স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর সম্পর্কের ভালোবাসা
মাঝে মাঝে স্ত্রীর উচ্চ আওয়াজ দরজার বাইরে থেকে শোনা যায়। মুখ চেপেও সেটা বন্ধ করা দায়! কীভাবে যাবে বলুন? স্বামীর যে খাবার পছন্দ করে, স্ত্রী সেটা রাঁধতে চায় না। রাগে গরগর করতে করতে বলে, “দেখ, আমি নিত্যদিন ওসব রাঁধতে পারব না। চিকেন-ফ্রাই খেতে ইচ্ছে হলে বাইরে থেকে খেয়ে আসবে। আমাকে আর জ্বালাতন করবে না।”
আবার স্বামীর কথাই ধরুন। তাকেও যদি বলা হয়, “ভাই সাহেব, কদিন বাসায় ফেরার সময় সাথে একটা গোলাপ, এক প্লেট ফুচকা কিংবা একটা আইসক্রিম কিনেছিলেন স্ত্রীর জন্যে?”
.
অধিকাংশ জনই এর না-সূচক উত্তর দেবেন। অথচ গরিবকে দান করার চেয়েও স্ত্রীকে আইসক্রিম কিনে দেওয়া অধিক সওয়াবের কাজ। এটা আমার বানানো কথা না মশাই। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটাই বলেছেন।
রাসূল স. বলেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে এক দিনার ব্যয় করা, একজন দাস মুক্ত করতে এক দিনার ব্যয় করা, গরিব লোককে এক দিনার সাদাকা করা এবং পরিবারের পেছনে এক দিনার ব্যয় করা—এসবের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো পরিবারের পেছনে এক দিনার ব্যয় করা।” [মুসলিম : ৯৯৫]
.
এবার বিশ্বাস হলো তো?
স্ত্রীকে ভালোবেসে মুখে খাবার তুলে দেওয়াটাও সাদাকাহ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। এটা সাদাকার সওয়াব রাখে। রাসূল স. বলেছেন, “মুমিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেওয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লুকমা তুলে দেয়ার সময়েও।” [মুসনাদে আহমাদ : ১৪৮৭]
কখনও খাবার তুলে খাইয়ে দিয়েছিলেন তাকে?
ওকে খাবার তুলে খাইয়ে দিলে আপনার মান-সম্মান কমে যাবে?
.
খুব কম স্বামীরাই আজকাল ঘরের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করেন। অনেকেই তো আবার স্ত্রীর সাথে কাজের লোকের মতো আচরণ করেন। দুনিয়ার যত কাজ আছে, সব ওর ওপরেই চাপিয়ে দেন। ঘরের কাজ থেকে শুরু করে আপনার কাপড় ইস্ত্রি করা, সব তাকেই করতে হয়। অথচ সে আপনার কাজের লোক নয়, জীবনসঙ্গী। তাই দুজনের কাজগুলো ভাগ করে নিন। সময় পেলে রান্নাঘরে গিয়ে বসুন। খুব ব্যস্ত থাকলে অন্তত এটা বলুন, “তোমার কোনো হেল্প লাগবে?”
.
মনে মনে হয়তো আমায় গালি দেবেন—“দেখো দেখো, লোকটা কিনা শেষমেশ আমাদের রান্নাঘরে যেতে বলছে। আমরা ওখানে যাব কেন? ওটা নারীদের কাজ। ওরা করুক।” আরে মশাই, সাধে আমি আপনাকে ওখানে যেতে বলিনি। আপনার রাসূল স. নিজেও রান্নাবান্নার কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করেছেন। বিশ্বাস হয় না?
আসওয়াদ রা. একবার আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে জিজ্ঞেস করলেন, “নবি স. ঘরে থাকা অবস্থায় কী (কাজ) করতেন?” তিনি বললেন, “ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। (পরিবারবর্গের কাজে সহায়তা করতেন)। আর সালাতের সময় হলে সালাতের জন্য চলে যেতেন।” [বুখারি : ৬৭৬]
বিশ্বাস হলো এবার!
সময় পেলে অবশ্যই স্ত্রীকে সাহায্য করবেন। ভয় পাবেন না আবার! আপনার স্ত্রী আপনাকে দিয়ে রান্না করিয়ে নেবে না। “কিছু লাগবে?”—ও আপনার থেকে এতটুকু শুনলেই খুশি। এটুকু বললেই দেখবেন হাসিমুখে বলছে, “যাও, তোমার কাজ করো। এটা আমার দায়িত্ব, আমাকে পালন করতে দাও।”
টিপসটা একদিন অ্যাপ্লাই করে দেখুন, বিফলে মূল্য ফেরত।
.
