বন্ধু নির্বাচনে সাবধান হন, ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন
আমি কয়েক মাস থেকে পুরনো সকল বন্ধুদের সাথে দূরত্ব বাড়াচ্ছি এবং নতুন বন্ধু তৈরি করছি। নতুন বন্ধুরা আমাকে মুভি দেখতে বলেনা, গেইমস খেলতেও ইনভাইট করেনা, আর না তাদের সাথে কোন আজেবাজে কথাবার্তা হয়। বরং তারা কাজ শেষে সর্বদা জীবনঘনিষ্ট আলোচনা করতে অধিক আগ্রহী।
মনে করুন, আপনি আল্লাহকে ভয় করেন তাই মেয়েদের সাথে কথা বলেন না। অন্যদিকে আপনার ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের সাথে অনবরত ডেটিং/মিটিং করে যায়।
ফজরের ওয়াক্তে যখন আপনি কষ্ট করে আরামের বিছানা ত্যাগ করে অজু করতে যান। তখন আপনার ফ্রেন্ড কাথা মুড়িয়ে আয়েশ করে ঘুমিয়ে থাকে।
আপনি নাটক/সিনেমা দেখা ও গেইমস খেলা থেকে নিজেকে শত কষ্টে বাচিয়ে রাখছেন কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড প্রতি রাতে ২/৩টা মুভি দেখে এবং পাবজি আর ফ্রি ফায়ার নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকে।
এগুলো দেখে মানুষ হিসেবে আপনার কষ্ট লাগবে এটাই স্বাভাবিক। দেখে মনে হচ্ছে আপনার বন্ধু অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে। আপনি বরং সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কিন্তু না, সূরা ইউনুসের ২৫ নং আয়াতটি ভিন্ন কথা বলে- وَيَهْدِى مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰط مُّسْتَقِيمٍ "আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে কেবল তাকেই হেদায়েত দান করেন"
সুতরাং আপনার যে তথাকথিত ফ্রেন্ডকে দেখে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন সে মূলত আল্লাহর ভালোবাসার মধ্যে নেই। সে আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যে নেই। সে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে নেই। আপনি আল্লাহর প্রিয় এবং সেজন্য আল্লাহ আপনাকে সরলপথে পরিচালিত করছেন। সুবহানাল্লাহ! হৃদয় শীতল করে দেয়ার মত একটি আয়াত। দিনশেষে আপনি সফল আর আপনার বন্ধু ভয়াবহ ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত।
কিন্তু প্রতিনিয়ত আপনার বন্ধুদের এমন কার্যকলাপ দেখতে থাকলে নিজের হৃদয়কে সরলপথে আটকে রাখা আপনার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হবে। একসময় শয়তান বিজয়ী হয়েই যাবে।
তাই প্রথমেই এমন সকল ফ্রেন্ডকে ফেইসবুকের ফ্রেন্ডলিস্ট নয় বরং জীবনের ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে দূর করতে হবে চিরতরে। তাদের সাথে বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না।
এখন আপনার মনে হতে পারে, আমার বাল্যকালের বন্ধুকে কিভাবে ত্যাগ করবো?
জেনে রাখুন, এই বাল্যকালের বন্ধুই আপনাকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করবে একদিন। সূরা ফুরকানের ২৮ নং আয়াতে তাই বলা হয়েছে- "হায় আমি যদি অমুককে বন্ধুরুপে গ্রহণ না করতাম।"৷ এই বাক্য বলে বহু জাহান্নামী সেদিন আফসোস করবে। কাজেই বাল্যকালের বন্ধু আর অমুক বন্ধু বলে কিছু নেই জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য সবরকম চেষ্টা করতে হবে।
এখন যদি আপনার ভাবেন, আমি তাদের সাথে বন্ধুত্ব ত্যাগ করলে তারা তো বিপথগামী হয়ে যাবে। তাদেরকে সরলপথে আহবান করার জন্য আমার তাদের সাথে থাকা উচিত।
তাহলে একটু থামেন, বাস্তবতা যে ভিন্ন তা বুঝার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার পূর্বের বন্ধুদের সাথে থাকলে তারা তো পরিবর্তন হবেই না বরং আপনি নিজেই বদলে যাবেন। আপনাকেই তারা নতুন মুল্লা-মুফতি নামে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে। বন্ধুদের পরিবর্তন করা এত সহজ না।
আল্লাহর রাসূল সাঃ এর জীবনী থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, মক্কায় উনি তার বন্ধুদের পরিবর্তন করতে পারেন নি। আবু লাহাব, আবু জাহেল, উতবা, শাইবা এরা সবকিছু জেনে বুঝেও হেদায়েতের পথে আসেনি। কেন? কারণ তাদের একটাই কথা, মুহাম্মাদ আমাদের সাথে চলাফেরা করে ছোট থেকে বড় হলো। এখন হঠাৎ নবুওতী দায়িত্ব পেয়ে গেল, তা আমরা কিছুতেই মানতে পারবো না।
আপনার বন্ধুরাও তাই বলবে, আপনি তাদের সাথে ছিলেন। আপনার কত পাপ কাজ তাদের জানা। এখন হঠাৎ পরিবর্তন তারা কিছুতেই মানতে পারবে না।
সুতরাং তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে তাদেরকে পরিবর্তন করা অসম্ভব। বরং সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করেন আর যদি সম্ভব হয় ৫/৭ বছর পর দেখা করে দ্বীনের দাওয়াত দিন। আল্লাহ হেদায়েত কপালে লিখে রাখলে তারা সুপথগামী হতেও পারে।
ছোটবেলার বন্ধুসহ সবার সাথে যাদেরকে দেখলে আপনার দুনিয়ার প্রতি লোভ তৈরি হয় তাদের সবাইকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে।
আর এই ৫/৭ বছরে নতুন বন্ধু তৈরি করুন। যাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হবে আপনার মত। যারা আপনার মত জান্নাতে যেতে চায় এবং জাহান্নাম থেকে বাচতে চায়। যারা সর্বদা সরলপথে অটুট থাকার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করুন। আপনার জীবন চলার পথ অনেক সুগম হবে এবং ইনশা আল্লাহ সবাই মৃত্যুর পর জান্নাতে থাকবেন।
No comments