হে বোন - তোমাকেই বলছি শোন!
বর্তমান সময়ে মুসলিম বোনদের মধ্যে ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড জীবনদর্শন খুব জনপ্রিয়। তারা স্বপ্ন দেখেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ফার্মাসিস্ট হবার। দুঃখজনকভাবে যারা তাদের জীবনটাকে ক্যারিয়ারকে ঘিরেই আবর্তিত করেন, তারা নিবেদিতপ্রাণ স্ত্রী কিংবা অসাধারণ মা হয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত বিরল (একেবারে যে নেই তা বলা যাবে না)। রিসার্চ অনুসারে, নারীরা যতো বেশী পাশ্চাত্যের “নারীর ক্ষমতায়ন” এর কনসেপ্টকে আঁকড়ে ধরেছেন, পরিবারের ভাঙ্গন বেড়েছে ততো বেশী। মজার ব্যাপার, পুরুষদের সাথে পাল্লা দিতে নামা পাশ্চাত্যের বহু নারীরা এখন হাঁপিয়ে উঠেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন “সবক্ষেত্রে নারী-পুরষ সমান” এটা আসলে ফাঁকাবুলি ছাড়া কিছুই নয়। মহিলা সমাজবিজ্ঞানী এলিস রসির ভাষায়-
.
“Diversity is a biological fact, while equality is a political, ethical and social percept.”
অর্থাৎ, নারী-পুরুষ ভিন্নতা হচ্ছে বায়োলজিকাল ফ্যাক্ট। অন্যদিকে সমতা হচ্ছে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ধারণা মাত্র।
.
যারা এমনটা করে সবার চোখ ঝলসে দিচ্ছেন দিনশেষে তারা কতোটা সুখী? Anne Moir এবং David Jessel এর ভাষায়, “একজন নারী যতো বেশী পুরুষের মতো হতে চাইবেন, (তিনি ততো বেশী তার সত্ত্বার বাইরে যেতে চাইবেন) আর সংজ্ঞানুসারেই তিনি ততো বেশী অসুখী হবেন।” [ Brainsex, Page 131]
.
ওয়েস্টার্ন অনেক নারীই তাই এখন এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের অনেক মুসলিম বোনেরাই তাদের ফেলে দেয়া জঞ্জালে নিজেদেরকে নিমজ্জিত করছেন।
.
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যদি কোন নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমাদান মাসের সিয়াম রাখে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করে- তবে কিয়ামতের দিন তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে।”
.
আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করি- একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কি জান্নাতে যাওয়ার চেয়েও বড় কোন স্বপ্ন রয়েছে?
আমি আপনাদের আবার জিজ্ঞেস করি- জান্নাতে যাবার কি নয়টা দরজা রয়েছে, যার জন্য আপনারা এতোটা কষ্ট করছেন?
আমি আপনাদের ততৃীয়বারের মতো জিজ্ঞেস করি- আপনি কি জানেন একজন পুরুষ হিসেবে আমাকে কতোটুকু কষ্ট করতে হবে জান্নাতের আটটি দরজা দূরে থাক শুধুমাত্র একটি দরজা দিয়েই প্রবেশের জন্য?
.
যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে নিজেকে কোন রকমে বাঁচালো এবং জান্নাতের দিকে কোন মত অগ্রসর হলো- আল্লাহ্ তায়ালা কুর’আনে তাকেই সফল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে যার জন্য আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে, সে কতোটুকু সফল? আপনাদের কাছে কি সফলতার অন্য কোন সংজ্ঞা রয়েছে?
.
আমি কি বাড়িয়ে বলছি?
কুর’আন আর হাদীসেই চোখ বুলানো যাক। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যতোজন নারী এসেছেন আর দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে সেরা হচ্ছেন- আসিয়া (আ.), মরিয়াম (আ.) এবং খাদিজা (রা.)।
.
আসিয়া (আ.) ছিলেন তাঁর সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী লোকের স্ত্রী। চোখ ধাঁধানো বাড়ী, অলঙ্কার, অঢেল সম্পদ- সবই ছিল তাঁর। কিন্তু তিনি দুনিয়াবী সম্পদ, ব্যক্তিগত অর্জন- এসবকে নিজের সফলতা মনে করেননি। এ দুনিয়া তাকে টানেনি। তিনি জানতেন এ সবই মেকি। ক্ষণস্থায়ী। আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা কিংবা পাহাড়সম বিত্ত তাকে মোহগ্রস্থ করেনি। আল্লাহর কাছে তাই খুব সুন্দর এক দু'আ করেছিলেন। এতো সুন্দর যে আল্লাহ তায়ালা তার পবিত্র কালামে সে দু'আ কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করে দিলেন। বুক ভরা আবেগ নিয়ে আল্লাহকে বলেছিলেন - এতো বিশাল অর্থ বিত্তের কোনো প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই এই প্রাসাদের ও। শুধু--
"তোমার নিকটে আমার জন্য একটা বাড়ি বানিয়ে দাও।" (৬৬:১১)
.
মরিয়াম (আ.) এর কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ্ বলেন, “তিনি ছিলেন ধার্মিক নারী।”[৫ঃ৭৫] রাসূল (সা.) এর হাদীস অনুসারে, পুরুষদের মধ্যে অনেকেই কামেল হলেও মহিলাদের মধ্যে কামেল হয়েছেন কেবল দুইজন। ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া (আ.) এবং মরিয়াম (আ.)।
.
