Header Ads

Header ADS

আইয়ুব (আ) এর জীবন থেকে নেয়া শিক্ষা এবং এক ভায়ের জীবনের গল্প | ধৈর্য আর কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন

মানুষের বিশ্বাসের লেভেল অনুযায়ী আল্লাহ্‌ তার পরীক্ষা নেন। আল্লাহ্‌ আইয়ুব(আ) এর ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরীক্ষা। নবী হলেও তিনি মানুষ ছিলেন, তাঁরও আমাদের মতই আবেগ অনুভূতি ছিল। আল্লাহ্‌ তাঁকে সবকিছু দিয়েছিলেন, তারপর তাঁর কাছ থেকে একে একে সব নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর ধৈর্য্য ও কৃতজ্ঞতায় কোনদিন কোন ফাটল ধরেনি। অকল্পনীয় পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ্‌ তাঁকে তাঁর সবকিছু আবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। 
,
আইয়ুব(আ) এর জীবনের ঘটনা গুলো আমার জীবনে একটি মিরাকল । এটি বইয়ের মাত্র ৪ পৃষ্ঠার একটি জীবনী, কিন্তু আমি আপনাকে বলব কিভাবে এটি আমার জীবনকে রাতারাতি পরিবর্তন করে দিয়েছে, কিভাবে এটি আমাকে গাইড্যান্স দিয়েছে। আমি আপনাকে প্রমান দিব। আমি আগেও বলেছি কুর'আনের যে আয়াতগুলো আমি আমার জীবনে যখনি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি, আমার জীবন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। নবী আইয়ুব(আ) এই ঘটনাগুলো আমাকে পরিবর্তন করেছে সবচেয়ে বেশি পরিমানে। 
নবী আইয়ুব(আ) এর ঘটনাগুলো আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। আমি অনেকবার চিন্তা করে দেখেছি কিভাবে তিনি জীবনের সবরকম পরিস্থিতিতে কৃতজ্ঞ হতে পেরেছিলেন। আমি ভেবেছি যে আমার প্রিয় পরিবার, ভাইবোন, বাড়ী, সম্পদ সবকিছু যদি আজকে ধ্বংস হয়ে যায় আমি কি পারতাম তাঁর মতন ধৈর্য্য ধরতে ও কৃতজ্ঞ হতে ? হয়ত আমি পারতাম না, কিন্তু আমি নিজেকে বুঝিয়েছি যে চেষ্টা করলে কিছুটা আমি নিশ্চয়ই পারব। হয়ত আইয়ুব(আ) এর মতন পারবনা, কিন্তু তাঁর ১% হলেও তো পারব। তাঁর ঘটনাগুলো পড়ার পর এগুলো আমার মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যেকোন জঘন্যতম পরিস্থিতিতেও আল্লাহর উপর কৃতজ্ঞ হওয়া যায়। কারন নবী আইয়ুব(আ) এর চেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়া কারোর পক্ষে সম্ভব না। আস্তে আস্তে আমি চেষ্টা করেছি "আমি কি চাই" , "আমার কি কি দরকার" " আমার কি কি সমস্যা" এসব বাদ দিয়ে "আল্লাহ্‌ আমাকে কি কি দিয়ে যাচ্ছেন" এটার কথা চিন্তা করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে। 
কষ্টের মধ্যেও কৃতজ্ঞ হলে কি লাভ হয় সেটার ছোট একটি নমুনা আমি পাই ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ আর ২৫ তারিখে। এই ঘটনাটি আমার জীবনের একটি মিরাকলের মত লাগে। কিন্তু আপনার কাছে এটা শুধুমাত্র একটা গল্প। আপনি হয়ত আমার অনুভুতির ১% গ্রহন করতে পারবেন, কিন্তু আমি চাই আপনি এটা জানুন।
জানুয়ারি মাসে ২১৫০ টাকা দিয়ে আমি গ্যালারী এপেক্স থেকে একটা স্যান্ডেল কিনি। আমার আম্মা আমাকে ২০০০ টাকা দেন, ১৫০ টাকা আমি যোগ করি। এত দামী স্যান্ডেল এর আগে আমি কখনো আমার জীবনে পরিনি। ঘটনার শুরু ২৪শে ফেব্রুয়ারী দুপুরে। স্যান্ডেলটা পরে আমি যোহরের নামাজ পড়তে যাই। জুতাগুলো আমি সবসময় সামনের বক্সে রাখি, সেদিন সামনে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে আমার পেছনের বাম পাশে বাক্সে রাখি। রাখার সময় মনটা একটু খুঁতখুঁত লাগছিল, কিন্তু আমার করার কিছু ছিলনা। নামাজ শেষে দেখি আমার প্রায় নতুন স্যান্ডেলটি নেই। মাসজিদ থেকে জুতা আমি অনেক হারিয়েছি। কিন্তু সেদিন আমার অত্যন্ত খারাপ লাগল, কারন ঘটনাটিতে আমার অসতর্কতা দায়ী। 
,
