আল্লাহর দান বড়ই বিস্ময়কর, তিনি এমন ভাবে রিজিক দেন বান্দা ভাবতেও পারে না!
আল্লাহর দান বড়ই বিস্ময়কর, তিনি এমন ভাবে রিজিক দেন বান্দা ভাবতেও পারে না!
।
আল্লামা ইবনে জারীর তবারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
হজের মৌসুমে একবার আমি মক্কায় ছিলাম। খুরাসানের একব্যক্তিকে লোকদেরকে ডাক দিয়ে বলতে শুনলাম, ওহে হাজী ভাইগণ! হে মক্কার শহর ও গ্রামের বাসিন্দাগণ! আমি একটি থলে হারিয়ে ফেলেছি যাতে ১০০০ হাজার দিনার ছিল। যে আমাকে সে থলেটি ফেরেত দিবে আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দিবেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং বিচারের দিন তাকে বড় আজর ও সওয়াব দান করবেন।
মাক্কার একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে বলল, ওহে খুরাসানী ভাই! আমাদের দেশের অবস্থা এখন খুবি খারাপ। হজের দিন তো মাত্র নির্দিষ্ট কয়েকদিন এবং হজের মৌসুম-ও তো সুনির্ধারিত কয়েক মাস মাত্র। উপার্জনের রাস্তা প্রায় সব বন্ধ। সুতরাং হতে পারে তোমার মাল কোন অসহায় বৃদ্ধ ব্যক্তির হাতে পড়েছে। এবং সে তোমার কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার আশা রাখে যে, যদি তোমাকে মাল ফেরত করে তবে তুমি তা হতে তাকে সামান্য কিছু হালাল মাল দিবে।
তার বকশিশ কত এবং কি পরিমান সে আশাকরে, সে বলল।
দশমাংশ কামনা করে। সে হিসাবে ১০০০ দিরহাম হতে সে পাবে ১০০ দিরহাম, এই তার চাওয়া, বৃদ্ধ বললেন।
খুরসানী ব্যক্তিটি এই প্রস্তাবে রাজি হল না। এবং বলল, আমি এই কাজ করতে রাজি নই। আমি এই বিষয়টি আল্লাহর কাছে ন্যাস্ত করছি। বিচার দিবসে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে শেকায়েত করব। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তার উপর-ই আমাদের ভরসা।
ইবনে জারীর(রাহি) বলেন, আমার মনে এই ধারনা জন্ম নিল যে, এই বৃদ্ধ লোকটি গরীব এবং সে দিনারের ব্যাগটি পেয়েছে ও তা হতে কিছু পাওয়ার আশাকরছে। আমি তার পিছু নিলাম এমনকি সে বাড়ি ফিরে গেল।
আমার ধারনা সত্য হল। শুনলাম, সে তার স্ত্রীকে ডেকে বলছে, ওহে লুবাবাহ। মহিলা উত্তর দিল, হাজির আছি, আবু গায়সান।
-দিনারের মালিককে হারানো মালের জন্য আহবান করতে পেয়েছি তবে সে তা ফেরত পেলে তার বিনিময় কোন বকশিশ দিতে রাজি না। আমি তাকে বলেছিলাম, আমাদেরকে ১০০ দিনার দিন। কিন্তু সে অস্বীকৃতি জানালো এবং বিষয়টি আল্লাহর কাছে ন্যাস্ত করল। আমি এখন কি করি, লুবাবাহ?! আমাকে তো ফেরত দিতেই হবে। আমি আমার রবকে ভয় করি এবং এই ভয়ও পায় তিনি আমার আযাব বাড়িয়ে দিবেন।
তার স্ত্রী বলল, ৫০ বছর যাবত আমরা আপনার সাথে থেকে গরীবির কষ্ট সহ্য করেছি। আপনার ৪ মেয়ে, ২ বোন, আমি, আমার মা ও আপনি মিলে মোট ৯ জন। আমাদের না কোন ছাগল আছে আর না জমি -জমা । আপনি সমস্ত সম্পদ রেখে দিন। আমরা ক্ষুধার্ত, এর দ্বারা আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করুন ও আমাদের জন্য এ দ্বারা উপার্জন করে আনুন। আমাদের অবস্থা লক্ষ করা ও যত্ন নেওয়া বেশি হকদ্বার। হয়ত আল্লাহ আপনাকে অভাবহীন বানিয়ে দিবেন এবং আপনি আপনার পরিবার পরিজনদেরকে আহার করানোর পর তার মাল তাকে ফেরত দিয়ে দিবেন। অথবা যেদিন আল্লাহ ছাড়া কেউ মালিক হবে না সেদিন তিনি আপনার ঋণের ফয়সালা করে দিবেন।
সে তার স্ত্রীকে বলল, ওহে লুবাবাহ! আমি আমার জীবনের ৮৬ বছরে পা দিয়েছে আর এই অবস্থায় হারাম খাব?! এতটা বছর গরীবির উপর সবর করার পর হারাম ভক্ষন করে আমাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবো?! কবরের যাওয়া সময় নিকটবর্তী আর এই সময় আবার আমার রবকে রাগাবো?! না,না, আমি এ কাজ করতে পারব না।
