নামাজে মহিলাদের চুল বের হয়ে গেলে করনীয়?
নামাযে মহিলাদের কিছু চুল বের হয়ে গেলে কি নামায বাতিল হয়ে যাবে বা নামায পুনরায় পড়তে হবে?
▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: সঠিক ভাবে চুল ঢেকে নামাযে দাঁড়ালেও অনেক সময় নামায শেষ দেখা যায়, এক/দুইটা চুল বের হয়ে আছে। এই ক্ষেত্রে কি আমাকে পুনরায় নামায আদায় করতে হবে? আবার অনেক সময় এক/দুইটার থেকেও বেশি চুল বের হয়। এ ক্ষেত্রে করণীয় কি?
উত্তর:
♻ মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত (এমনকি অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে দু পায়ের পিঠ সহ) ঢাকা আবশ্যক। কেবল মুখমণ্ডল ও দু হাতের কব্জি খোলা রাখা বৈধ যদি পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকে। অন্যথায় এগুলোও ঢাকা জরুরি।
♻ যাহোক মাথা ঢাকার পরও অসতর্কতা বশত: সামান্য কিছু চুল বের হয়ে গেলেও সালাত বাতিল হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে নামাযরত অবস্থায় বুঝতে পারলে তৎক্ষণাৎ তা ঢেকে ফেলতে হবে আর নামায শেষে বুঝতে পারলে তা পুনরায় দোহরানোর প্রয়োজন নাই। তবে আগামীতে এ ব্যাপারে আরও সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
♻ কেউ যদি জানার পরেও চুল না ঢেকে নামায অব্যাহত রাখে তাহলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। তার জন্য পুনরায় পূর্ণ পর্দা সহকারে নামায আদায় করা আবশ্যক।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: সলাতে মহিলাদের শরীরের কতটুকু ঢাকা ফরজ? দু পায়ের পাতা/পিঠও কি ঢাকতে হবে?
উত্তর:
একজন মহিলা সালাত শুরু করার আগেই তার মুখ মণ্ডল ও দু হাতের কব্জি ছাড়া মাথা থেকে পা পর্যন্ত (দু পায়ের পিঠ সহ) সারা শরীর ভালোভাবে আবৃত করবে। পরপুরুষ না থাকলে মুখ মণ্ডল ও দু হাতের কব্জি খুলে রাখা জায়েয রয়েছে কিন্তু পরপুরুষের উপস্থিতে এগুলোও ঢাকা অপরিহার্য।
🔹 দু পায়ের পাতা/পিঠ ঢাকা কি জরুরি?
এ ব্যাপারে বিজ্ঞ ওলামাদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। তবে হাদিসের আলোকে দু পায়ের পিঠ ঢাকা অধিক অগ্রাধিকার যোগ্য মত। এ ব্যাপারে হাদিস হল:
ﻋﻦ ﺃﻡ ﺳﻠﻤﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﺃﻧﻬﺎ ﺳﺄﻟﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃﺗﺼﻠﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺩﺭﻉ ﻭﺧﻤﺎﺭ ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺇﺯﺍﺭ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﺪِّﺭْﻉُ ﺳَﺎﺑِﻐًﺎ ﻳُﻐَﻄِّﻲ ﻇُﻬُﻮﺭَ ﻗَﺪَﻣَﻴْﻬَﺎ
উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন মহিলা কি কেবল একটি লম্বা ঝুলওয়ালা জামা ও একটি ওড়না পড়ে নামায পড়তে পারে যদি তার পরনে লুঙ্গী (কোমর থেকে নিম্নাংশের দিকে ঝুলিয়ে পড়ার মত কাপড়) না থাকে?
তিনি বলেন, “যদি উক্ত লম্বা জামাটি তার দু পায়ের পিঠ দ্বয় ঢাকে (তাহলে এই পোশাকে সালাত আদায় করতে পারে)।”
(সুনান আবু দাউদ, হা/৬৪০)
- ইমাম নওবী রহ. আল খুলাসাহ ও আল মাজমু গ্রন্থে বলেন, এর সনদ ﺟﻴﺪ ভালো।
- ইবনুল আরবি তার আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, এর সনদ ﺛﺎﺑﺖ -প্রমাণিত।
তবে ইমাম আলবানী রহ. সহ অনেক মুহাদ্দিস বলেন, এই হাদিসটি মারফু সূত্রে সহীহ নয়। বরং মাউকুফ সূত্রে সহীহ। অর্থাৎ এটি উম্মে সালামা রা. এর বক্তব্য; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্তব্য নয়।
সুতরাং
যারা বলেন যে, উক্ত হাদিসটি মারফু তথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্তব্য তাদের মতে দু পায়ের পিঠ ঢাকা ফরজ।
আর যারা বলেন, এটি মাউকুফ তথা উম্মে সালামা রা. এর বক্তব্য-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্তব্য নয় তাদের মতে দু পায়ের পিঠ ঢাকা ফরজ নয়।
যাহোক, মতবিরোধ থেকে বাঁচার স্বার্থে দু পায়ের পিঠ না ঢাকার চেয়ে ঢাকাই বেশি নিরাপদ। তাই নামাযে মহিলাদের দু পায়ের পিঠ ঢাকতে হবে-এটাই সবচেয়ে নিরাপদ ও অধিক নির্ভরযোগ্য কথা ইনশাআল্লাহ।
☑ জরুরি জ্ঞাতব্য:
আমাদের দেশে অনেক মহিলা ওড়না, জামা আর পায়জামা পরে সালাত আদায় করে। কিন্তু এতে তার দু পায়ের পিঠ খোলা থাকে। সুতরাং এ সমস্যার সমাধান কল্পে এর সাথে পা মোজাও পরিধান করা উচিৎ যেন, দু পায়ের পিঠ ঢাকা থাকে। অন্যথায় ম্যাক্সি, বোরকা বা এমন লম্বা জমা পরিধান করে সালাত আদায় করা উচিৎ, যেন তা সারা শরীর আবৃত করার পাশাপাশি দু পায়ের পিঠও ঢেকে দেয়। আল্লাহু আলাম।
▪▪▪▪▪▪▪
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
No comments