অনেকক্ষন আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মাসজিদে। আমার নবী আইয়ুব(আ) এর কথা মনে পড়ল। আমি দুইটি দু'আ একসাথে পড়লাম- ইন্নালিল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ। আমি নিজেকে বুঝালাম যে, অবশ্যই এটাতে আমার জন্য কোন ভাল কিছু আছে। 
আমি যে বাসায় থাকি এটা আমাদের পারিবারিক হাসপাতাল। এখানে আমি শিশু চিকিৎসক আর আমার মা গাইনোলজিস্ট,। দুপুরে আমি ১টি রোগী দেখে দিলাম আর একজনের মাথায় কয়েকটা সেলাই করে দিলাম, আমাকে তারা ৮০০ টাকা দিয়ে গেল। আমি আল্লাহর প্রতি আবারো কৃতজ্ঞ হলাম যে তিনি কত দ্রুত আমার ক্ষতিপূরন করে দিচ্ছেন। কিন্তু তখনো আমি তারঁ প্ল্যান বুঝিনি। 
বিকালে আমি পাখির খাবার কিনে আনি ৩০০ টাকার। ৮০০ টাকা থেকে আবার আমার ৫০০ টাকা হয়ে যায়। সেদিন বাকি দিন আর ২৫ তারিখ সারাদিন আমার ঘুরে ফিরে স্যান্ডেলটির কথা মনে হতে থাকে। নিজের অসতর্কতার জন্য নিজের উপর আক্ষেপ হয়। মানসিক শান্তির জন্য আমি নিজে নিজেই চিন্তা করি যে- যে চোর স্যান্ডেলটি নিয়েছে তার সন্তান হয়ত অসুস্থ, সে হয়ত এটা বিক্রী করে তার অসুধ কিনেছে। আমি আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাও করি যেন তিনি চোরটিকে ক্ষমা করে দেন। 
,
২৫ তারিখ সকালে আমার আব্বু ঢাকার বাইরে চলে যান। রাত ১০টায় আমার মা আমাকে জানান যে, এক্ষনি একটা সিজার অপারেশন হবে, নবজাতকটি জন্মের পর আমি একা "বেবী ম্যানেজ" ( নাড়ী কাটা সহ আনুসঙ্গিক চিকিৎসা) করতে পারব কিনা। আমি বহুবার এ কাজ করেছি, কিন্তু সাথে আমার বাবা ছিলেন সবসময়। একমাত্র সেদিন আমি একা একা কাজটি করি। 
কাজ শেষ করে আমি উপরে বাসায় চলে আসি। আমার মা রাত ১টায় আমাকে একটি খাম দিলেন। সাধারনত জন্মের পর একটি নবজাতককে ম্যানেজ করার জন্য আমার মা আমাকে সবসময় ১ হাজার টাকা করে দেন। আমি খাম খুলে দেখি সেখানে ১৫০০ টাকা। আমি মা-কে বলেছি যে এখানে বেশি টাকা আছে। তিনি আমাকে বললেন যেহেতু আমি একদম একা ছিলাম, তাই তিনি আমার সম্মানী একটু বাড়িয়ে দিয়েছেন। 
টাকাটা টেবিল এ রেখে একটু চিন্তা করলাম আমি। কয়েক মূহুর্ত পর ইলেক্ট্রিক শক খাওয়ার মতন চমকে উঠলাম আমি। স্যান্ডেল চুরির ৩৬ ঘন্টার মাথায় আমার কাছে ২৩০০ টাকা এসেছে, এর মধ্যে আমি ৩০০ টাকা খরচ করেছি, ২ হাজার টাকা আছে। স্যান্ডেলটা কেনার জন্য জানুয়ারী মাসে আমার মা আমাকে ঠিক ২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ! 
,
আপনি বলতেই পারেন এটা একটা কাকতালীয় ঘটনা, কোনভাবে মিলে গেছে। সেদিনের আগে ও পরে আজকে পর্যন্ত আমি বহু নবজাতক ম্যানেজ করেছি। একমাত্র সেদিন বাদে আর কোনদিন আমি ১ হাজার টাকার কাজের জন্য ১৫০০ টাকা পাইনি,মানে আম্মুর গিফট! জীবনেও না। সামান্য একটা স্যান্ডেলের জন্য আমি কিছুটা কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি ধৈর্য ধরেছিলাম ও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করেছিলাম। আল্লাহ্‌ আমার কষ্ট দেখেছিলেন, তিনি আমার কৃতজ্ঞতা দেখেছিলেন। আল্লাহ্‌ এমনভাবে আমাকে সেটার প্রতিদান দিলেন যা আমি কোনভাবেও কল্পনা করতে পারিনি। কেউ ভাবতে পারেন সামান্য একটা স্যান্ডেল এর জন্য এতো কথা,! কিন্তু আমি এখানে স্যান্ডেল কে মুখ্য ভাবে দেখিনি।। 
কুর'আনে আল্লাহ্‌ বহুবার আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে বলেছেন, ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আপনি যেকোন পরিস্থিতিতে কৃতজ্ঞ হতে শিখুন। আপনি চেষ্টা করুন, আপনি পারবেন। এটা কুর'আনের শিক্ষা। কুর'আন শুরুই হয়েছে "আলহামদুলিল্লাহ" দিয়ে ( সকল প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, বিনয়, নম্রতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আল্লাহর জন্য) . দিনে রাতে হাঁচি, কাশি টয়লেট সহ যাবতীয় কাজে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শিখিয়ে দিয়েছেন।

