স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া মিটানোর চমৎকার কিছু টিপস
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া মিটিয়ে ফেলার চমৎকার কিছু টিপস! শিখুন, সুখী হউন!
স্বামী-স্ত্রী। দুটি জীব, দুটি প্রাণ। একত্রে জীবনযাপন। এক ঘরে এক পরিবেশে পার করতে হয় জীবন। তাই মাঝে মাঝে টুকটাক কিছু হওয়াই স্বাভাবিক। আর এমন না হলে, এক ঘেয়েমিও চলে আসে। তবে যখন এর পরিমাণ বেশি হয় বা দীর্ঘ হয় তবে সতর্ক হওয়া উচিৎ। যাতে পরস্পরের মধ্যে ঘটে যাওয়া মান-অভিমান বা সামন্য বাগবিতণ্ডা অন্য দিকে না গড়ায় তার জন্য কিন্তু কিছু মজার ‘টিপস্’ও আছে। চলুন তাহলে জেনে নিই সেগুলো।
এক. মধুর সৃতিগুলো স্মরণ করুন!
আপনার সঙ্গীর কোন কাজ বা আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। কারণ আপনি তাকে অনেক ভালবাসেন। সে এমনটি করবে বা বলবে তা আপনি কল্পনাও ঠাই দিতে পারছেন না! তাই খুব চটছেন! একটু থামুন! কয়েক সেকেন্ড ভাবুন। এ তো সে লোকটিই যার অনেক কাজ বা আচরণে আপনি এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তখন মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন, ‘তোমাকে ভাল না বেসে থাকা যায় না। সত্যিই তুমি অনন্য।’ সে মানুষটিই আজ ভুল করেছে! তার কোন কাজ আপনাকে কষ্ট দিয়েছে! সে মানুষটিই! তার সেই সুন্দর ভালবাসার ভাললাগার আচরণগুলো স্মরণ করুন। সেগুলোর সৃতিচারণ করুন। রাগ কমে যাবে! স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মানুষ ভুল করে। ভুল করতে পারে। ভাল-মন্দ স্বভাবের মিশ্রণেই মানুষের সৃষ্টি! একটি আচরণ খারাপ হলে তার অনেক আচরণ আছে যেগুলো মুগ্ধকর। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। আপনার ক্ষেত্রে। আপনার সঙ্গী/সঙ্গীণীর ক্ষেত্রে। সকলের ক্ষেত্রে! প্রত্যেকের উচিৎ তার সঙ্গীর উত্তম আচরণগুলো দেখা। মন্দগুলো মানবিক দুর্বলতা হিসেবে ক্ষমা করে দেয়া। আপনিও আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে হয়ত এমনি চাচ্ছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সা. বলেন, “কোন মুমিন অন্য মুমিন নারী (পুরুষ) -কে চূড়ান্তভাবে ঘৃণা করতে পারে না। তার একটি স্বভাবে সন্তুষ্ট না হলে অন্য স্বভাবে অবশ্যই সন্তুষ্ট হবে।” [সহীহ মুসলিম : ২৬৭২]
সুতারাং কোন কারণে মনোমালিন্য হলে, গোস্বা আসলে আপনার সঙ্গীর ভাল স্বভাব ও আচরণগুলো স্বরণ করুন। প্রত্যেকের মাঝে অবশ্যই অনেক ভাল স্বভাব, গুণ আছে। ইনশাআল্লাহ বন্ধন মজবুত হবে। সম্পর্ক অটুট হবে।
দুই. শয়তান কিন্তু জিতে গেল, আপনি হেরে গেলেন!
এ বিষয়ে একটি চমৎকার হাদীস আছে। শুনলে অবশ্যই অভিভূত হবেন। আমরা হরহামেশা শয়তানকে জেতাচ্ছি। আর আমরা তার কাছে হেরে যাচ্ছি। হযরত যাবের রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, “ইবলিস তার সিংহাসন পানিতে স্থাপন করে। তারপর তার বাহিনীদের প্রেরণ করে। সর্বোচ্চ দুষ্কৃতিকারী তার সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করে। (দুষ্কৃতি শেষে) একজন এসে বলে : আমি এই এই কাজ করেছি। ইবলিস বলে, তুমি উল্লেখযোগ্য কিছুই করোনি! অপর একজন এসে বলে, আমি স্বামীর পিছনে লেগেই ছিলাম। একপর্যায়ে তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাই! তখন শয়তান তাকে কাছে টেনে নেয় আর বলে, হ্যাঁ তুমিই কাজের কাজ করেছ! এবং তার সাথে আলিঙ্গন করে!” [সহীহ মুসলিম :৫০৩৯]
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য শয়তানের সবচে বেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। এ কর্মে ইবলিস সর্বাধিক খুশি। কারণ,বৈবাহিক বন্ধনকে ইসলামে “মীসাকে গালীজ” তথা ‘সুদৃঢ় সম্পর্ক বা প্রতিশ্রুতি’ বলা হয়েছে। [সূরা নিসা : ২১] যেন যে কোন মূল্যে এ সম্পর্ক টিকে থাকে। বন্ধন অটুট হয়। উভয় পক্ষকে ইসলাম বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা, দীক্ষা ও পরামর্শ দিয়েছে। দায়িত্ব ও উপদেশ দিয়েছে। তাই শয়তান এ বন্ধন ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যায় করে।
যখনই নিজেদের মাঝে কিছু হয়ে যাবে লক্ষ রাখতে হবে শয়তান যেন জিতে না যায়! সাবধান হতে হবে। আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
তিন. ঝগড়াতে আপনার বিরত্ব বাড়ছে না বরং কমছে!
কথায় আছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।’ একদম বাস্তব! রাগলেন তো হারলেন!ঝগড়া মিটানোর জন্য নরম হয়ে যান। চুপ থাকুন। প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকুন। ভুল স্বীকার করুন। সে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তারপর তাকে বুঝান। সে মেনে নিবে। পলিসি অনুসরণ করুন। সুখী হোউন। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কাউকে কুস্তিতে পরাস্ত করে দেয় সে বাস্তবে বীর নয়। বীর তো সে যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে!” [সহীহ বুখারী : ৫৭৬৩]
সুতরাং প্রতিশোধ নেয়া বা পরাস্ত করা থেকে বিরত থাকুন! কাকে পরাস্ত করবেন? কার উপর প্রতিশোধ নিবেন? সে তো আপনার জীবনসঙ্গী! এখানো প্রতিশোধ নয়, বরং ভালবাসা ও মমতা কাম্য! নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। সাবাধন হোউন!
সুখী হোক আপনার পারিবারিক জীবন! সুখী হউন আপনি! সুখী হোক সকলে! সুখী হোক সামজ।
লেখাঃ মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ
No comments