ইবনে জারীর(রাহি) বলেছেন, আমি ফিরে এলাম তবে তার ও তার স্ত্রী বিষয়ে অবাক হয়েছিলাম।
সকালের কিছু সময় হতেই সে দিনারের মালিক গতদিনের মতো আজও একি ভাবে ডেকে সেই কথাই বলল। বৃদ্ধ লোকটি তার কাছে গিয়ে বলল, হে খোরাসানি ভাই! আমি তোমাকে নসীহা করেছিলাম যে, আমাদের দেশ-আল্লাহর শপথ- খাদ্য-শস্য সংকটে আছে। যে মাল পেয়েছে তাকে সামান্য কিছু সেখান থেকে দেও যাতে তাকে শরীয়তের খেলাফ কিছু করতে না হয়। আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমার মাল পাওয়া ব্যক্তিকে ১০০ দিনার দেও কিন্তু তুমি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলে। তোমার মাল যদি আল্লাহ ভীরু লোকদের হাতে পড়ে তবে কি তাকে ১০০ না দেও কিন্তু কমপক্ষে ১০ দিনারও কি দিতে পারবা না?! এতে তাদের নিজেদের রক্ষা করা, প্রয়োজন পুরা করা ও আমানতের দায়িত্ব পালন করা আসান হবে।
খুরসানী ব্যক্তিটি তাকে বলল, আমি এই কাজ করবো না । মালের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে আশা রাখি। এবং বিচার দিবসে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে শেকায়েত করব। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তার উপর-ই আমাদের ভরসা।
পরের দিনও দিনারের মালিক আগের দিনের মতো আহবান করলে, বৃদ্ধ এগিয়ে গেল এবং বলল, খোরসানী! গতদিন তোমাকে বলেছিলাম, যে তোমার টাকা ফিরিয়ে দিবে তাকে ১০০ দিনার দিও তুমি রাজি হওনিন তারপর ১০ এর কথা বললে তাতেও রাজি হওনি, আরে তবে কি ১ দিনারও দিতে পারবা না! সে তার আধা দিয়ে খাদ্য ও বাকি আধা দিয়ে ছাগল কিনবে যাতে দুধ দোহন করাতে পারে। অতপর সেই দুধ মানুষ পান করবে এতে আয় হবে, সে তার সন্তান-সন্তানাদিদের আহার করাবে।
খুরসানী বলল,
.আমি এই কাজ করতে রাজি নই। আমি এই বিষয়টি আল্লাহর কাছে ন্যাস্ত করছি। বিচার দিবসে তার বিরুদ্ধে তার রবের কাছে শেকায়েত করব। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তার উপর-ই আমাদের ভরসা।
বৃদ্ধ লোকটি তাকে টেনে নিল এবং বলল, চলো এবং তোমার দিনার গ্রহণ কর। এবং আমাকে রাতে ঘুমাতে দেও। এই মাল পাওয়া থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারিনি।
ইবনে জারীর(রাহি) বলেছেন, সে দিনারওয়ালা সাথে গেল এবং আমি তাদের উভয়ের পিছু গেলাম। বৃদ্ধ তার ঘরে ঢুকল। ঘরের মেঝ খুড়ল ও দিনারগুলো বের করল। এবং বলল, এই নাও তোমার মাল। আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমায় মাফ করে দেন এবং তার অনুগ্রহে আমাকে কিছু দান করেন।
।
খুরাসানী ব্যক্তি দিনার নিয়ে বের হবার ইচ্ছা নিয়ে দরজা পর্যন্ত যেতেই বলল, ওহে বৃদ্ধ! আমার পিতা -আল্লাহর তার প্রতি রহম করুন- মারা গেছে এবং ৩ হাজার দিনার রেখে গেছেন। আমাকে বলে গেছেন, এর থেকে এক তৃতীয়াংশ আলাদা করে রাখ এবং তোমার কাছে যাকে বেশি এ মালের বেশি হকদ্বার মনে হবে তাকে দিয়ে দিও। আমি সে মালগুলো ব্যাগে রেখেছি হকদ্বার ব্যক্তিতে দান করার জন্য। আল্লাহর শপথ! আমি খোরাসান থেকে নিয়ে এই পর্যন্ত তোমার থেকে বেশি এই মালের উপযুক্ত আর কাউকে পাইনি। নেও এই মালগুলো। আল্লাহ তাতে বারাকা দিন। তোমার আমানতদ্বারী এবং গরীবির উপর তোমার সবরের কারনে উত্তম বিনিময় দান করুন। এই বলে সে তার মাল রেখে চলে গেল।
বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে ডেকে এই কথা বলতে রইল, আল্লাহ তুমি কবরে থাকা মালওয়ালার প্রতি রহম কর ও তার পুত্রের মাঝে বারাকা দান কর।
।
আল্লাহ বলেছেন,
যে তাকে ভয় করে তাকে তিনি এমন জায়গা হতে রিজিক দেন যে সে কল্পনাও করতে পারে না। যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। (সূরা আত-তলাক: ২-৩)
|জামহারাতু আযযায়ে হাদিসিয়া-২৫১|
.
.
📝লেখা: Abdur Rahman
No comments