যদি তোমরা বিশ্বাসী হও আর কৃতজ্ঞ হও, তাহলে তোমাদের শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কোন লাভ আছে কি?

যে-ই আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দিবেন। আর তাঁকে এমন যায়গা থেকে রিযিক দিবেন যা তার কল্পনারও বাইরে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। অবশ্যই আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। (65: 2-3)

"মনে পড়ে তোমাদের প্রভু বলেছিলেন, তোমরা যদি একবারও কৃতজ্ঞ হও, শুধুই একবার, তাহলে আমি তোমাদেরকে দিতেই থাকবো, দিতেই থাকবো, দিতেই থাকবো।" (১৪:৭)

"আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়ভীতি, ক্ষুধা, কখনোবা তোমাদের জান-মাল ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে; তাই যারা ধৈর্য্যধারন করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও। " ( ২:১৫৫)

" তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তা তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই সবচে ভাল জানেন, তোমরা জান না।" (২:২১৬)
,
হয়ত আল্লাহ্‌ নবী আইয়ুব(আ) এর মতন আমাদের পরীক্ষা নেবেন না কোনদিনও। কিন্তু আপনি নিজের বিশ্বাসকে তাঁর মতন করে প্রস্তুত করুন। আপনি সরাসরি আল্লাহ্‌ ও নবীদের কাছ থেকে গাইডলাইন নিন।পার্থিব জীবনে আল্লাহ্‌ অবশ্যই আমাদের সবার পরীক্ষা নিবেন, কিন্তু সেটা আমাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়, আমরা ধৈর্য্য ধরে কৃতজ্ঞ হয়ে তাঁর আরো কাছে যেতে পারি কিনা সেটারই সুযোগ দেন আল্লাহ্‌। আমরা সবাই তাঁর কাছ থেকেই এসেছি, শুধুমাত্র তাঁর কাছেই আমরা ফেরত যাব একদিন। তাঁর চেয়ে আপন আমাদের আর কেউ নেই, তাঁর চেয়ে বড় বন্ধু আমাদের আর কেউ নেই। আপনি যদি আপনার চরম দুর্দিনেও কৃতজ্ঞ হতে পারেন তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আল্লাহও আপনাকে এমন এক দিনে স্মরণ করবেন যেদিন কেউ কারোর কাজে আসবে না। কেমন হবে সেই মূহুর্ত টা যদি হাশরের ময়দানে আল্লাহ আপনাকে ডেকে বলেন- " আমার বান্দা ! তুমি অসাধারন একজন কৃতজ্ঞ বান্দা ছিলে । আজকে আমি আল্লাহ্‌ তোমার উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট । " 
এর বেশি কি কিছু চাওয়ার আছে আমাদের??? 
.
" ও আল্লাহ, আপনি আমাকে এবং আমার বাবা-মা কে যে অনুগ্রহ করেছেন, তা উপলব্ধি করে কৃতজ্ঞ হবার সামর্থ্য দিন। যে সৎকাজগুলো আপনাকে খুশি করে, সেগুলো করার সামর্থ্য দিন। আমার সন্তানদেরকে সৎ হতে দিয়েন। আমি ক্ষমা চাই, আমি এখন আপনার অনুগতদের একজন। " (কু’রআন ৪৬:১৫)

©সাইদ আজাদ

No comments

Powered by Blogger.