Header Ads

Header ADS

বিবাহের পূর্বে কিছু নসীহা | দুজন দুজনার বই থেকে

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর ঘটনা। তবে যদিও কেউ কেউ মনে করেন এটা উনার ঘটনা নয়। যাইহোক, শিক্ষণীয় অনেক ব্যাপার রয়েছে।

বিবাহের পূর্বে ছেলের প্রতি বাবার নসীহত।

ইমাম সাহেবের ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক। একদিন সময় করে পুত্রকে ডেকে পাশে বসালেন। আন্তরিক ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেনঃ

--ওয়ালাদী! তুমি কি সুখী হতে চাও?

--না'আম ইয়া আবী।

--তাহলে তােমাকে তােমার হবু জীবনসঙ্গিনীর জন্যে দশটা বিষয় নিয়ে যেতে হবে।

--কী সেগুলাে? কোথায় পাওয়া যাবে?

--তােমাকে কোথাও যেতে হবে না। কিনতেও হবে না। আমার কাছে তােমার কাছে, সবার কাছেই সেগুলাে আছে। সবাই ব্যবহার করতে পারে না এই যা। তাহলে চলাে দেখা যাক, অমূল্য সেই দশটা বিষয় কী?

প্রথম ও দ্বিতীয়ঃ নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি রসিকতা পছন্দ করে। নখরা-ন্যাকা তাদের স্বভাবজাত। তারা ভালোবাসা স্পষ্টপ্রকাশকে খুব পছন্দ করে। 
তুমি একান্তে তােমার স্ত্রীর কাছে এসব প্রকাশে কখনােই কার্পণ্য করবে না। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে।

যদি এসবে কার্পণ্য করাে, তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তােমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে। এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে। ভালােবাসা জানালা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজে।

তৃতীয়ঃ নারীরা কঠোর, কর্কশ, রূঢ়, বদমেজাজী, রুক্ষস্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না। তােমার মধ্যে এমন কিছু থেকে থাকলে এখনই ঝেড়ে ফেল। কারণ তারা সুশীল, ভদ্র, উদার পুরুষ পছন্দ করে। তুমি তার ভালােবাসা অর্জনের জন্যে, তাকে আশ্বস্ত করার জন্যে হলেও গুণগুলো অর্জন করে।

চতুর্থঃ এটা খুব ভাল করে মনে রাখবে, তুমি তােমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, পরিপাটি, গােছালাে, সুরুচিপূর্ণ, সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তােমার স্ত্রী কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়।
তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন, কোনও অবস্থাতেই, তােমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।

পঞ্চমঃ ঘর হলাে নারীদের রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সব সময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে, সাজায়। রচনা করে। খুবই সাবধান থাকবে! কখনােই তােমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেও না। এমনকি তাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াসও চালাবে না।

তুমি তাে জানােই, আল্লাহ তা'আলার কাছে, সবচেয়ে অপছন্দজনক বিষয় কী?

--তার সাথে কোনও কিছু শরীক করা।

--হ্যা, ঠিক বলেছাে। একজন রাজার কাছেও সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় কী? 

--তার রাজ্যে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করা।

ষষ্ঠঃ নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে-সর্বান্তঃকরণে প্রবলভাবে স্বামীকে পেতে চায়। তবে পাশাপাশি বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না।
হুশিয়ার থেকো বাবা! তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিওনা। তুমি এ অন্যায় দাবী করে বসাে না, 

--হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তােমার বাবা-মাকে। 

তুমি এ বিষয়টা চিন্তাতেও স্থান দিও না। তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করলে, সে হয়তাে চাপে পড়ে মেনে নিবে। কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা-বােবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। তােমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে জেগে উঠবে।

সপ্তমঃ তুমি জানাে, অনেক শুনেছ এবং পড়েছ নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাজরের) বাঁকা হাড় থেকে। এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য। তুমি চোখের ভ্রু লক্ষ করে দেখেছাে? সেটার সৌন্দর্য কোথায়? 

--বক্রতায়।

-- একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভ্রু কে সুন্দর করে তােলে। ভ্রু যদি সােজা হতাে, দেখতে সুন্দর লাগতাে না। 
যদি তােমার স্ত্রী কোনও ভুল করে ফেলে, অস্থির হয়ে রেগেমেগে হামলা করে বসাে না। উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সােজা করতে যেও না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যাবে। আর ভাঙা মানে বুঝই তাে, তালাক।

আবার সে অনবরত ভুল করে যেতে থাকলে, ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কিছু না বলে লাগামহীন ছেড়েও দিও না। তাহলে বক্রতা যে আরও বেড়ে যাবে। নিজের ভেতরে গুটিয়ে যাবে। তােমার প্রতি আচরণ উদ্ধত হয়ে যাবে। তোমার কথায় কান দিবে না।

- তাহলে কী করবো?

---মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে।

অষ্টমঃ তুমি হাদীস পড়ােনি?

--কোনটা আব্বাজান? 

--ঐ যে, যার ভাবার্থ হলাে:
= নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। তার প্রতি অতীতে কৃত সব সদ্ব্যবহার-সদাচার ভুলে যায়। তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করাে, হঠাৎ একদিন কোনক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেলেছো, ব্যস অমনিই সে নাকের জল চোখের জল এক করে বলবে: 
--- আমি তােমার কাছ থেকে কখনােই ভালাে কিছু পাইনি।

দেখাে বাছা! তার এই আচরণে রুষ্ট হয়াে না। তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি বিতৃষ্ণা এনো না।

তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে তুমি অনেক এমন কিছু পাবে যা তুমি শুধু পছন্দই করাে না, বরং জানও লড়িয়ে দিতে পারাে।

নবমঃ নারীদের শরীর-মনের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না। এক সময় এক রকম থাকে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেক সময় মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তাআলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামায মাফ করে দিয়েছেন। রােযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য ও মেজাজ ঠিক হওয়া পর্যন্ত।

তুমি তো রাব্বে কারীমের বান্দা। তুমিও তােমার রবের গুণে গুণান্বিত হও। রব্বানী হও। তুমি তােমার স্ত্রীর দুর্বল মুহূর্তগুলােতে তার প্রতি কোমল হবে।

তােমার আব্দার-আবেগ শরমে রেখাে। তােমার রবও খুশি হবেন, তােমার রাব্বাহও খুশি হবে। কৃতজ্ঞ হবে।

দশমঃ সবসময় মনে রেখাে, তােমার স্ত্রী তােমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, বিভিন্নভাবে তােমার মুখাপেক্ষী। তােমার সুন্দর আচরণের কাঙাল। তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে। তার প্রতি অনেক বেশি মনােযােগ দিবে। তাকে আপন করে নিবে। তাহলে সে তােমার জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিশেবে পাবে।

© "দুজন দুজনার" বই হতে নেয়া।
লেখকঃ কুর'আনের পাখি মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ

No comments

Powered by Blogger.