এক চিমটি প্রোডাক্টিভিটি | তানজিলা আমীন মিফতাহ
#প্রোডাক্টিভ_মুসলিমাহ
- ফাহিমাপু, বলো না আমি কী করবো?
- কী হলো তোর হঠাৎ? সমস্যাটা তো বল, তারপর না হয় দেখা যাবে কী করা উচিত তোর।
- আমার পড়াশোনা কিচ্ছু হচ্ছে না আজকাল। ভাল্লাগে না পড়তে। এদিকে রেজাল্ট খারাপ করতেই আছি৷ কলেজের ক্লাস নিয়মিতই হচ্ছে। শুধু আমিই পিছিয়ে আছি। 'জুম'টা ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে নিউজফিড স্ক্রল করতে থাকি পুরোটা সময়। আমার যে কী হবে!
- আচ্ছা, বুঝলাম। বাকিটা সময় কী করিস শুনি?
- ওই আর কী। খেয়েদেয়ে, ঘুমিয়ে, অনলাইনে কীভাবে কীভাবে যেন চলে যায় বুঝিই না।
- তো এখন কী করতে চাচ্ছিস?
- আমাকে কিছু টিপ্স দাও যেন একটা প্রোডাক্টিভ লাইফ লীড করতে পারি।
- দেখ নীতু, আমি তোকে একগাদা টিপ্স দিতে পারি। মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলে কান ঝালাপালা করে দিতে পারি। তুই হয়তো আজকে গিয়ে পড়ে ফাটিয়ে দিবি। কিন্তু দুইদিন পর যে লাউ, সে কদুই রয়ে যাবি। আল্টিমেটলি কোনো লাভ হবে কি?
- ঠিক বলেছো তুমি,কথাটা। ইউটিউবে কত মোটিভেশনাল ভিডিও দেখি ঠিক নেই। যতক্ষণ দেখি ততক্ষণ থাকে প্রভাব। এরপর আবার আগের মতো। এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছে যে মোটিভেশনাল ভিডিও দেখাটাই যেনো একটা আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।
- সেটাই তো। কিন্তু এরকমভাবে চলতে থাকলে তো দুনিয়া-আখিরাত দুইটারই বারোটা বেজে যাবে।
- তো কী করতাম বলো না? সবকিছু কেমন জানি অগোছালো লাগছে।
- আচ্ছা, শোন। এডমিশন টেস্টের কথা মনে করে দেখ। তোর কি তখন সবসময়ই পড়তে ভালো লাগতো? মাঝেমাঝে হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করতো না?
- হ্যাঁ, করতো।
- কিন্তু তখন তুই হুট করে চাইলেই ফেইসবুকে লগইন করতে পারতিস না, হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা দিতে পারতিস না। অতিজোরে আউটবই হাতে নিতে পারতিস বা কারো সাথে গল্প করতে পারতিস। ঘুরেফিরে আবার পড়ার টেবিলেই ফিরে আরাটাই ছিলো পরিণতি। কারণ তখন তোর স্মার্টফোন ছিলো না। এখন যেহেতু আছে, কোনো কিছু ভালো না লাগলেই তুই রিয়েলিটি থেকে 'Escape' করার জন্য ফোনে ডুব মারিস, সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকিস।
- আসলেই আপু, এমনই হয়। এরপর কীভাবে যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায় খবরই থাকে না।
- থাকবে কীভাবে বল? ওই স্ক্রলিংয়ের মাঝেই তোর ব্রেইন আরাম খুঁজে পায়। তাও শর্ট-টার্ম। আর এর পরিণতি যে কত ভয়ংকর সেটা তুই মাথায় আনার সুযোগই পাস না। রেজাল্ট? লং-টার্ম প্লেজার হারানোর দিকে ধীরেধীরে এগোনো।
তোর এখন যেটা করতে হবে সেটা হলো নিজের মধ্যে Self-accountibility নিয়ে আসা। এই জিনিসটা না থাকলে যেভাবে চলছিস সেভাবেই চলতে থাকবি।
-কীভাবে আনতে পারি অভ্যেসটা?
