বাবা মায়েরা একটু ভাবুন?
আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়েছেন?
মাস্টার্স কেন করেছেন?
এমবিএ কেন করেছেন?
ঠিক একইরকম ভাবে বাবা মায়েদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনার মেয়েটিকে মাস্টার্স কেন করান, এমবিএ কেন করান?
প্রশ্নটা মেয়েকে নিয়ে এজন্যই যে, এইচএসসির সময় বুঝে যাওয়া যায় কার চাকরির ঝোক আছে কার নেই, কাকে দিয়ে ভাল ভাবে চাকরিটা হবে কাকে দিয়ে হবে না।
এটা বোঝার পরেও সাংসারিক মানসিকতাসম্পন্ন মেয়েটির বিয়ের চেষ্টা না করে লেগে থাকেন তাকে এমএ পাশ করানোর জন্য। যে মেয়েটা বাইরের জগতের বিষয়ে আগ্রহী নয় তাকে শুধুমাত্র সামাজিক ভাবে সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বড় করেছেন লোকমুখে এই কথা শোনার জন্য মেয়েটিকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চরকি কাটান।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে অনার্স মাস্টার্স করানো হয় তাতে আপনার কন্যা সন্তানটি না চাকরির যোগ্যতা লাভ করে, না সাংসারিক বা বাচ্চা পড়ানোর জন্য তার এ মেধা কাজে লাগে।
কারণ অনার্স পড়ে একবছর গড়িয়ে গড়িয়ে পার করে দিলে হাতে চলে আসে মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট।
বিয়ের জন্য এত সার্টিফিকেট এর দরকার হয়না যদি আপনি আপনার মেয়েকে অনার্স পড়া অবস্থায় বিয়ে দেন।
অনেকে বলতেই পারেন, সেক্ষেত্রে পড়াশোনার বিষয়টা অনিশ্চিত। শ্বশুর বাড়ি থেকে পড়াবে কিনা, আর সংসার করে মেয়ের পড়াশোনা করতে কষ্ট হবে।
সব পরিবার এক নয়, অনেক পরিবারই মেনে নেয় আর এক্ষেত্রে মেয়ের নিজের ইচ্ছাশক্তির বিষয়ও থাকে। যে মেয়েটি সংসার করেও বই পড়ার, একাডেমিক পড়াশোনার সময় বের করতে পারে সহসাই বোঝা যায় তাকে দিয়ে অনেক কিছু সম্ভব।
কিন্তু মা মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, ক্লাস বাসা করে দিন পার হয়, চাকরি করবে কি করবে না জানে না, গা ছেড়ে দেওয়া জীবন যাকে বলে। এই মেয়েটি সহজে কোন বাড়ির বউ হতে পারবে কিন্তু তার জন্য দায়িত্বশীল স্ত্রী, বাড়ির বউ, সন্তানের মা এই ভুমিকাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ?
অন্য দায়িত্ব বাদ দিলাম, সে তার এত এত পড়াশোনা দিয়ে তার নিজের সন্তানেরই কোন কাজে আসবে না। কারণ এই গা ছেড়ে জীবনযাপন করায় সে জানে না জীবনের লক্ষ্য কিভাবে ঠিক করতে হয়, সন্তানকে লক্ষ নির্ধারণ করা কিভাবে শেখাতে হয়।
এত সাধ করে মেয়েকে মাস্টার্স করিয়েছি এখন মাস্টার্স না হলে একটা ছেলের কাছে কিভাবে দেই।
আমি সবাইকে বলি। মাস্টার্স হলেই সবাই যোগ্য পাত্র নয়। কে চাকরি করে, কার মধ্যে সম্ভাবনা আছে, কে দায়িত্বশীল, কর্মঠ এমন ছেলে খুঁজুন। শুরুতে অনেক কিছু না থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সে উন্নতি করবে। পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। মেয়ের জন্য সৎ ও পরিশ্রমী ছেলে খুঁজুন। পরিশ্রমী ছেলেদের অন্যতম গুন তারা অলসতা করে না, কাজকে ছোট বড় মনে করে না, তারা কারো দিকে হাত পেতে বসে থাকে না, তাদের আত্মসম্মান বোধ থাকে।
জন্মগত ভাবেই কেউ শান্তশিষ্ট, কেউ চটপটে। ছোট বেলা থেকে কেউ তুখোড় মেধাবী, কেউ চেষ্টা করে মেধার বিকাশ ঘটায়, কে সাধারণ মেধায় থাকে। খেয়ে পরে মোটামুটি জীবন পার করতে পারলেই ভাল।
এই মোটামুটি জীবন পার করতে চায় মেয়েগুলোকে একটা সার্টিফিকেট এর জন্য বিয়ে না দিয়ে ঘরে আটকে রেখে বাবা মা হিসেবে কি উপকার তার করছেন?
