হারাম রিলেশন থেকে দ্বীনে ফিরে আসা অতঃপর বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে রিজিক বৃদ্ধির এক বাস্তব গল্প!
চার পাবলিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির ছাত্র ছিলেন তিনি। আমাদের থেকে বয়সে কিছু বড়।
.
ভাই যখন ফার্স্ট ইয়ারে, তখন নিজ গ্রামের এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ান। যখন দ্বিতীয় বর্ষে তখন কিছু দ্বীনি ভাইদের সাথে দ্বীনি সার্কেলে অন্তর্ভুক্ত হউন। ভাইদের সাথে তাবলীগেও গিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ মাহফিলেও গিয়েছেন। হঠাতই ভাই এর মন পরিবর্তন হয়ে যায়। মৃত্যু সম্পর্কিত চিন্তা আসে। ভাই কোরআনের তাফসীর পড়া শুরু করেন। তাফসীর পড়া উনার নেশার মত হয়ে যায়।
.
একবার তাবলীগ থেকে ফিরে, ভাই এর সেই পছন্দের মেয়েকে ডেকে বলেন,
"দেখো। তোমাকে আজ শেষবারের মতন ডেকেছি। অনেক অন্যায় হয়েছে। আর নয়। আল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্য এই মুহুর্ত থেকে তুমি আমি আলাদা। আমাদের সকল যোগাযোগ বন্ধ। আমার নাম্বারও ডিলিট দাও। তোমারটাও দিচ্ছি। যদিও আমাদের দুজনের নামবার দুজনের মুখস্থ হয়ে গিয়েছে, তবু জেনে রাখো, যদি তোমার ফোন করতে ইচ্ছে হয়, কিংবা আমি ফোন দিই আমরা যেন জাহান্নামের আগুনের কথা মনে করিও। আমাদের যদি কথা হয়, সেটা হবে আল্লাহ এর অসন্তুষ্টির উপর।
.
আর হ্যা, তোমার যদি ভাল কোথাও হতে বিয়ের প্রস্তাব আসে করে নিও। আমার অনেক দেরী হবে। লেখাপড়া শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে হবে। তুমি জানোই আমি ইয়াতীম। আমার পুরো পরিবার আমার উপর নির্ভরশীল। আমার ভাই বোন গুলোরও লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে হবে।
তবে আমি যেদিন উপার্জন করব, একবার খোঁজ নিব। তোমার বিয়ে হয়েছে কিনা। আল্লাহ এর কাছে দুয়া করবা, আমিও করব, আল্লাহ যেন উনার জন্যই আমাদের এই হারাম সম্পর্কের ব্রেকআপের মুল্যায়ন করেন। আমরা পরস্পরের জন্য কল্যাণকর হলে যেন আমাদেরকে মিলিয়ে দেন নতুবা দুজনের প্রতি দুজনের মনযোগ যেন যেন সরিয়ে দেন। তদাস্থলে উভয়কেই উত্তম কাউকে দেন"
.
উক্ত বোনের মধ্যে দ্বীনের বুঝ আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে এই দ্বীন এর বুঝ তো আর কাজ করেনা। সব কিছুই তখন সম্পর্ক কেন্দ্রিক।
- "হাত ধরছিনা, ডেটিং এ যাচ্ছিনা, শুধু কথা বলছি, মাঝে মাঝে দেখা করছি"- ব্যাস তত গুনাহ হচ্ছেনা, এমন একটা ধারণা শয়তান মনে সৃষ্টি করে দেয়। তাই অন্তর মরে যায়। গুনাহকে গুনাহ মনে হয় না।
যাইহোক, ভাই যখন শেষ কথা শেষ করে, সালাম দিয়ে বিদায় নিলেন, উক্ত বোনও সালামের উত্তর নিয়ে আর দ্বিতীয় বার ডাকেন নি ভাইকে।
//
কেটে যায় চার বছর। এই চার বছরে পরপ্সরের সামান্য যোগাযোগও হয়নি। ঈদে গ্রামে গেলেও ভুলেও ঐদিকটাই যাওয়া হয়নি ভাই এর।
পড়াশোনা অবস্থাতেই গ্রামে একটা চা কফি আর ফুড আইটেম এর দোকান দেন। কিছু টাকা জমিয়ে ফেলেন এই সুবাদে।
.
