অন্দরমহল - ২ | জাফর বিপি
সেক্স করা নেকীর কাজ। সেক্স করা নেকীর কাজ। সেক্স করা নেকীর কাজ।
ছিঃ, কী আবোলতাবোল বকছি তাই না? না, আবোলতাবোল না। ঠিকই বলছি। বিবাহপূর্ব সেক্স জঘন্য খারাপ কাজ, এটা ঠিক। কিন্তু আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে রোমান্স করা, সেক্স করা এটা অবশ্যই নেকীর কাজ। এই বিষয়টি মনের মধ্যে একেবারে গেঁথে নিন।
আপনার সাব-কনশাস মাইন্ডকে [অবচেতন মন] আপনি যেই কাজটির ব্যাপারে যেমন ধারণা দেবেন সেটার ব্যাপারে সে তেমন সিগ্ন্যালই নেবে। এবং আপনার কনশাস মাইন্ড [চেতন মন] সেটাকেই গ্রহণ করবে।
অনেক দীনী ভাই বিয়ের পূর্বে নিজের ঈমানের দাবিতেই সেক্স বা শারিরীক সম্পর্ককে নেগেটিভলি নেন। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বরং এটাই উচিত। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন, যখন তার সাব-কনশাস মাইন্ড বিষয়টিকে পারমানেন্টলি নেগেটিভ হিসেবে নিয়ে নেয়। অর্থাৎ সেক্স কিংবা শারিরীক সম্পর্ক মানেই খারাপ। এমন একটা কনসেপ্ট তার মনের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে যায়।
এর ফলে বিয়ের পরেও স্ত্রীর প্রসংগ আসলেই তার মধ্যে একপ্রকার অপরাধবোধ কাজ করে৷ শারিরীক সম্পর্কের ব্যাপারটিকে সে তখনও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না।
বিয়ের পূর্বে দীর্ঘদিন নিজের সাথে তুমুল যুদ্ধ করতে করতে তার সাব-কনশাস মাইন্ড প্রতিনিয়ত এই কাজটির ব্যাপারে নেগেটিভ সিগ্ন্যাল পেয়েছে৷ এখন বিয়ের পর হুট করেই তার এই কনসেপ্ট পরিবর্তন হয় না। যখনই অন্তরঙ্গতার সময় আসে, তখনই ভেতরে একপ্রকার জড়তা, লজ্জা, অপরাধবোধ এবং হীনমন্যতা কাজ করে।
শুধুমাত্র এই একটি কারণে অনেক সংসার ভেঙে যেতে পারে।
একারণে অনেক সুস্থসবল ভাই প্রাথমিকভাবে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন [লিঙ্গত্থানজনিত সমস্যা] কিংবা প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন [দ্রুত বীর্যপাতজনিত সমস্যা] সহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন। ফলে স্ত্রী কর্তৃক অপমান, তাচ্ছিল্য ও কটুবাক্যের তীর আসতে থাকে। আর সেই তীরে দিনদিন বিধ্বস্ত হতে থাকে একটি সুস্থসবল মানুষ। এতে তার এই সমস্যা দিনদিন আরও প্রকট হয়।
‘বৈধ সেক্সকেও নেগেটিভ ভাবা’ তার এই সমস্যার মূল কারণ। এর সাথে যখন স্ত্রী কর্তৃক এসকল তীর নিক্ষিপ্ত হয়, তখন একপ্রকার ভয় ও হীনমন্যতা আরও জেঁকে বসে। তখন সে আগের চেয়ে আরও বেশি ভেঙে পড়ে। হতাশায় তার দুই আনার সমস্যাটি তখন দশ আনায় রূপ নেয়। এটাকে বলে সাইকো সেক্সুয়াল ডিসফাংশন। অর্থাৎ মনো-দৈহিক সমস্যা। এই সমস্যাটির আরও অনেকগুলো কারণ আছে। সাধ্যমতো চেষ্টা করব সেগুলো তুলে আনার জন্য৷
এখানে মনো-দৈহিক সমস্যা বলতে: যে সমস্যাটি মূলত ‘মনে’ হয়, কিন্তু তার ইফেক্ট পড়ে দেহে। অর্থাৎ তার শারিরীকভাবে মূলত কোনো সমস্যাই নেই। কিন্তু বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে তার মনটা ব্যথিত ও আক্রান্ত হয়। তো এই আক্রান্ত মনের ইফেক্ট গিয়ে পড়ে তার শরীরে। তার শরীর তখন বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে অসুস্থ বোধ করে।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক:
ধরুণ, এই মুহূর্তে আপনি আপনার একান্ত আপন কারো মৃত্যুর সংবাদ শুনলেন। তো সাথেসাথেই আপনার হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল। ব্লাড-প্রেশার বেড়ে গেল। গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো। বুকের মধ্যে প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হতে লাগলো। আপনার চোখ থেকে অশ্রুর ফোয়ারা বইতে লাগলো। ক্ষেত্রবিশেষ আপনি সেন্সলেসও হয়ে গেলেন। এমনও অনেক ঘটনা আমি দেখেছি, একান্ত আপনজনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে সাথেসাথেই হার্ট-এটাক হয়ে সে-ও মারা গেছে। সিনেমা নয়, এমন বাস্তব ঘটনার সাক্ষী আমি।