এবার স্ত্রীদের কথা বলি। নয়তো আমাকে আবার ফেমিনিস্ট ভাববেন। অনেক স্ত্রী-কে দেখবেন, সারাদিন নিজের মাথায় চুল নিয়ে ব্যস্ত। চুলে কোন শ্যাম্পু লাগাবে, কন্ডিশনার কোন ব্র্যান্ডের হবে, কোন পার্লারে গিয়ে কী কাটিং দেবে এগুলো নিয়ে ঘর মাথায় তুলে ফেলছে। বরের চুলের দিকে তাকানোর ফুরসত নেই তার। অথচ. ইতিকাফে থাকা অবস্থাতেও আয়িশা রা. রাসূল স.-এর চুলের যত্ন নিয়েছেন।
উরওয়া রা বলেন, “আয়িশা রা. ঋতুবতী অবস্থায় রাসুলুল্লাহ স.-এর চুল আঁচড়ে দিতেন। আর রাসূলুল্লাহ স. ই’তিকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে তার হুজরার দিকে মাথাটা বাড়িয়ে দিতেন। তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়াতেন অথচ তিনি ছিলেন ঋতুবতী।” [বুখারি, আস-সহীহ : ২৯২]
.
স্ত্রীদের বলি, আপনারা কতদিন স্বামীর মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করেছিলেন? মনে মনে কি, আমায় গালি দিচ্ছেন? দিন, যত পারুন। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি আয়িশা রা.-এর থেকে বেশি সম্ভ্রান্ত নন যে স্বামীর মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজলে আপনার সম্মান কমে যাবে। বরং এটা করলে আপনাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়বে। আপনার স্বামী আর অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে না।
আয়িশা রা. বলেছেন, “নবি স. মিসওয়াক করার পর তাঁর মিসওয়াক আমাকে ধৌত করতে দিতেন। অতঃপর আমি ওই মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করে তাঁকে ফেরত দিতাম।” [আবূ দাঊদ, আস সুনান : ৫২]
.
আজকাল অনেক ছেলেমেয়েই বিয়ের আগে হারাম রিলেশন এ জড়ায়। কখনও যদি ওদের দিকে লক্ষ করেন তো দেখবেন, তারা একে অপরের সাথে কী পরিমাণ রোম্যান্টিক আচরণ করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী এ ধরনের রোম্যান্টিসিজম ভুলে যান। অথচ এটা জরুরি। মনে মনে আবার সুফিগিরি দেখিয়ে বলবেন না, “ওসব কি সুন্নাহ সাপোর্ট করে?”
জি হ্যাঁ, করে। আল্লাহর রাসূল নিজেও স্ত্রীর সাথে রোম্যান্টিক আচরণ করেছেন। তিনি রাতের বেলা স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন, স্ত্রীর হাতে হাত রেখে নিশিতে হেঁটেছেন, গল্প করেছেন, স্ত্রীকে হালাল কৌতুক শুনিয়েছেন...।.
.
আয়িশা রা. বলেছেন, “একবার আমি রাসূল স.-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তখন আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর আগে বেড়ে (জিতে) গেলাম। তারপর যখন আমি স্থূলকায় হয়ে গেলাম, তখন পুনরায় তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলাম। তখন তিনি আমার আগে বেড়ে (জিতে) গেলেন। তখন তিনি বললেন, ‘এটা তোমার আগেরবার জেতার বদলা’।” [আবূ দাঊদ, আস-সুনান : ২৫৭০]
যখন বাসার সবাই ঘুমিয়ে যাবে, তখন চুপিচুপি দুজন ছাদে ওঠুন। নিজেদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করুন। দেখুন, কে জেতে!তবে এই প্রতিযোগিতার কোনো রেফারি কিংবা আম্পায়ারের দরকার নেই। আর হ্যাঁ, চাইলে এসময় দু-লাইন কবিতাও আবৃত্তি করতে পারেন---
যবে তাকাই তোমার রুক্ত-জবা ঠোঁটে
মম হৃদয়খানি বারেবারে শিহরিয়া ওঠে
.
যখন কুরআন তিলাওয়াত করবেন, তখন একজন অপরজনকে পাশে নিয়ে বসুন। কোলে মাথা দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করুন। দেখুন, এরপরেও দুজনের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য থাকে কি না?
“আয়িশা রা বলেছেন “আমার ঋতুকালীন সময়ে রাসূল স. আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন কারীম তিলাওয়াত করতেন।” [আবূ দাঊদ, আস-সুনান : ২৬০]
.
No comments