করছেন। উনার অবস্থা তথৈবচ।
আমি নোমান ভাইকে পছন্দ করি না। আর আহলুস সুন্নাতের লোক বলে মনে করি না। কোরআনের আরবীর নামে উনি কখন কি খাইয়ে দেবেন জানি না। তাই উনার প্রোগ্রাম এভয়েড করা উচিৎ বলে মনে করি। যাই হোক।
.
আল মুকাদ্দিমাতুল আজরুমিয়্যাহঃ
এ সকল সিরিযের যে কোন একটা শেষ করে পরবর্তী বইটা হচ্ছে আল মুকাদ্দিমাতুল আজরুমিয়্যাহ। খুবই অসাধারণ একটা বই। এ বইটি মূলতঃ পড়বেন ই'রাব বুঝবার জন্যে। এটা খুবই প্রয়োজনীয়। আর না হয় আপনি আরবী ভাষায় শব্দের সঠিক ব্যবহার জানবেন না। এ বইয়ের অসংখ্য শারহ বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে শাইখ ইবনু উথাইমীনের শারহ বাজারে খুবই জনপ্রিয়। তবে আমার মতে এ বইয়ের সবচাইতে ভালো শারহ মুহাম্মাদ মুহী উদ্দিন আব্দুল হামিদের লেখা আত তুহফাতুস সান্নিয়াহ। সাথে মালিক বিন সালিমের শারহ পড়তে পারেন যার নাম আল মুমতি'। টেবিল আকারে সব কায়িদাহ গুলো দেওয়া আছে। চট্টগ্রামের কিছু ভাইদের জন্যে গিফট নিয়েছিলাম এ বইটা।
আপাতত এ পর্যন্ত থাক। এর পরের বইগুলোর বিষয়ে পরের পর্বে বলব ইনশা আল্লাহ্। আমার বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ হচ্ছে আমার সব লেখা প্রথম পর্বে আটকে যায়। আফসোস। জীবন অনেক ব্যস্ততাময়। আমি দুঃখিত।
.
লেখক : আবু হাযম মুহাম্মদ স্বাকিব চৌধূরী ( আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন - আমীন)
No comments