কিন্তু আমি ওকে ভুলতে পারব না...
কিন্তু আমি ওকে ভুলতে পারব না.. ওকে ছাড়া বাঁচবোনা!
.
সদ্য ব্রেক আপ হওয়া আবেগী ছেলে মেয়ের থেকে এই কমন কথা শোনা যায়। হয়ত আবেগ টা অস্বাভাবিক নয়। অতিরিক্ত ভালবেসেছিল যাকে, যাকে সাথে নিয়ে ভবিষ্যতের অনেক স্বপ্ন দেখেছিল, একসাথে অনেক দূর চলতে চেয়েছিল, সে প্রতারণা করলে আবেগ কাজ করাটা স্বাভাবিক।
.
অস্বাভাবিক এই যে, তারা তো ভুলে গিয়েছিল,
.
সম্পর্ক টা রবের অসন্তোষের উপর শুরু হয়েছিল।
.
এই প্রণয়ের পরিণতি শেষ হওয়াতে আলহামদুলিল্লাহ, যে রবের অসন্তোষ শেষ, এখন আন্তরিক ভাবে নিজেকে শুধরে নিয়ে, বাকী জীবন রবের সন্তোষের উপর শুরু হতে পারে।
.
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর থেকে উত্তম স্বামী কেউ হতে পারবে? নিশ্চয়ই না! তিনি তার স্ত্রীদের যতটা ভালবাসতেন, কোন স্বামী ততটা ভালবাসতে পারবে? এবং স্ত্রীদের মধ্যে তিনি হজরত খাদিজা (রাঃ) কে সব থেকে বেশি ভালবাসতেন।
এবং নিঃসন্দেহে সেই ভালবাসা ছিল সর্বোচ্চ বৈধ এবং পবিত্র। এই সেই হজরত খাদিজা (রাঃ), যিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিপদের দিনে মাথার ছাতার মত।
.
সেই ছাতা হারানোর পর, হজরত খাদিজা (রাঃ) এর মৃত্যুর পরও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবন থেমে থামেনি, তিনি আরো দশজন উম্মে মুমিনীন কে বিয়ে করেছেন, সংসার পেতেছেন, স্ত্রীদের ভালোবেসেছেন, স্ত্রীদের ভালবাসা পেয়েছেন।
.
আবার হজরত খাদিজা (রাঃ) ও প্রথম জীবনে স্বামী হারিয়ে কতই না উত্তম প্রতিদান পেয়েছিলেন আল্লাহ'র থেকে !
.
আল্লাহ স্বয়ং রাসুলুল্লাহ কে তাঁর স্বামী হিসেবে মনোনীত করলেন।
.
এটাই জীবন। জীবন থেমে থাকে না। তাও আবার এই ঠুনকো পার্থিব জীবন! নিশ্চয়ই পরকালে রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনাদর্শ আমাদের রোল মডেল। তিনি যদি বৈধ সম্পর্কের প্রিয়তমাকে হারিয়েও আবার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন, নতুন ভাবে ভালবাসতে পারেন, ঘর সংসার করতে পারেন, ভালবাসা গ্রহন করতে পারেন, তাহলে যারা নোংরা অপবিত্র হারাম প্রেমে জড়িত, ব্রেকআপ এর পর কেন বাঁচতে পারবে না?
.
যে বাবা মা আপনাকে ৩০ বছর ধরে মানুষ করেছেন, সেই বাবা মা যখন মারা যায়, বুক ফেটে যায়, দুনিয়াটা আঁধার মনে হয়, কিন্তু মানুষ কী বাঁচতে পারেনা? মানুষ কী আর কখনও হাসেনা? কত বৈধ আর পবিত্র সম্পর্ক বাবা মা আর সন্তানের !
.
এগুলো শয়তানের ধোঁকা।
শয়তান মনে বুঝ দেয় যে আপনি বাঁচতে পারবেন না, মরে যাবেন ইত্যাদি। এটা ভুল, বরং এমন অহরহ দেখেছি, এই ধরনের ইনসিডেন্ট এর পর আন্তরিক ভাবে তাওবা করে সম্পূর্ন আল্লাহ'র পথে এসে জীবনে এমন সংগী পেয়েছে, যে এখন অতীতকে একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই মনে হয়না। সুন্দর সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার করছে আলহামদুলিল্লাহ।
.
