Header Ads

Header ADS

ইশরাক, দোহা এবং চাশত নামাজের পরিচয় ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

💚তাহাজ্জুদের নামাজের পর সর্বাধিক মর্যাদার নফল নামাজ হলো ইশরাক।💚
.
ইশরাক, দোহা এবং চাশত কি একই? এসব নামাজের সময়, নিয়ম ও রাকাতসংখ্যা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো (দলিলসহ)
.
[ইশরাক নামাজের পরিচয় ও ফজিলত]
.
ইশরাক মানে প্রভাত, সকাল, সূর্যোদয়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়বে, এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে যিকর করতে থাকবে, এরপর সূর্যোদয় হলে (সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর) দুই রাকাত নামাজ পড়বে, তার জন্য পরিপূর্ণ হজ্ব ও ‘উমরার সওয়াব লেখা হবে।’’ [তিরমিযি: ৫৩৫, হাদিসটি হাসান]
.
হাদিসে এই নামাজের কোনো নাম বর্ণিত হয়নি। তবে, মুসলিম উম্মাহর নিকট এই নামাজ ইশরাকের নামাজ বা সূর্যোদয়ের নামাজ হিসেবে পরিচিত। অতএব, কেউ নামাজ পড়তে চাইলে সে ফজরের পর নামাজের স্থানেই বসে থাকবে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অবশ্য কেউ যদি ওঠে যায় এবং সূর্যোদয়ের পরে নামাজ আদায় করে, তবুও হবে। তবে, মর্যাদা সমান হবে না। তখন সেই নামাজ দুহার নামাজ হবে।
.
[দোহা ও চাশতের নামাজের পরিচয়]
.
‘দোহা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো, দিনের প্রথম প্রহর। ফার্সিতে বলা হয় ‘চাশত’। অতএব, দোহা এবং চাশত একই নামাজ। হাদিসে এই সালাতের অনেক উপকারিতা এসেছে। 
.
[দোহার নামাজের মহান ফজিলত]
.
সহিহ মুসলিমে এসেছে, ‘তোমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়ার জন্য (শুকরিয়াস্বরূপ) প্রতিদিন সকালে সাদাকাহ্ দিতে হয়। (জেনে রেখো) প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) সাদাকাহ্; প্রত্যেক তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সাদাকাহ্; প্রত্যেক তাকবির (আল্লাহু আকবার) সাদাকাহ্; সৎ কাজের আদেশ সাদাকাহ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা সাদাকাহ। আর এসবের পক্ষ হতে দোহার দুই রাকাত নামাজই যথেষ্ট হবে।’ [সহিহ মুসলিম: ১৭০৪]
.
[দোহার নামাজের রাকাতসংখ্যা]
.
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত দোহার নামাজ ৪ রাকাত পড়তেন। তবে, আল্লাহ্ চাহেতো কখনো তা বৃদ্ধি করতেন।’’ [সহিহ মুসলিম: ১৬৯৮]
.
তিনি মক্কা বিজয়ের দিন তিনি দোহার ৮ রাকাত নামাজ পড়েছেন। [সহিহ মুসলিম: ৭৯১]
.
তাবারানির হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি দোহার ২ রাকাত নামাজ আদায় করবে, সে ব্যক্তি ‘গাফেল’ বলে গণ্য হবে না; যে ৪ রাকাত পড়বে, তার নাম লেখা হবে আবিদ (ইবাদতকারী) বান্দাদের মধ্যে; যে ৬ রাকাত পড়বে, তা তার ঐ দিনের জন্য যথেষ্ট হবে; যে ৮ রাকাত পড়বে, তার নাম আল্লাহর অনুগত বান্দাদের মধ্যে লিপিবদ্ধ হবে। আর যে ১২ রাকাত পড়বে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’’ [তাবারানি সূত্রে ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার: ৮৬১, হাদিসটির সনদ হাসান]সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দোহার সর্বনিম্ন নামাজ ২ রাকাত। হানাফি ও শাফি‘ঈ মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের মতে, দোহার নামাজ সর্বোচ্চ ১২ রাকাত। পক্ষান্তরে মালিকি ও হাম্বলি মাযহাব মতে, সর্বোচ্চ ৮ রাকাত। [আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৭/২২৫]
.
শায়খ ইবনু উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ রাকাত নির্ধারিত নয়। কেননা আয়িশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ চাহেতো এর চেয়ে অধিক পড়তেন’’ (নির্দিষ্ট রাকাত বলা হয়নি)। ’’ [শারহুল মুমতি’: ৪/৮৫]
.
শরহুল জামি’ আস সহিহ গ্রন্থে এসেছে, সাহাবাদের মধ্যে আম্মাজান আয়িশা পড়তেন ৬ রাকাত, ইবনু উমার ২ রাকাত, সা’দ ও আম্মাজান উম্মু সালামাহ ৮ রাকাত, আলি ইবনু আবি তালিব ৪ রাকাত পড়তেন। রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন।
.
[দোহার নামাজের সময়]
.
সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর থেকেই দোহার সলাত পড়া যায়। তবে, দোহার সলাতের উত্তম সময় হলো, সূর্যের তাপ যখন প্রখর হয়। উদাহরণত সকাল ৮ টা। এই সময় থেকে নিয়ে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দোহার সলাতের সময় থাকে।
.
[দোহা আর ইশরাক কি এক নামাজ?]
.
হানাফি মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম ও হাদিস বিশারদ আবু বকর জাসসাস (রাহ.) বলেন, অধিকাংশ আলিমের মতে, ইশরাক এবং দোহার নামাজ একই। [আহকামুল কুরআন: ৩/৫৫৯]
.
মুহাদ্দিসগণ দোহা এবং ইশরাকের নামাজকে একই নামাজ গণ্য করেছেন। সুফিগণ আলাদা গণ্য করেছেন। [যাকারিয়া কান্ধলভী, ফাতহুল মুলহিম: ৪/৬৩৪]
.
শায়খ ইবনু বায, ইবনু উসাইমিন (রাহ.)-সহ আরবের আলিমগণ বলেছেন, ইশরাক হলো দোহার প্রথম সময়।
.
[তাহলে উপসংহার কী?]
.
যদি ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়েন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের স্থানে বসে থেকে যিকর করতে পারেন, তবে সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর ইশরাকের দুই রাকাত নামাজ পড়বেন— যেমনটি হাদিসে এসেছে—তাহলে পূর্ণ হজ্ব ও ‘উমরার নেকি পাবেন। [তিরমিযি: ৫৩৫]
.
আর যদি এসব শর্ত (জামাত, সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকর) পূর্ণ করতে না পারেন, তবে দোহার নামাজ পড়তে পারেন, সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পর। তবে, দোহার নামাজের উত্তম সময় হলো সূর্য প্রখর হওয়া। আর দুহার নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়; ঊর্ধ্বে ৪, ৬, ৮ বা ১২ রাকাত। 
.
যদি ইশরাকও পড়েন আবার দোহাও পড়েন, তবুও সমস্যা নেই। কারণ আল্লাহর কাছে যদি দুই নামাজ ভিন্ন হয়ে থাকে, তবে দুটোর নেকিই পেলেন আর যদি এক হয়ে থাকে, তবুও তাবারানির হাদিস অনুসারে যত রাকাত পড়বেন তত বেশি মর্যাদা পাবেন। আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।

No comments

Powered by Blogger.