Header Ads

Header ADS

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার হুকুম কি?

১।প্রশ্ন:-শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার হুকুম কি? এই রোজাগুলো রাখা কি ফরজ?
২।প্রশ্ন:-শাওয়ালের ছয় রোযা কি লাগাতরভাবে রাখা শর্ত?
৩।প্রশ্ন:-আগে কি রমাদানের কাযা রোজা আদায় করব না শাওয়ালের ছয় রোজা আদায় করব?

১। উত্তর: 

রমজানের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত-মুস্তাহাব; ফরজ নয়। শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখার বিধান রয়েছে। এ রোজা পালনের মর্যাদা অনেক বড়, এতে প্রভূত সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এ রোজাগুলো পালন করবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।”[সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিজি, সুনানে নাসায়ী ও সুনানে ইবনে মাজাহ] এ হাদিসকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিন রোজা রাখবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল: যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে সে দশগুণ সওয়াব পাবে।” অন্য বর্ণনাতে আছে- “আল্লাহ এক নেকিকে দশগুণ করেন। সুতরাং এক মাসের রোজা দশ মাসের রোজার সমান। বাকী ছয়দিন রোজা রাখলে এক বছর হয়ে গেল।”[সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ] হাদিসটি সহিহ আত-তারগীব ও তারহীব  (১/৪২১) গ্রন্থেও রয়েছে। সহিহ ইবনে খুজাইমাতে হাদিসটি এসেছে এ ভাষায়- “রমজান মাসের রোজা হচ্ছে দশ মাসের সমান। আর ছয়দিনের রোজা হচ্ছে- দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে গেল।”

হাম্বলি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখা একবছর ফরজ রোজা পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল রোজার ক্ষেত্রেও সওয়াব বহুগুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেননা এক নেকিতে দশ নেকি দেয়া হয়।

এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণে রমজানের রোজার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া। কেয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন: আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন – অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামায দেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন: নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।[সুনানে আবু দাউদ]

আল্লাহই ভাল জানেন।    

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

২।উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

শাওয়ালের রোযাগুলো লাগাতরভাবে রাখা শর্ত নয়। তাই এ রোযাগুলো কেউ আলাদা আলাদাভাবে রাখুক কিংবা লাগাতরভাবে রাখুক এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে যত তাড়াতাড়ি আদায় করা যায় তত ভাল। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা ভাল কাজে অগ্রণী হও।” আল্লাহ্‌ আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে দ্রুত ছুটে আস।” মুসা আলাইহিস সালাম বলেন: “আমি তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এ জন্য।”[সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৮৪] তাছাড়া দেরী করলে নানা বিপদ-আপদ ঘটতে পারে। এটি শায়েফি মাযহাবের আলেমগণ ও হাম্বলি মাযহাবের কিছু কিছু আলেমের অভিমত। কিন্তু, অবিলম্বে আদায় না করে মাসের মাঝখানে কিংবা শেষে আদায় করলেও কোন অসুবিধা নেই।

ইমাম নববী বলেন:

“আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এ হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখা মুস্তাহাব। শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে লাগাতরভাবে রোযাগুলো রাখা মুস্তাহাব। আর যদি আলাদাভাবে রাখে কিংবা শাওয়াল মাসের পরে রাখে তবুও জায়েয হবে এবং এ সুন্নত পালনকারী হিসেবে গণ্য হবে এ হাদিসের ব্যাপকতার কারণে। এ বিষয়ে আমাদের আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। ইমাম আহমাদ ও দাউদও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।”[আল-মাজমু শারহুল মুহায্‌যাব]

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

৩। উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।

সঠিক মতানুযায়ী শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের রোজা পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

( مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ ) ، رواه مسلم (1164)

“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল অতঃপর এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম (১১৬৪)]

 হাদিসে উল্লেখিত ثُمَّ শব্দটি حرف عطف যা الترتيب (বিন্যাস) ও التعقيب  (ক্রমধারা) অর্থে ব্যবহৃত হয়। এদিক থেকে হাদিসটি প্রমাণ করছে যে, আগে রমজানের রোজা পূর্ণ করতে হবে। সেটা সুনির্দিষ্ট সময়ে আদায় হিসেবে হোক অথবা (শাওয়াল মাসে) কাযা পালন হিসেবে হোক। অর্থাৎ রমজানের রোজা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে হবে। তাহলে হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাযা রোজা বাকী আছে সেতো পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি। রমজান মাসের কিছুদিন রোজা রেখেছে।

 তবে কারো যদি এমন কোন ওজর থাকে যার ফলে তিনি শাওয়াল মাসে রমজানের কাযা রোজা রাখতে গিয়ে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে পারেননি। যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত (প্রসবোত্তর স্রাবগ্রস্ত) হন এবং গোটা শাওয়াল মাস তিনি রমজানের রোজা কাযা করেন তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে পারবেন। কারণ এ ব্যক্তির ওজর শরিয়তে গ্রহণযোগ্য। অন্য যাদের এমন কোন ওজর আছে তারা সকলে রমজানের রোজা কাযা করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা জিলক্বদ মাসে কাযা পালন করতে পারবেন। কিন্তু কোন ওজর ছাড়া কেউ যদি ছয় রোজা না রাখে এবং শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি এই সওয়াব পাবেন না।

 শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কোন নারীর উপর যদি রমজানের রোজার ঋণ থেকে যায় তাহলে তার জন্য কি রমজানের ঋণের আগে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা জায়েয হবে; নাকি শাওয়ালের ছয় রোজার আগে রমজানের ঋণের রোজা রাখতে হবে?

 জবাবে তিনি বলেন: যদি কোন নারীর উপর রমজানের কাযা রোজা থাকে তাহলে তিনি কাযা রোজা পালনের আগে ছয় রোজা রাখবেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

( مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ ) ، رواه مسلم (1164)

“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম (১১৬৪)]

যার উপর কাযা রয়ে গেছে সেতো রমজানের রোজা পূর্ণ করেনি। সুতরাং সে কাযা আদায়ের আগে এই রোজা পালনের সওয়াব পাবে না। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কাযা রোজা পালন করতে গোটা মাস লেগে যাবে (যেমন- কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি গোটা রমজানে একদিনও রোজা রাখতে না পারেন, শাওয়াল মাসে তিনি রমজানের কাযা রোজা রাখা শুরু করেন, কিন্তু কাযা রোজা শেষ করতে করতে জিলক্বদ মাস শুরু হয়ে যায়) তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে ছয় রোজা রাখবেন। এতে করে তিনি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার সওয়াব পাবেন। কেননা তিনি বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছেন (যেহেতু শাওয়াল মাসে তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভবপর ছিল না)। তাই তিনি সওয়াব পাবেন।[ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০] দেখুন ফতোয়া নং- 4082 ও 7863।

 এর সাথে আরেকটু যোগ করে বলা যায়, যে ব্যক্তি বিশেষ কোন ওজরের কারণে রমজানের রোজা ভেঙ্গেছে সেটা কাযা করা তার দায়িত্বে ফরজ। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালন প্রাধান্য পাবে এবং ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেখুন প্রশ্ন নং- 23429।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব।

No comments

Powered by Blogger.