খাদিজা (রা.)। তাঁর কথা সামনে এলেই কিছু নারীবাদী বোনেরা লাফিয়ে উঠে বলেন- উনি ব্যবসা করেও এতোটা মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন? আমাদের ব্যবসা-চাকরী করতে দোষ কি?
কিন্তু খাদিজা (রা.) কি তাঁর ব্যবসার কারণে এতোটা মর্যাদার অধিকারি হয়েছিলেন? নাকি কুরাইশদের শত বিপদে স্বামীর জন্য মমতাময়ী হিসেবে পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন এই কারণে? তাঁর মৃত্যুর বহুদিন পর তাঁর ব্যবসার কথা চিন্তা করে কি রাসূল (সা.) কেঁদেছিলেন?
কখনোই না, বরং অত্যন্ত আবেগতাড়িত হয়ে বলেছিলেন, “ যখন সবাই আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে, তখন সে আমাকে সত্যবাদী বলেছে। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে আমাকে সন্তান দান করেছেন, যখন অন্যদের বেলায় বঞ্চিত করেছেন।” আল্লাহ্র রাসূল (সা.) এর কাছে খাদিজা (রা.) এর ব্যবসায়িক পরিচয়ের কোন মূল্য ছিল না। তাঁর সবচেয়ে বড়ো পরিচয় ছিল- তিনি ছিলেন আল্লাহ্র রাসূলের (সা.) অনেক সন্তানের মা, প্রেমময়ী স্ত্রী।
.
আয়েশা (রা.) এর জ্ঞান বিতরণের দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়। আমার বোনেরা কি জানেন, আয়েশা (রা.) কিভাবে পাঠদান করতেন? কেবল শিশু, মাহরাম আর নারীরা তাঁর সাথে বসার অধিকার পেতো। বাকীরা কামরার সামনে মসজিদে নববীতে বসতো। দরজায় পর্দা ঝুলানো থাকতো। পর্দার আড়ালে তিনি বসতেন।[সীরাতে আয়েশা, পৃ-৩৫১] বিখ্যাত তাবেঈ কুবাইসা (রহ.) কতো আক্ষেপ করতেন যে, আয়েশা (রা.) এর সামনে বসে তাঁর জ্ঞান লাভ করার সুযোগ হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের মা, আয়েশা (রা.) পর্দার সাথে আপোস করেননি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, তিনি কখনোই মেহেদী রাঙ্গা হাতে বাহারি হিজাব পরে পুরুষদের সামনে আসতেন না।
.
আল্লাহ্র রাসূল (সা.) আরবের সকল নারীদের চেয়ে কুরাইশদের শ্রেষ্ঠ বলেছেন। সেটা তাদের জ্ঞান, অর্থ কিংবা পেশার জন্য নয়। বরং সন্তানের প্রতি তাদের মমতার জন্য, স্বামীর প্রতি তাদের ভালোবাসার জন্য।
তবে কি কুর’আন সুন্নাহতে নারীরা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেছেন, এমন দৃষ্টান্ত নেই?
আছে, থাকবে না কেন? কিন্তু একটু ভালোভাবেই পড়লে বোঝা যায়, এসব তাদের জন্য কখনোই মুখ্য ব্যাপার ছিল না। একেবারেই গৌণ ব্যাপার ছিল। তারা চেয়েছিলেন একজন সফল মা হতে, অনুগত স্ত্রী হতে।
.
তাই যেসন বোনেরা ঘরের কাজ করেন বলে অন্যরা তাদের সামনে নাক সিটকাতে থাকেন, তাদের আর নাক সিটকাতে দিবেন না। বরং বলবেন- আমি এমন এক জায়গায় নিজের শ্রম আর ভালোবাসা দিয়েছি, ইন শা আল্লাহ্ সে জায়গা থেকেই একদিন একজন সালাহ উদ্দিন বের হবে, জালিমদের ভিত কাঁপিয়ে দিবে আরেক রুকনুদ্দীন বায়বার্স। তোমরা তোমাদের সফলতার সংজ্ঞা নিয়ে বেঁচে থাকো। আমি আমার সফলতাকে আগলে ধরি।
.
প্রকৃত সফলকাম কে তা না হয় আল্লাহ্ই একদিন আমাদেরকে জানিয়ে দিবেন।
.
.
“আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের বিষয়ে খবর দিব না? নবী জান্নাতী, সিদ্দীক জান্নাতী, শহীদ জান্নাতী, ভূমিষ্ঠ সন্তান জান্নাতী, ঐ ব্যক্তি জান্নাতী যে স্রেফ আল্লাহকে খুশী করার জন্য শহরের এক কোণে বসবাসকারী ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ঐ স্ত্রী জান্নাতী, যে তার স্বামীর প্রতি সর্বাধিক প্রেমময়ী, অধিক সন্তান দায়িনী ও স্বামীর দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনকারিনী। স্বামী অসন্তুষ্ট হলে সে দ্রুত ফিরে আসে ও স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আপনি খুশী না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমের স্বাদ নেব না।” [বায়হাক্বী শু‘আব হা/৮৩৫৮]
.
.
Collected from
Brother:
Shihab Ahmed Tuhin
No comments