কোন উপকার করছেন না। বরং সে যেটা পারত গুছিয়ে সংসার করা, সেটা করতে না দিয়ে একরকম তাকে বাধ্য করছেন সরকারি চাকরির জন্য স্কুলের চাকরির জন্য চেষ্টা করতে। বাধ্য করার কথা বলছি কারণ, ঐ মেয়েটা বিয়ে হলে বেঁচে যায়। বিয়ে হচ্ছে না বলেই আপনারা তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন চাকরি করার। এই পরামর্শ সাজিয়ে গুছিয়ে প্লান করে আমিও দেই।
কারণ, মাস্টার্স করে ঘরে বসে থাকা মেয়েটাকে উদ্ধার করার আর কোন পথ নেই।
কিন্তু আপনারা বাবা মায়েরা কেন এই অত্যাচার অবিচার কন্যা সন্তানের সাথে করেন?
আপনার মেয়ে শিক্ষকতা পেশায় যেয়ে কখনো মনের খুশিতে কাজ করতে পারবে না, বেস্ট টিচার কখনো হতে পারবে না, এফিশিয়েনট এমপ্লয়ি কখনো হতে পারবে না। কারণ সে শুরু থেকেই ঘরোয়া স্বভাবের। আপনারা জোর করে তাকে অন্যরকম জীবন দিতে চান।
বাবা মায়েরা ভাবুন একটু, কি করছেন সন্তানের সাথে? সন্তান আপনাদের জন্য নিয়ামত। তাদের দিয়ে আখিরাত সাজান। আখিরাত গড়ে নিন। দুনিয়া যার স্থায়িত্ব নেই সন্তানের মত দামী কিছু দিয়ে দুনিয়া সাজাচ্ছেন?
সন্তানেরা বাবা মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে না। কিন্তু তাদের ছলছল চোখ, চুপ করে থাকা, এক টুকরো শুকনো হাসি বলে দেয় অনেক কিছু।
বাবা মায়েরা একটু ভাবুন?
আপনার কন্যাটিকে পড়ালেখা করাতে নিরুৎসাহিত করছি না। আপনাকে বলছি, সন্তানে বলুন "মা তুমি চাকরি কর বা না কর তাতে আমরা চিন্তিত নই। তোমার বিয়ে দেওয়া তোমাকে পড়াশোনা করানো থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তোমার বিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা দেখেশুনে তোমার বিয়ে দেই। এর পরে তোমার চাকরি করার ইচ্ছা হলে হায়ার স্টাডি কর না হলে কর না। যাই কর, আগে তোমার বিয়ে হওয়া জরুরী।"
বাবা মায়েরা, সন্তানকে এমএ পাশ করিয়ে বিয়ে না দিয়ে মারা গেলে আপনার বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা সন্তানকে সঠিক সময়ে বিয়ে না দিয়ে উচ্চশিক্ষায় আটকে রেখেছেন, দুম করে বাবা মরে গেছে এই বাবাকে হিসাব দিতে হবে কন্যার জন্য বাবা হিসেবে কি দায়িত্ব পালন করেছে।
ভাইয়েরা যারা এই লেখা পড়বেন তারা বাবা মাকে বোঝান, সাথে বোনকে ও বলুন, বিয়ের পরেও পড়াশোনা করা যায়, সুযোগ থাকলে চাকরি করা যায়। কিন্তু সবকিছুর জন্য বিয়ে ফেলে রাখতে চান না।
বাবা মায়েরা একটু সন্তানের সঠিক আভিভাবক হওয়ার চেষ্টা করুন।
©সংগৃহীত
No comments