Header Ads

Header ADS

আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রা | পর্ব ৬

যে কোনো সফলতার পেছনে একাধিক গল্প থাকে। আজকে দুনিয়ায় আমরা যত সফল মানুষ দেখছি, তাদের সবারই এরকম কিছু গল্প আছে। ব্যর্থতার গল্প। বাল্ব আবিষ্কারক থমাস এডিসনের নাম শোনে নি এমন মানুষ মেলা ভার। আজকে আমাদের প্রত্যেকের ঘরে রাত হলে যে আলো জ্বলে উঠে, এর পেছনে এই লোকটির অবদান আছে। গুগল করলে জানা যায়, এই লোকটি একটি বাল্ব তৈরি করতে গিয়ে একবার দুইবার নয়, ১০০০ বার ভুল করেছে। তবুও সে থেমে যায় নি।

একবার এই থমাস এডিসনকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, '১০০০ বার ব্যর্থ হবার পর আপনার কেমন লেগেছিল?' থমাস বলেছিলেন, 'আমি ১০০০ বার ব্যর্থ হয়নি, বরং আমার ১০০০ পদক্ষেপের ফলাফল আজকের এই বাল্ব।'
থমাস তার ব্যর্থতাকে পদক্ষেপ হিসেবে নিয়েছিলেন। এই পদক্ষেপ তাকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। যতবার তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, ততবার তিনি নতুন কিছু শিখেছেন। আর এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেছেন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে।

ইচ্ছাশক্তি, এই ইচ্ছাশক্তি বড়ই মূল্যবান। আমরা বার বার একটি হাদীস শুনি, إنما الأعمال بالنيات 'নিয়তের ওপর কর্মের ফলাফল নির্ভর করে।' হ্যাঁ, এই নিয়ত অত্যন্ত দামী। স্রেফ ভাল কাজের নিয়তের দ্বারা আপনার আমলনামায় সাওয়াব লেখা হয়। আমাদের দায়িত্ব এটাই, আমরা সঠিক নিয়ত করব এবং কাজে নেমে পড়ব। ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেবো। ভুল হবেই, বরং দেখতে হবে, এই ভুল থেকে কে কতটুকু শিক্ষা নিচ্ছি।

এ জন্য ঘুরে দাঁড়াও বইয়ের ৫ম অধ্যায় 'রিল্যাপস্‌' নিয়ে। আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রায় অত্যন্ত কমন একটি শব্দ। পর্ন-আসক্তি থেকে মুক্তির যাত্রায় কখনো কখনো কোনো উপদেশ আপনার অন্তরে রেখাপাত নাও করতে পারে। অথচ প্রথম থেকেই আপনি নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখছিলেন। আসক্তি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে চেয়েছিলেন। আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে: এ যাত্রায় রিল্যাপস্ হওয়াটা স্বাভাবিক। রিপ্যালস্ এর পর নিজেকে সামলে নেওয়াটাই মুক্তিলাভের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আসুন এক নজরে পড়ে নিই কেন রিল্যাপস হয়-

(১) গা ভাসিয়ে দেওয়া।
(২) আনলিমিটেড ইন্টারনেট ডাটা ও একের অধিক ইন্টারনেট ডিভাইস।
(৩) পর্নের কথা মনে করিয়ে দেয় এমন বস্তু বা মানুষ।
(৪) ‘অল্প একটু দেখব’ ভাবা।
(৫) আত্মসমর্থন।

রিল্যাপস্ হয়ে গেছে। আপনি প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছেন। কী থেকে কী হয়ে গেল। এতদিন ভালই ছিলেন। ইত্যাদি ভাবছেন। আপনার ক্ষেত্রে যদি এরকমটাই হয়, তাহলে ঝটপট ৭টি পয়েন্ট নোট করে রাখুন। রিল্যাপস্‌ হয়ে গেলেই ৭টি কাজ করবেন:

১) বসে থাকবেন না। সাথে সাথেই কিছু ভালো কাজ করে ফেলুন। সামনে এগিয়ে যান।
২) ট্রিগারগুলো খুঁজে বের করুন এবং এড়িয়ে চলুন।
৩) বিশ্বাসযোগ্য কোনো বন্ধুকে ফোন করুন। কারণ, একা একা আসক্তির বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া বেশ কঠিন। বাহিরে বের হয়ে যান, কাছে কোথাও ঘুরে আসুন।
৪) কখনও ভাববেন না যে, এটাই জীবনের শেষ রিল্যাপস্। কারণ, এ ধরনের চিন্তা করতে করতে আপনি একসময় গা ভাসিয়ে দিতে পারেন। সাবধানতা অবলম্বন না করার কারণে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া মুহূর্তের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এর চেয়ে বরং এমন এ জীবনধারার সাথে অভ্যস্ত হন যেখানে পর্ন ও হস্তমৈথুনের কোনো অস্তিত্ব নেই।
৫) আবার শুরু করুন, এখন যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন। বার বার চেষ্টা করার মাঝে অনুতাপের কিছু নেই।
৬) পর্ন ফিল্টারিং সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করুন। সবকিছু কিন্তু এমনি এমনি হয়ে যাবে না। আপনাকে বেশ সিরিয়াস থাকতে হবে। আর এই সিরিয়াসনেস প্রকাশ পাবে পর্ন ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করার মাধ্যমে।
৭) আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করুন, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, আপনার অন্তরের মালিক, তাঁর কাছে সাহায্য চান, ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এ ছাড়াও নিজের সাথে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন—পর্ন দেখতে ও হস্তমৈথুন করতে বাধ্য করে এমন সবকিছু থেকে আপনি বিরত থাকবেন।

রিল্যাপসের পর আপনি যখন নিজেকে কিছুটা সামলে নিতে পারবেন, তখন একটু ধীরে আগাতে থাকুন। কারণ, রিল্যাপসের ফলে কয়েকদিন আপনি বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। এমন অবস্থায় আপনার উচিত একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার শুরু করা। প্রথম থেকে যে টিপসগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো আবার অনুসরণ করা। এ ছাড়াও নিজেকে পরবর্তী স্টেশন ‘পথ পরিবর্তন’ এর জন্য প্রস্তুত করুন। ইন শা আল্লাহ আগামী পর্বে এ ব্যাপারে আমরা জানবো।
 ©ওয়াফী পাবলিকেশন 

No comments

Powered by Blogger.