হাসতে জানা একটি ইবাদাহ...
আপনার কটু কথায় যে লোকটা দাঁত কেলিয়ে হাসে তাকে আপনি বোকা বলেন। আবার আপনাকে একান্ত খোশমেজাজে রাখতে যারা হেতুহীন হাসি দিয়ে মুখখানা মিষ্টি কুমড়োর মতো ছড়িয়ে দেয় তাদেরকেও একই বিশেষণে সংজ্ঞায়িত করেন। তেনারা আমাদের কাছে 'বোকা' বনে আছে।
.
প্রচন্ড রাগের মাথাই কেউ একজন আপনার কাছে এসে আপনার রাগ নিবারনের জন্য হাসছে অথচ, তাকে আপনার সহ্য হচ্ছে না। সমস্ত রাগ যেন এই 'বোকা' মানুষটার উপরই ঝারতে মন চাইছে।
.
আবার রাগান্বিত হয়ে কারো উপর রাগ ঝারছেন — অথচ লোকটি অদ্ভুত এক সরল হাসিতে মত্ত। আপনার বলা লজ্জাজনক কথাগুলো তার কানে ঢুকছে ঠিকই কিন্তু সে নিজের অসহায়ত্ব আড়াল করেই এই হাসি দিয়েছে। আপনি বুঝেননি তার মন। বরং তার এই হাসি দেয়া দেখে আরো চার'টে কথা বাড়িয়ে শোনিয়ে গেলেন তাকে।
.
আসলে সকল পরিস্থিতিতে হাসতে জানাটাও একটা নিয়ামাহ। সারা দিন মুখ ভারী করে থাকা লোকগুলো জীবনের সিংহভাগই অসুখী। তাদের জীবন কেটে যায় বিষন্নময়তায়। আমরা অজান্তেই এই হাসিকে অবহেলা আর তাচ্ছিল্যপনায় দেখি। কেউ কেউ কারো হাসিমুখ দেখলে একটা ডায়লগ দেয় 'এতো হেসো না তাইলে কাঁদতে হবে'।
.
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব যার জীবনের পুরোটাকেই মহান আল্লাহ আযযা ওয়া জাল গোটা দুনিয়ার সব মানুষের জন্য অনুকরণীয় বলে ঘোষণা করছেন। উনার জীবনের দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রিয় নবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব সময়ই মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলতেন। হাসি যেন তাঁর ঠোটের কোণে সর্বদা আলোর বিচ্চুরণ ঘটাত (সুবহানাল্লাহ)। সাহাবায়ে কীরামদের (রাদিআল্লাহু আনহুম) সর্বদা প্রফুল্ল রাখতেন তিনি।
.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা অধিক মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি।” (মুসনাদে আহমদ : ১৭৭৪০)
.
আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব সময়ই মুচকি হাসতেন, তিনি অট্টহাসিও দিতেন আবার পুরোপুরি সবগুলো দাঁত বের করেও হাসতেন না। কিন্তু তিনি কারো সাথে দেখা করলেই সালামের পর হাসতেন (সুবহানাল্লাহ)
.
রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) —এর সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, “আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে রাসূল (সাল্লালাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তার দরবারে উপস্থিত হতে বাঁধা দিতেন না এবং আমাকে দেখলেই তিনি মুচকি হাসতেন।” (সহীহ বুখারী : ৩৮২২)
.
অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমার ভাইয়ের মুখে (সাক্ষাতে) মুচকি হাসি নিয়ে আসাও একটি সদকা।” (তিরমিযি : ১৯৫৬)
.
অর্থাৎ বুঝা গেল এতদিন যে হাসিকে অবজ্ঞা করে এসেছি সেই হাসিই আল্লাহ'র রাসূলের (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ। দেখুন, আমাদের প্রিয় নবী আমাদের কি আচরণ শিখিয়ে গিয়েছেন আর আমরা করছি কী!?
.
হাসি দিয়ে কথা বলে অন্যকে খুশি করা যেখানে সাদাকা সেখানে অন্যের হাসি আমার বিরক্তির কারণ বনে গিয়েছে। আমরা মুখ গোমরা করে রাখব না। প্রচন্ড রাগেও হাসি দেবার প্র্যাকটিস করব৷ অন্যকে হাসানোও একটা গুণ। চলুন মু'মিন ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময় এক চিলতে হাসি দিয়ে 'সাদাকার' সাওয়াব হাসিল করে নিই। এখন থেকে অন্যের হাসিতে কোনদিন বিরক্ত হব না (যদি না এটা সুন্নাহ সম্মত না হয়)। মাঝেমাধ্যে পরিবারে খুনসুটির চর্চা করবো, তবেই ইন শা আল্লাহ আমাদের পরিবার তথা গোটা সমাজের সকলের সম্পর্কে একটি প্রফুল্লতার আমেজ থাকবে। যেমনটি ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কীরামদের (রাদিআল্লাহু আনহুম) মাঝে।
.
চলুন 'হাসি' নামক সুন্দর সুন্নাহটিকে উজ্জীবিত করি।
©সিয়াম ভুইয়্যা
No comments