আগে যে রাস্তা দিয়ে একা হাটলেও তার মনে পরে যেত অতীতের অনেক স্মৃতি, কিংবা খুব চেষ্টা করেও সেই পুরাতন ফোন নাম্বারটা ব্রেইন থেকে বের করতে পারতনা, বলত যে, "ভাই ! কীভাবে ভুলব ! সব জায়গাতেই যে তার স্মৃতি ! এই রাস্তা গুলো যদি ধ্বংস করে দিতে পারতাম" এখন তো নতুন জীবনে আল্লাহ তায়ালা তাকে অতীতের নাম ঠিকানা সব ভুলিয়ে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। ঐ রাস্তা দিয়েই পাঞ্জাবী দাড়িওয়ালা ছেলে, বোরকা নিকাবী মেয়ে, গুলু গুলু বাচ্চাদের নিয়ে হেঁটে যায়। রাস্তা গুলো কত সুন্দর দেখায় এখন ! এই পথ যদি না শেষ হয় !!!
.
.
যে ভালবাসা আল্লাহ'র জন্য স্থাপিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তো তার রহমতের বৃষ্টি দ্বারা সে সম্পর্ক ভিজিয়ে দিবেন এটাই স্বাভাবিক !
.
তাই হারাম সম্পর্কের ব্রেকআপে "আলহামদুলিল্লাহ" পড়া উচিত। সবার এমন সৌভাগ্য হয়না, সবার জীবনে আল্লাহ'র এমন অনুগ্রহ ঘটেনা যে হারাম সম্পর্কের ইতি ঘটে।
"ব্রেকআপ" একটা নেয়ামত। কতজন তো চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হারাম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। বলে, 'ভাইয়া জানছি অন্যায় হচ্ছে, কিন্তু বেরিয়ে বেশিদিন থাকতে পারিনা। আবার জড়িয়ে যাই' কিংবা কত হারাম প্রণয় পরিণতি পাবার আগেই মৃত্যু এসে যায়, আবার অধিকাংশ হারাম প্রণয় বিয়েতে পরিণত হলেও পরিণতি পায়না, ডিভোর্স হয়ে যায়।
.
আর মনে রাখবেন, আপনার ক্ষেত্রে আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আপনার হারাম সম্পর্কের ইতি ঘটেছে। কারন যা কিছু ভাল তা আল্লাহ'র পক্ষ থেকেই।
.
কারণ শয়তানের ইচ্ছায় কখনও হারাম কিছুর ইতি ঘটেনা, সে তো চায় তা আরো দূর কন্টিনিউ করিয়ে নিতে।
.
আলহামদুলিল্লাহ বলুন যে শয়তান যা চেয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি, আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে বাস্তবায়িত হয়েছে আপনার জীবনে।
.
.
কিছু ব্যাপার মাথায় রাখবেনঃ
.
● আপনার জীবনের প্রথমাংশ যদি কেউ নষ্ট করে, কোন মানেই হয়না তাকে আর সুযোগ দিতে জীবনের বাকি অংশও নষ্ট করার। বরং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দ্বিতীয় অংশ তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে শুরু করুন, এমনভাবে যেন সে কখনও ছিলই না। জীবনের প্রথম অংশ থেকে শিক্ষা পেয়েও আপনি যদি দ্বিতীয় অংশে কোন পরিবর্তন না আনেন, তাহলে আপনি মুলত সারা জীবনই শিক্ষা পাবার যোগ্য। আপনি মুমিনের পরিচয় বহন করেন না। কারণ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুমিন একই গর্তে দুইবার দংশিত হবেনা। [বুখারী : ৫৭৮২; মুসলিম : ২৯৯৮]
.
● সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ঝুলে থাকবেন না যে বের হবেন কি হবেন না এটা নিয়ে দোটানায় ভুগবেন না। সিদ্ধান্ত ফিক্সড করুন, হয় যার সাথে সম্পর্ক আছে সম্ভব হলে বিয়ে করে ফেলুন (বিয়ে করে ফেললেও অতীতের গুনাহ মাফ হয়না আন্তরিক তাওবা ছাড়া) আর সেক্ষেত্রে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দিন বিয়ের পূর্ব মুহুর্ত অথবা সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিন।
.
সিদ্ধান্ত বিয়ের হলে বাসায় জানান। বাসায় মানবে কি না মানবে তা পরের ব্যাপার। আর বেরিয়ে আসতে চাইলে, আধা ভাবে না এই যে দেখা করব না কিন্তু চ্যাট করব, কথা বলব জাস্ট ইত্যাদি, বরং সম্পূর্ন ভাবে বেরিয়ে আসুন।
.
