১৫ টি কারণে রোজা ভাঙে না (অথচ অনেকে মনে করে, এসব কারণে রোজা ভেঙে যায়)
১৫ টি কারণে রোজা ভাঙে না (অথচ অনেকে মনে করে, এসব কারণে রোজা ভেঙে যায়)
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
(১) অনিচ্ছাকৃত বমি (মুখ ভরে হলেও) রোজা ভাঙবে না। তেমনি বমি কণ্ঠনালীতে এসে নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তির বমি এসে গেছে তার উপর কাজা নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে, তাকে কাজা আদায় করতে হবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৭২০; হাদিসটি সহিহ]
.
(২) স্বপ্নদোষ হলে, শরীর থেকে রক্ত বের হলে, শিঙ্গা লাগালে বা কাউকে রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি বিষয় রোজা ভাঙে না: সিঙ্গা লাগানো, বমি করা এবং স্বপ্নদোষ হওয়া।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৭১৯; বাযযার, আল-মুসনাদ: ৫২৮৭; হাদিসটি সহিহ]
.
আলিমগণের একাংশ শিঙ্গা লাগানো (হিজামা করানো) এবং রক্ত দেওয়াকে রোজা ভঙ্গের কারণ বলেছেন। তবে, হানাফি ফিকহে তা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। কারণ হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমতাবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন (হিজামা করিয়েছেন), যখন তিনি রোজাদার। [বুখারি, আস-সহিহ: ৫৬৯৪]
.
আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রোজা অবস্থায় হিজামা তথা শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরুহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এর ফলে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরুহ হবে।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৯৪০]
.
(৩) সুরমা, কাজল, সুগন্ধি ইত্যাদির দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। আনাস ইবনু মালিক (রা.) রোজাদার অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন। [আবু দাউদ সূত্রে ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার: ১৩০৫; সনদ হাসান; ইবনু তাইমিয়্যাহ, হাকিকাতুস সিয়াম, পৃষ্ঠা: ৪০-৪১]
.
(৪) মশা, মাছি, ধুলাবালি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটে ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘কারো গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না।’’ [ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ: ৬/৩৪৯; ইবনু উসাইমিন, রমযান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৩]
.
(৫) ভুলে কিছু পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না। হাদিসে এসেছে, ‘‘যে রোজাদার ভুলে পানাহার করলো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৯৩৩; মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৫৫]
.
(৬) শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না। [আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/৩১৩]
.
(৭) রোজা অবস্থায় অজ্ঞান, বেহুঁশ বা অচেতন হলে রোজা ভাঙবে না। তাবিয়ি নাফে’ (রাহ.) বলেন, ‘(সাহাবি) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) একবার নফল রোজা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে যান। কিন্তু এ কারণে তিনি রোজা ভঙ্গ করেননি।’ [বাইহাকি, আস-সুনানুল কুবরা: ৪/২৩৫]
.
(৮) রোজা অবস্থায় মিসওয়াক (কাঁচা বা পাকা ডাল যাই হোক) করলে রোজার কোন সমস্যা নেই। এমনকি ইফতারের পূর্বে মিসওয়াক করলেও অসুবিধা নেই। [বুখারি: ১/২৫৯; আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/২০২]
.
[রামাদানে দিনের বেলায় টুথপেস্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এর কিছু স্বাদ মুখে পাওয়া যায়, ফলে এটি মাকরুহ। তবে, কেউ গিলে না ফেললে রোজা ভাঙবে না]
.
(৯) নাইট্রোগ্লিসারিন-জাতীয় ইনহেলারে রোজা ভাঙবে না, তবে ভেনটোলিন ইনহেলারে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। [মাসিক আল কাউসার সূত্রে ‘রমযান মাসের উপহার’, মাওলানা হাবীবুর রহমান]
.
(১০) নাকে ড্রপ, স্প্রে ব্যবহারের পর তা যদি গলার ভেতরে চলে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙবে না। [মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিকহিল ইসলামি: ২/৪৫৪; মাসিক আলকাউসার সূত্রে ‘রমযান মাসের উপহার’]
.
(১১) খাবার ঠিকঠাক আছে কীনা তা বোঝার জন্য ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না, যদি গিলে ফেলা না হয়।’ [রমযান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৫]
.
তবে, বাধ্য না হলে এমনটি করা মাকরুহ। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহ.) বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া খাবার চেখে দেখা মাকরুহ; তবে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না।’ [ফাতাওয়া কুবরা: ৪/৪৭৪]
.
(১২) রোজা অবস্থায় নখ বা চুল কাটতে কোনো সমস্যা নেই। মেয়েরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। [শায়খ আহমাদ মুসা জিবরিলের রিসালাহ]
.
(১৩) সহবাস ছাড়া স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হলে রোজা ভাঙবে না। তবে বীর্যপাত হওয়া যাবে না। আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদার অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু খেতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। তবে, নিজ আবেগ-উত্তেজনার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিলো তোমাদের সবার চেয়ে বেশি।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৯২৭; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯০৬]
.
ইবনু উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না; তাদের দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায়। এমন ব্যক্তি ফরজ রোজা পালনকালে স্ত্রীকে চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা ইত্যাদির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে তাকে সাবধান থাকবে। আর যদি ব্যক্তি নিজের ব্যাপারে জানে যে, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তাহলে তার জন্য স্ত্রীকে চুম্বন করা ও জড়িয়ে ধরা জায়েয আছে; এমনকি ফরজ রোজার মধ্যেও।’
.
তবে, সাবধান! রোজা অবস্থায় দিনের বেলা উত্তেজনাবশত সহবাস করে বসলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
.
(১৪) রাতে সহবাস করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি সহবাসের পর গোসল না করে সাহরি খেয়ে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর গোসল করলেও সমস্যা নেই। আয়িশা (রা.) ও উম্মু সালামা (রা.) বর্ণনা করেন যে, (রাতে সহবাসের ফলে) অপবিত্র থাকা অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফজর হয়ে যেতো; এরপর তিনি গোসল করতেন ও রোজা রাখতেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১৯২৬; মুসলিম, আস-সহিহ: ১১০৯]
.
তবে, ফজরের সময়টি খুবই সংক্ষিপ্ত। তাই, কোনোভাবেই যেন ফজরের ওয়াক্ত কেটে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
.
(১৫) গরমের কারণে, শরীর ঠাণ্ডা করতে একের অধিকবার গোসল করতেও সমস্যা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটির প্রমাণ রয়েছে। [মালিক, আল-মুওয়াত্তা: ২/২৯৪; আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৩৬৫; হাদিসটি সহিহ]
.
#আলোকিত_রামাদান
-
No comments