Header Ads

Header ADS

লক্ষ্য নির্ধারণে SMART কৌশল

লক্ষ্য নির্ধারণের S.M.A.R.T কৌশল

জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে রাখা জরুরি। তবে দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে গবেষণালব্ধ ফলাফল অনুযায়ী আমাদের মধ্যে খুবই কম সংখ্যক মানুষেরই লক্ষ্য নির্ধারিত আছে। আর তাদের মধ্যকার বেশিরভাগেরই কেবল মাথায় থাকে, কোথাও লেখা থাকে না। খুবই কম সংখ্যক মানুষ তাদের জীবনের লক্ষ্য কর্মপরিকল্পনাসমেত খাতায় লিখে রাখেন। এবং তাদেরই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সফলতার অন্যদের তুলনায় কয়েকগুন বেশি। 

‘আমার জীবনের লক্ষ্য’- রচনা কিংবা ‘Aim in life’- নামের প্যারাগ্রাফ তো শৈশবে কতই লেখা হয়েছে। আর সেখানে নিজেদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নের কথাও লিখেছি আমরা বেশ গুছিয়েই। সময়ের সাথে সাথে আমাদের স্বপ্ন, লক্ষ্য আর ইচ্ছায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। সেই ছোট্টবেলার স্বপ্ন আর লক্ষ্যটাও তাই বদলে গেছে অনেকেরই। তা ছোট্টবেলার লক্ষ্য না হয় একে ওকে তাকে দেখে নির্ধারিত হয়েছিলো; তাই সময়ের সাথে সেগুলো পাল্টেও গেছে আমাদের অনেকেরই। এখনকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে তো? থাকলে সেটা কীভাবে-ই বা করেছো? 

বড়বেলার লক্ষ্য নির্ধারণ করার সময় হওয়া উচিত একটুখানি কুশলী। চলো শিখে নেওয়া যাক লক্ষ্য নির্ধারণের S.M.A.R.T কৌশল। 

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক SMART শব্দের প্রতিটি অক্ষর প্রকৃত অর্থে কী কী নির্দেশ করে- 

S- Specific
M- Measurable
A- Attainable
R- Realistic 
T- Time bound

এবার আশা যাক বিস্তারিত আলোচনায়! 

Specific বা নির্দিষ্ট- আমরা অনেকেই “জীবনের লক্ষ্য কী”- এমন প্রশ্নের জবাবে, “চাকুরি করতে চাই”- কথাটা বলে থাকি। এটা কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নয়। এটা সুনির্দিষ্ট হবে তখনই যখন বলা হবে কোথায়, কেমন চাকুরীতে আগ্রহ সেটাও নির্ধারিত থাকবে। আরও সহজ করে বলি। আরো সহজ করে বলা যায় একটা পরিচিত উদাহরণ দিয়ে। ধরা যাক, কারো ক্ষুধা পেয়েছে। তিনি কোনো হোটেলে খাবার খেতে গেলেন। সেখানে পরিবেশকদের গিয়ে যদি তিনি বলেন যে তিনি ক্ষুধার্ত তাঁর খাবারের প্রয়োজন তাহলে কি হবে? এভাবে বলার পরিবর্তে উনি যদি বলতেন উনি কী ধরণের খাবার খেতে চান যেমন- আমি দুপুরের খাবারে ভাতের সাথে ডাল আর ভুনা মুরগী খেতে চাই! তাহলে সেটা হতো নির্দিষ্ট। 

এরকমভাবেই আমাদের লক্ষ্যগুলোকেও নির্ধারণ করতে হবে সুনির্দিষ্টভাবে যাতে লক্ষ্যটা কী, কেন, কীভাবে- এমন প্রশ্নগুলোর উত্তর যেন পাওয়া যায়। 
 