● যদি বুঝেন যে বিয়ে সম্ভব নয় (ছেলের চাকরি নেই, কিংবা কুফু মিলেনা, কিংবা ফ্যামিলি মানবেনা যে কারনেই হোক) তাহলে এই মুহুর্তে থেমে যান। একে তো হারাম সম্পর্ক + অনিশ্চিত পরিণতি। যতদিন অবৈধ এই সম্পর্ক কন্টিনিউ করবেন, ততদিন শয়তানের মোহগ্রস্ত করার পরিমাণ বাড়বে, এবং যত দেরী হবে, বেরিয়ে আসতে তত কষ্ট হবে। শয়তান যখন হুট করে চলে যাবে এই সম্পর্ক থেকে, তখন এত বড় ধাক্কা সহজে নেওয়া সম্ভব হয়না অনেকের পক্ষে। অনেকে তো সুইসাইডও করে এবং নিশ্চিত অনুমেয় যে পরকালে যে নিজেকেও গালি দেয় এবং যার জন্য সুইসাইড করল তাকেও গালি দেয় যে আবেগে জাহান্নামে নিজের স্থায়ী জায়গা বানিয়ে নিল !
.
● একটা জাহেলিয়াতি দেখা যায় যে, ছেলে মেয়েকে বলে, "তুমি অন্য কোথাও বিয়ে করে নাও, আমি দূর থেকে সারাজীবন তোমার বন্ধু হয়ে থাকব।" সাবধান ! এইসবের কোন ভিত্তি নেই। অতীতে যা হবার হয়েছে। আন্তরিক ভাবে তাওবা করে অতীত থেকে বেরিয়ে আসুন। নতুন যার সাথে জীবন শুরু করবেন সেখানে অতীতের যেন ছিটে ফোটাও না থাকে। অতীতের সাথে আত্মিক, মানসিক, স্মৃতিবিজড়িত সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করুন।
.
অতীত পরবর্তীতে যেভাবে প্রভাব ফেলেঃ অনেকে যারা বিয়ের পরও অতীতের সাথে সম্পর্ক কথা বার্তা বজায় রাখে, স্বেচ্ছায় বা ইমোশনাল কারনে কিংবা ব্ল্যাকমিলে পরক্রিয়ায় জড়িয়েই যায়।
.
অতীতে সম্পর্ককালীন কেবল নিজের হক নষ্ট করেছিলেন, এখন আপনি নিজের, নিজের স্বামীর ও সেই অতীতেরও জীবনে আসা নতুন কারোর হক নষ্ট করছেন।
.
এর প্রভাব আপনার ও আপনার স্বামী/ স্ত্রীর পরিবারের প্রতি সন্তানদের উপরও পড়তে পারে। খুব বাজে ভাবে পড়তে পারে। সে যখন জানবে তার বাবা/ মা এর অতীতে এমন কিছু ছিল বা ইত্যাদি ! এগুলোর একটা ইফেক্ট তাদের বিয়ে শাদীর সময়ও বিভিন্ন কথা উঠতে পারে।
.
তাওবার সাথে সাথে আল্লাহ যেভাবে আপনার সকল পাপ মুছে দেন (ইনশাআল্লাহ), আপনিও তেমন অতীতের সমস্ত চিহ্ন মুছে দেবার ব্যাপারে নিয়ত রাখবেন।
.
“এবং আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ইস্তিগফার করে (ক্ষমা চায়)। আল্লাহ্ ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জিদ ধরে থাকে না।” [সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৫]
অতীত নিয়ে জিদ ধরে থেকেন না। জাস্ট লেট ইট গো।
.
অতীত চ্যাপ্টার জাস্ট ক্লোজড করে দিন। ওয়াল্লাহি, অতীত চ্যাপ্টার ক্লোজড করে, আল্লাহ'র পথে আসলে আল্লাহ তায়ালা ইন শা আল্লাহ, সুন্দর ভবিষ্যত রেডি রেখেছেন আপনার জন্য।
এটা স্বান্তনা নয়। এটা আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি।
.
هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ
.
"ভালো'র প্রতিদান ভালো ছাড়া আর কি হতে পারে?" (সুরাহ আর-রহমান, আয়াত : ৬০)
.
তাওবা করে বেরিয়ে আসা অতীত যেন কোনভাবেই আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যত নষ্টের, একইসাথে পরকালীন সুখ নষ্টের কারণ না হয়। বরং অতীত থেকে বেরিয়ে এসে কৃত তাওবা যেন আপনার সুন্দর ভবিষ্যত ও পরকালীন সুখ শান্তির কারণ হয়।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ শাহ মোহাম্মদ তন্ময় (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
.
.
(Y) শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !
_
#ওহী (Seeking The Way To Jannah)
No comments