Header Ads

Header ADS

দৃষ্টির হেফাজত | Porosh's Light House

দৃষ্টির হেফাজত
======================

কুরআন মুখস্ত করতে না পারা, করে ভুলে যাওয়া, অর্জিত ইল্‌ম স্মরণে না থাকা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, নেক আমলের সুপ্ত আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও করা হয়ে না ওঠা— ইত্যাদির কারণ হিসেবে আমরা আমাদের প্রজ্ঞাবান আলিমদের থেকে প্রায়ই শুনি গুনাহ থেকে বাঁচার উপদেশের কথা। নৈতিকভাবে বিষয়টা আমরা মেনে নিলেও এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা অনেক সময় আমাদের কাছে স্পষ্ট থাকে না।
তবে একটি ঘটনা বলি।

২০১৪ সালের কথা, আমরা সিয়ান থেকে সকলে মিলে সিলেট অঞ্চলে সফর করেছিলাম ‘রিক্রিয়েশন টুর’-এ। যে-সকল দর্শনীয় স্থানে আমরা গিয়েছিলাম তার মধ্যে একটি ছিল ‘লালা খাল’ নামক একটি জায়গা। দুপাশে ছোট ছোট পাহাড়। গাছ-পালা ঘেরা। অববাহিকায় সর্পিল গতিতে বয়ে চলা ছোট্ট পাহাড়ি নদি।
একেবারে স্বচ্ছ টলমলে পানি। নদির একেবারে তলদেশ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।

আমরা যাচ্ছিলাম ইঞ্জিন চালিত নৌকায়। নৌকার একেবারে অগ্রভাগে দাড়িয়েছিলেন আমাদের তৎকালীন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রাজিব ভাই। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি হঠাৎ নদির মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লেন। এবং আরও চমকে দিয়ে এক ডুবেই পানির মধ্য থেকে একটি বোয়াল মাছ নিয়ে উঠলেন। পরে তিনি জানালেন যে, তিনি নদির তলদেশে ঐ মাছ দেখেই ঝাপ দিয়েছেন এবং পানি স্বচ্ছ থাকার কারণে সেটি দেখতে তার কোনো অসুবিধেই হয়নি—সহজেই তুলে এনেছেন।

মানুষের মন ও মস্তিষ্কের জটিল বায়োলজিক্যাল আলোচনায় যাব না। এটা নিজের সুবিধা মতো জেনে নিয়েন। কিন্তু মন মস্তিষ্কের স্থিরতাকে নদির সেই স্বচ্ছ পানির সাথে তুলনা করতে পারেন; আর অস্থিরতাকে ঘোলা পানির সাথে। পানি যখন ঘোলা হয়ে যায় তখন যেমন তার মধ্যে কিছু দেখা যায় না, তেমনি গুনাহের কারণে মানুষের মনমস্তিষ্ক এমন ঘোলা হয়ে যায় যে, সেখানে ভালো কিছু সংরক্ষণ করা যায় না, অনেক কিছু সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও তা হাতড়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর যদি মস্তিষ্ক স্থির ও স্বচ্ছ থাকে তাহলে তথ্য গ্রহণ যেমন দ্রুত করতে পারে তেমনি সংরক্ষিত তথ্য থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ডাটা প্রসেস করে স্মরণে এনে দিতে পারে।

একজন মু’মিনের যে-সকল কারণে মন মস্তিষ্ক ঘোলা ও অস্থির হয় তা হলো- পাপাচার। পাপাচারের অনেক দিক ও বিভাগ আছে। একজন মু’মিন হিসেবে একজন মানুষ ভয়ংকর কোনো পাপাচারে (গুনাহে কাবীরাতে) নিয়মিত লিপ্ত থাকবে এটা ভাবা যায় না। কিন্তু উল্লিখিত সমস্যাগুলো প্রায় অধিকাংশ প্র্যাক্টিসিং মুসলিমদের মধ্যেই দেখা যায়। তাহলে এর কারণ কী?