Measurable বা পরিমাপযোগ্য- আমাদের লক্ষ্যটাকে যাতে পরিমাপ করা যায়। কারণ,

“What can not be measured can not be improved.”
-Peter Drucker

ধরা যাক, কেউ ওজন কমাতে চায়। কিন্তু কতখানি? সেটা যদি নির্ধারিত না থাকে তাহলে কিন্তু সেটা পরিমাপ করা সম্ভব হবে না। কিংবা কেউ আবার ম্যারাথন দৌড়াতে ইচ্ছুক, কিন্তু কতখানি দৌড়াবে সেটাও নির্ধারিত থাকতে হবে। পড়াশোনার ব্যাপারটা ধরা যাক। কেউ কোনো বিষয়ের সিলেবাস শেষ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কয়টা অধ্যায় কয়দিনে শেষ করবে সেটাও নির্ধারণ থাকা চাই আগে থেকেই। 

যে লক্ষ্যই নির্ধারিত হোক না কেন সেটা যাতে সংখ্যা দিয়ে মাপা সম্ভব হয়। 

Attainable বা অর্জন করা সম্ভব- আমরা অনেক সময় এমন সব লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলি যেগুলো পর্যন্ত পৌঁছানো কখনো কখনো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা অতি পরিচিত উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক। ‘পরীক্ষার আগের রাতে সিলেবাস শেষ করার লক্ষ্য’- আমাদের অনেকেরই অভ্যাস পুরো বছর হেলেদুলে পার করে একবারে পরীক্ষার আগের রাতে বই হাতে নেওয়ার। পরীক্ষার আগের রাতে পড়েই যদি সিলেবাস শেষ করে ভালো ফলাফল করা সম্ভব হতো তাহলে পুরো বছর ধরে তোমাকে পড়তে দেওয়া হলো কেন? পরীক্ষার আগের রাত হলো রিভিশনের জন্যে। পুরো সিলেবাস রিভিশন দেওয়ার লক্ষ্যটা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু, সে রাতে যদি পড়া শুরু করো তবে কী করে হবে? 

লক্ষ্য নির্ধারণের আগে ভালোভাবে যাচাই করে নাও সেটা অর্জন করা আদৌ তোমার পক্ষে সম্ভব কি না?
 
Realistic অর্থাৎ বাস্তবসম্মত- যে লক্ষ্যই নির্ধারণ করা হোক না কেন সেটা হওয়া চাই বাস্তবসম্মত। 

“We overestimate what we can do in a year and underestimate what we can accomplish in a decade.” 
- Matthew Kelly (From the book “Long View”) 

আমরা যদি বলে বসি যে আজকের মধ্যে সারা বাংলাদেশ ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলবো, সেটা কি আদৌ সম্ভব? এটা কি একদিনের কাজ? হ্যাঁ, কয়েক বছর সময় নিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন দেশে পরিণত করা সম্ভব। ঠিক তেমনি জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের সময়ও এ বিষয়টা মাথায় রাখা জরুরি। 

লক্ষ্য নির্ধারণের সময় সেটার সম্ভাব্যতা, বাস্তবতার সাথে মিল কতটা আর যৌক্তিকতা যাচাই করা অনেক জরুরি। 

Time bound বা সময়ব্যাপ্তি নির্ধারণ- লক্ষ্য নির্ধারণ হলেই হবে না, এর পাশাপাশি প্রয়োজন কত সময়ের মধ্যে সেটা অর্জন করতে হবে সেটাও। কেউ যদি ঠিক করে যে আগামী একমাসের মধ্যে সিলেবাস শেষ করে ফেলবে সেক্ষেত্রে তাকে এটাও ঠিক করতে হবে যে ঠিক কত তারিখের মধ্যে কোন বিষয়ের সিলেবাস শেষ করবে। 

সবগুলো লক্ষ্য নির্ধারিত হতে হবে সময়সীমাসহ। 

এই লেখাটার শেষ করছি প্রথমে বলা কথাটা দিয়েই, এখনই খাতা-কলম নিয়ে বসে যাও। নিজের লক্ষ্যটা ডেডলাইন সহ লিখে ফেলো। করে ফেলো কর্মপরিকল্পনা; শুরু করে দাও সে মোতাবেক কাজ করা। আর, তাহলেই সেগুলো অর্জন করাটা সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.