চারবছর পর পাশ করে বেরিয়ে টিউশনি শুরু করেন ভাই। খুব অল্প কিছু রোজগার করতেই, সাহস করে একবার খোঁজ নেন। দেখেন ঐ বোন তখনও অবিবাহিত, বাসায় নাকি বেশ কিছু বিয়ের প্রস্তাব আসত, শেষ পর্যন্ত কোন না কোন কারণে হতো না। সবই ছিল আল্লাহ এর পরিকল্পনার অংশ।
ভাই তখন সামান্য দশ হাজার উপার্জন করেন। বিয়ের প্রস্তাব দেন। মেয়ের পরিবারও রাজী হয়। দ্বীনদারিতা দেখে না, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার তাই। তাদের বিয়ে হয় আলহামদুলিল্লাহ্।
.
বিয়ের পর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। কিন্তু ভাই জানতেন, সামনে ভাল দিন অপেক্ষা করছে। "বিয়ে স্বচ্ছলতার দরজা" - এটা কোন যদু মদু নয়, স্বয়ং আল্লাহ এর ওয়াদা। মিথ্যে হতে পারে না।
.
বিয়ের পর ছয় মাসের মাথায় ভাই একটা ত্রিশ হাজার বেতনের চাকরি পান। সেটার ছয় মাসে কাজের পার্ফর্ম্যান্সে বেতন বেড়ে পয়তাল্লিশ হাজার হয়। তারপর আট মাসের মাথায় ভাই একটা সরকারী চাকরি পান সত্তর হাজার স্যালারীর।
এখানেই থেমে নেয়, আরো পাঁচ মাস পর ভাই এর কোল জুড়ে একটা কিউট কন্যা সন্তান আসে। কন্যা সন্তান রিজিকের সুসংবাদ নিয়ে আসে।
.
বাবুর বয়স যখন দুই মাস ভাই একটা "বিশেষ" সম্মান জনক জীবিকা লাভ করেছেন৷ প্রায় দেড় লাখ স্যালারী। চলাফেরা করেন দামী গাড়িতে।
('বিশেষ' এর অর্থ স্পষ্ট করলাম না, যাতে অনেকে বুঝে না যান যে কোন ভাই এর কথা বলছি, তবে সেই বিশেষ টা আপনারা না জানায় হয়ত কল্পনাও করতে পারবেন না। তবে দেশের সব থেকে প্রথম শ্রেণীর কোন চাকরিতে )
বউ বাচ্চা আর ইবাদাত নিয়ে দিব্যি জীবন চলছে তাদের জীবন।
and This is called 'Happy Ending' done by Allah SWT
শিক্ষাঃ
.
[১] দ্বীনি সহোবত অনেক বড় নেয়ামত।
[২] "অবশ্যই মানুষের কাজ তার নিয়ত এর উপর নির্ভর করে। মানুষ তাই পাবে যা সে নিয়ত করে।" (বুখারী, মুসলিম)
[৩] রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ওয়াদা "যদি তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এর বিনিময়ে তোমাকে এমন কিছু দান করবেন, যা তোমার ছেড়ে দেয়া বস্তু থেকে অনেক উত্তম হবে।" (মুসনাদে আহমাদ)
[৪] আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা, "তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদের বিবাহ সম্পন্ন কর ......তারা যদি নিঃস্বও হয় তাহলে আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করে দেবেন, আল্লাহ প্রচুর দানকারী, সর্ববিষয়ে জ্ঞাত"
.
দুনিয়াটা একটা পরীক্ষা। কিন্তু সবার পরীক্ষা এক রকম নয়। যার পরীক্ষা যত বেশি, তার তো সেই পরীক্ষা পাশ করে পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। যে হারাম কাজ করতে মানুষ এর বেশি ইচ্ছা করে, অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আল্লাহর খুশির জন্য সেটা ত্যাগ করে, তার জন্য পুরস্কারও ততটাই বেশি।
এটা আপনি কখনই ভুলে যাবেন না যে, "আল্লাহ এর জন্য আপনার যেকোন স্যাক্রিফাইস" - আল্লাহ তায়ালা কখনও ভুলে যান না। আপনি ভুলে গেলেও তিনি ভুলে যান না।
©Shah Mohammad Tonmoy
No comments