আমাদের গবেষণায় এর প্রধান কারণ হলো দৃষ্টি। যে ছোট গুনাহটির মাধ্যমে মু’মিনরা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়য় তা হলো দৃষ্টির হিফাজত না করা। এটি এমনই একটি বিষয় যেটিকে অনেকে বেশ হাল্কা ভাবে নেয়; শয়তান এসে বলে: আরে এটা তো সগীরা গুনাহ মাত্র। পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ আদায় করলে কাবীরা গুনাহ এমনিতেই মুছে যায়। এখানেই ছেড়ে দেয় না। শয়তান কুরআনের আয়াত দিয়ে দলীল দেয়:

// আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যদি কাবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো তাহলে ছোটখাট পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”। তুমি তো আর তার সাথে জিনায় লিপ্ত হচ্ছো না; সে সুযোগও তোমার নেই। একটু রুপশ্রী দর্শন করে মনকে আনন্দ দিতে সমস্যা কী। আরে আল্লাহ জানেন যে তার বান্দারা কত দুর্বল; এজন্য এই গুনাহ তিনি মাফ করে দিয়েছেন। সুতরাং একটু দেখলে কোনো সমস্যা নেই।//

আরও নানাভাবে শয়তান প্রলুব্ধ করে।

কোনো কাজকে কেবল উপস্থিত লাভ ক্ষতির আলোকে বিচার করা যুক্তিযুক্ত নয়; বিচার করতে হয় চুড়ান্ত লাভ ক্ষতির আলোকে। একটি সামান্য দিয়াশলাইয়ের কাঠিকে মানুষ কেন সাবধানে রাখে? কারণ এর প্রাথমিক ক্ষমতা সামান্য হলেও তা পরিণতিতে ব্যপক অগ্নীকাণ্ড ও জানমালের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

দৃষ্টির সংরক্ষণের ব্যাপারটিও তেমনই। সিগারেটকে যেমন মাদার অব এডিকশন বলা হয় তেমনি দৃষ্টি হলো মাদার অফ এডাল্ট্রি। এটা দিয়েই চরিত্রহীনতার শুরু। এটাই ঈমানের শক্ত প্রাসাদে প্রথম ঘুণপোকা।

একজন পুরুষের জন্য সব চেয়ে দুর্বল জায়গাটি হলো নারী। দুনিয়ার জীবনকে যে-সকল মোহ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন তার প্রথমটি হলো নারী। এমনকি মানুষকে যে আল্লাহ দুর্বল সৃষ্টি বলেছেন তার ব্যখ্যায় কোনো কোনো আলিম এমনও বলেছেন যে, এর অর্থ হলো পুরুষরা নারীদের প্রতি দুর্বল।

একজন পুরুষের মন মস্তিষ্কে যে জিনিষটি সবচেয়ে বেশি অনুরণিত ও আন্দোলিত করতে পারে, সবকিছুকে এলোমেলো করে দিতে পারে তা হলো- নারী। আর এই অনুরণিত, আন্দোলিত ও এলোমেলো হওয়ার প্রথম ধাপ হলো দৃষ্টি। সামাজিক অশ্লীলতার ছয়লাবের কারণে এর প্রয়োগিক দিকটা জীবনকে প্রতি সেকন্ডের ঝুকিতে ফেলে দিয়েছে। ঘর, পরিবার, শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাট, যানবাহন—হেন জায়গা নেই যেখানে রুপের পসরা সাজিয়ে বসা হয়নি। একজন মুমিনকে এখানে প্রতিটি সেকেন্ড লড়াই করতে হয় নিজেকে সুরক্ষার জন্য। সামান্য অন্য মনস্ক ভাব, মুহুর্তের উদাসীনতা কখন যে তাকে নিয়ে যাবে অন্যায়ের দিকে তা সব সময় সে বুঝেও উঠতে পারবে না। এ এক নিরন্তর সংগ্রাম।

আমরা যদি সত্যিই চাই নিজের জীবনকে সফল করতে, দৃষ্টিকে যদি সংরক্ষণ করা যায়- তাহলে ঈমান ও চরিত্রের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রধানতম ঢালটি আপনি সংগ্রহ করলেন।

No comments

Powered by Blogger.