লক্ষ করুন, এখানে কিন্তু লোকটির শারীরিক কোনো সমস্যা ছিল না। শুধুমাত্র একটি সংবাদ শুনেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। অর্থাৎ তার মানসিক সমস্যাটির প্রভাব তার শরীরের উপর পড়েছে।
ঠিক তেমনি, সেক্স ও স্ত্রী সংক্রান্ত বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ কনসেপ্ট, লজ্জা, অপমান, ভয়, দুঃশ্চিন্তা, হীনমন্যতা ইত্যাদি আপনার মনকে যখন আক্রান্ত করে, তখন আলটিমেটলি এর একটা প্রভাব আপনার শরিরে পড়ে।
দেহমন কেমন যেন অবসাদে ছেয়ে যায়। স্ত্রী আগুন সুন্দরী হলেও তখন আর আপনার ব্রেইনের রিওয়ার্ড সেন্টার সংবেদনশীল হয় না। ফলে ডোপামিনও রিলিজ হয় না। ফলে আপনার স্ত্রীর প্রতি আপনার আকর্ষণবোধও জাগে না। এর ফলে সেক্স হরমোনও ক্রিয়াশীলও হয় না। এখান থেকেই শুরু হয় সাইকো সেক্সুয়াল ডিসফাংশন।
এখানে আসলে বিশেষ কোনো মেডিসিনের কাজ নেই। সাপোর্টেড মেডিসিন হিসেবে কিছু মেডিসিন ব্যবহার করলেও মূলত শুধুমাত্র মেডিসিন দিয়ে এর যথাযথ সমাধান আসবে না। এখানে তার যথাযথ কাউন্সিলিং প্রয়োজন। এবং বিশেষভাবে তার স্ত্রীর সাপোর্ট প্রয়োজন। অন্যকোনো পর্বে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হবে।
এই পর্বে আমি যে মেসেজটি দিতে চাচ্ছি তা হলো, আপনার সাব-কনশাস মাইন্ডকে সেক্স সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা দেবেন ভালো কথা, তবে অবশ্যই সেটা বিবাহপূর্ব কিংবা বিবাহবহির্ভূত সেক্সের ক্ষেত্রে। নিজ বিবাহিত স্ত্রীর সাথে এটা অত্যন্ত নেকীর কাজ। একবার তার প্রতি দৃষ্টি দেবেন তাতেও নেকী। রোমান্স সংক্রান্ত যা-কিছু তার সাথে করবেন তাতেও আপনার নেকী হবে।
আপনার বাবা-মা এই কাজটি করেছেন। যার ফলে আপনার জন্ম। আপনার দাদা-দাদি, নানা-নানি তারাও এই কাজটি করেছেন, যার ফলে আপনার বাবা-মায়ের জন্ম। আপনার আশপাশে যত বুজুর্গ ও ভালো মানুষ দেখেন, তারাও এই কাজটি করে। সমাজের প্রতিটি বিবাহিত দম্পতিই এই কাজটি করে। নবী-রাসুলগনও এই কাজটি করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) তারাও করেছেন। এমনকি স্বয়ং রাসূল (সা.) তিনিও এই কাজটি করেছেন। হযরত আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.) থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রায় সকল মানুষ ও প্রাণী এই কাজটি করে আসছে। মূলত এই কাজটির মাধ্যমেই পৃথিবী আজও আবাদ আছে। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে।
এটা এমনই একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেমন আমাদের খাওয়া ও ঘুম নিতান্তই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। এটা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই, এটাকে নেগেটিভলি নেয়ার কী আছে!? মানবিক এই চাহিদা যিনি দিয়েছেন, তা পূরণ করার জন্য বিবাহের ব্যবস্থাও তিনি করে দিয়েছেন। সো, বি পজিটিভ। ইতিবাচক হোন।
কথাগুলো নিজেকে বারবার শোনান। একান্তে ভাবুন। প্রয়োজনে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নিন। এই বৈধ বিষয়টিকে আপনার সাব-কনশাস মাইন্ডকে মেনে নিতে এবং পজিটিভলি নিতে পুনঃপুন সিগ্ন্যালের ব্যবস্থা করুন।
দেখবেন, একসময় আপনি কোনো মেডিসিন ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
প্রকাশিতব্য বই: #রিমেডি- একটি পারিবারিক মেডিসিন
বইটি শীঘ্রই প্রকাশ হবে ইনশাআল্লাহ। লেখা চলছে এখনো। দু'আ চাই।
|| অন্দরমহল-২ ||
রিমেডি- একটি পারিবারিক মেডিসিন
No comments