-যে ফোনটা তুই 'escape' করার জন্য ইউজ করিস, সেই ফোনই তোকে হেল্প করবে। কীভাবে, শোন। একটা নতুন ডায়েরি বা খাতা নিবি। সেখানে নিজের হিসাব নিজে রাখবি প্রতিদিন। ফোনে এক ঘণ্টা পরপর এলার্ম সেট করে রাখবি। ফোনের সেটিংসে সেটা না থাকলে BipBip নামের একটা এপ্লিকেশন ইন্সটল করবি। প্রত্যেক ঘণ্টায় এলার্ম বাজার সাথে সাথে সাথে ওই একঘণ্টা তুই কোন কাজে ওয়েস্ট করেছিস বা ইউটিলাইজ করেছিস সেটা লিখে রাখবি। প্রত্যেক ঘণ্টায় এরকম করবি। এরপর দেখবি তোর ২৪টা ঘণ্টা কোন কোন কাজে হারিয়ে ফেলছিস বা কাজে লাগাচ্ছিস। যদি দেখিস যে অনেকগুলো ঘণ্টা তোর অকাজেই খরচ হয়ে যাচ্ছে, কষ্ট লাগবে না তখন?
-হু, লাগবে। কিন্তু রেগুলারিটি মেইন্টেইন করতে পারবো তো?
-শুরুটা তো কর আগে। হাশরের ময়দানে আমলনামাটা দেখার আগে বেঁচে থাকতে নিজের আমলনামা নিজে দেখে নিজেকে শোধরানোই কি বিবেচকের মতো কাজ না? এই দুনিয়ায় বুঝছিস অনেক কিছু ভালো লাগবে না। পড়তে ভাল্লাগবে না। এক্সারসাইজ করতে ভাল্লাগবে না। কাজ করতে ভাল্লাগবে না। কিন্তু তোর ভাল্লাগে না বলে কি দুনিয়া থেমে থাকবে? তোর একার জন্য প্রফের ডেইট পিছুবে? তোর মৃত্যুর সময় পিছাবে বল? কিচ্ছু পিছাবে না রে। দুনিয়াটা তোকে কেন্দ্র করে ঘুরে না।তোর ভালোলাগা-খারাপলাগার উপর নির্ভর করে না। তাহলে নিজের লং-টার্ম প্লেজারের জন্য নিজেকেই পরিবর্তন করতে হবে রে। না হলে উপায় নাই আর কোনো। যখনই নিজেকে কোনো একটা অপ্রয়োজনীয় কাজে লিপ্ত দেখবি তখনই প্রশ্ন করবি, "এই কাজটা কি আমাকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরাবে একটু হলেও, কিংবা জান্নাতের কাছে নিয়ে যাবে?" এরপর কী করবি না করবি সিদ্ধান্ত তোর হাতে।
যখন নিজের সময় হারিয়ে যাওয়ার চোরাগলির খোঁজখবর তোর হাতে আসবে তখন তুই সেসব সময়কে তোর প্রয়োজনীয় কাজের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিবি।
-আচ্ছা, ফাহিমাপু, তুমি কি পারো এর সব ফলো করতে?
-চেষ্টা করি। সবসময়ই পারি না। শায়ত্বানের কাছে মাঝেমধ্যেই পরাজিত হয়ে যাই। আল্লাহ মাফ করুন আমাকে। আমি নিজে ১০০% পারফেক্ট হয়ে তারপর তোকে এসব বলতে গেলে সেদিন হয়তো কখনোই আসতো না।
-আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করুন। আ-মীন।
-আর শোন, জানিসই তো দু'আ মুমিনের হাতিয়ার! এটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবি। আল্লাহর কাছে সবসময় সময়,'ইল্মের বারাকাহ্ চেয়ে দু'আ করবি। আমাকেও স্মরণ রাখিস তোর দু'আয়।
-ইন শা আল্লাহ্, আপু। আর কোনো পরামর্শ দিবে?
-কিছু এপ্লিকেশন পাওয়া যায় টাইম ট্র্যাকার। ওসব তোকে দেখিয়ে দিবে তুই ডেইলি কতক্ষণ সময় ফোনে ব্যয় করেছিস। আর aTimeLogger নামের একটা এপ্লিকেশন আছে, ওটাতেও তুই ম্যানুয়ালি তোর কাজের হিসাব রাখতে পারিস। নানা ধরনের অ্যাপব্লকার পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তুই ওসবে ফেইসবুক,ইন্সটা, হোয়াটসঅ্যাপ ব্লক করে রাখতে পারিস। কিন্তু দিনশেষে নিজের উপর কন্ট্রোলটা আনতে না পারলে এসব টুলস বৃথা।
-জাযাকিল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ্, আপু।
-ওয়া ইয়্যাক।
'এক চিমটি প্রোডাক্টিভিটি '
তানজিলা আমীন মিফতাহ্
No comments