Header Ads

Header ADS

পর্দা, নন- মাহরাম, ফ্রি মিক্সিং, দ্বীন ইসলাম এবং আমরা...

পর্দা, নন- মাহরাম, ফ্রি মিক্সিং, দ্বীন ইসলাম এবং আমরা...
.
এই ইস্যুতে লিখতে সত্যি বলতে আমার ভয় লাগে। এমন আহামরি দ্বীনদার তো নিজে নই!  কিন্তু হঠাৎ কয়েকটা ঘটনায় এই বিষয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে হল। আল্লাহ আমার সীমাবদ্ধতাগুলো ক্ষমা করে এই লেখায় নিয়্যতের বিশুদ্ধতা দান করুন। আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বিরত থেকে আমার মুসলিম ভাই বোনদের জন্য বরকত প্রার্থনা করছি।
এক ছোট ভাই বলল, “অমুক দীনী বোন following you”  এই নোটিফিকেশন দেখলে সে ঈমানী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়, সে ফিতনা অনুভব করে!  আলহামদুলিল্লাহ! কিছু মুসলিম থাকে যারা নিজেদের ঈমান নিয়ে খুব বেশী ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। সবসময় নিজেকে ফিতনার মধ্যে মনে করে। এবং এর ফলে তারা মানসিক হীনমন্যতায় ভোগে তারা বুঝি খুব খারাপ মুসলিম!! সুবাহানাল্লাহ! এমন অনেক সাহাবী ছিলেন যারা নিজেদের মুনাফিক মনে করতেন, ভাবতেন তারা বুঝি মুনাফিক হয়ে গেছেন!! It’s a sign of   তাকওয়া।  it’s a sign that you fear Allah Subahana wa tayala! আলহামদুলিল্লাহ্‌!
বাংলাদেশের মত একটা দেশে যেখানে ৯০% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামটা স্রেফ কিছু আচার অনুষ্ঠান যেখানে নারী পুরুষের মধ্যে যে একটা পর্দার বিধান আছে এবং এই বিষয়ে যে স্ট্রিক্ট  কথাবার্তা আছে কুরআন এবং হাদিসে সে শিক্ষা আমাদের সন্তানদের দেওয়া হয়না। দেওয়ার কথাও না যেখানে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কোন কেয়ার নেই! পরিবার, আত্মীয়- স্বজনদের মধ্যে ইসলামী চর্চার অভাব, কো- এডুকেশন, ছেলেমেয়েদের “বন্ধু আড্ডা গান” এর অবাধ স্বাধীনতা,  জাফর ইকবাল গঙদের সেক্যুলার মগজ ধোলাই,  নোংরা সংস্কৃতি, সস্তা গল্প উপন্যাস, মুভি এসবের পর্দাহীন জীবনের আহবান সবকিছু মিলিয়ে সহজেই অনুমেয় আমরা, আপনারা, আপনাদের সন্তানেরা কিভাবে বড় হচ্ছে। কিভাবে আমরা আশা করব যে ছেলে মেয়েরা নারী পুরুষের মধ্যে পর্দা, নন মাহরামের সাথে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রেখে চলা এসবের প্রতি সচেতন হবে? এটা আমরা আশা করতে পারি না বলেই আমরা এটাও আশা করতে পারছি না যে সমাজ থেকে অশ্লীলতা, ফ্রি মিক্সিং এর মত বিষয়গুলো  দ্রবীভূত হবে। কিন্তু আমরা এটাও জানি সবাই যখন স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দেয় তখন স্রোতের বিপরীতে কিছু মানুষ থাকে। কিছু মানুষ অবশ্যই থাকে যারা ইসলামটাকে কয়টা আচার অনুষ্ঠান হিসেবে নয় একটি জীবন বিধান হিসেবে দেখে! এটাই ইসলাম আর এরাই মুসলিম যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ইসলাম দিয়ে  judge  করে। এটাই ইসলাম যেখানে মুসলিমরা নিজেদের প্রবৃত্তি আর কামনা বাসনাগুলো নিয়ে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করবে এবং নিজেকে মহান আল্লাহর দরবারে সঁপে দেবে। এরাই তো মুসলিম যারা জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে খোঁজ করবে ইসলাম কি বলে, ইসলাম কি শেখায়, ইসলামের সমাধান কি!
ইসলামে পর্দার কথা আসলেই আমরা চোখ বন্ধ করে  মনে করি এক টুকরো কালো কাপড়। তার চেয়েও বড় কথা পর্দা প্রসঙ্গ আসলেই মেয়েদের কথা ছাড়া ছেলেদের প্রসঙ্গ উঠেই না, ব্যাপারটা এমন যেন ছেলেদের জন্য পর্দার কোন বিধান নেই। কিন্তু আমরা যদি কুরআন খুলে দেখি তাহলে দেখব মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে প্রথমেই বলেছেন ছেলেদের পর্দার কথা। আল্লাহ বলছেন,
“  মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন"। [সূরা নূরঃ ৩০]
আল্লাহ আমার আপনার মত গুনাহগার মুসলিমদের তো বটেই    মুমিনদের পর্যন্ত সতর্ক করে বলছেন তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে। সুবাহানাল্লাহ! তাহলে পর্দার কথা আসলে সবার মনোযোগ মেয়েদের দিকে ফেরানোর আগে চিন্তা করা উচিত আল্লাহর কাছে আমি কতটুকু সততার পরিচয় দিতে পেরেছি। তারপরই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন মেয়েদের পর্দার কথা। আল্লাহ বলছেন,
“(হে নবী), তুমি মুমেন নারীদেরকেও বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিন্মগামি করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমুহের হেফাজত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না বেড়ায়, তবে তারা (শরীরের) যে অংশ(এমনিই) খোলা থাকে(তার কথা আলাদা), তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, তাদের পিতা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর (আগের ঘরের) ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইর ছেলে, তাদের বোনের ছেলে, তাদের (সচরাচর মেলা মেশার) মহিলা, নিজেদের অধিকারভুক্ত সেবিকা দাসি,নিজেদের অধীনস্থ (এমন) পুরুষ যাদের (মহিলাদের কাছ থেকে) কোন কিছুই কামনা করার নেই, কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে কিছুই জানেনা- (এমন মানুষ ছাড়া তারা যেন) অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, (চলার সময়) জমিনের উপর তারা যেন এমনভাবে নিজেদের পা না রাখে যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছিল তা (পায়ের আওয়াজে) লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়; হে ঈমানদার ব্যক্তিরা,( ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য) তোমরা সবাই আল্লাহর দরবারে তাওবা কর, আশা করা যায় তোমরা নাজাত পেয়ে যাবে”। [আন নুরঃ ৩১]
আমরা আয়াত দুইটা লক্ষ্য করি ইনশাআল্লাহ। ছেলেদের ক্ষেত্রে অল্প কথায় শেষ হলেও মেয়েদের আয়াতে আরও কিছু  যোগ করা হয়েছে। দৃষ্টি অবনতের পাশাপাশি এসেছে সৌন্দর্য প্রকাশ করে না বেড়ানো, হিজাব, মাহরামদের স্পেসিপিক করে দিয়ে বাকি নন মাহরামদের সাথে পর্দা করা এমনকি বলা হয়েছে গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশ না করার জন্য জোরে পদচারনা না করে! সুবাহানাল্লাহ! আর কোথায় আছি আমরা। কোথায় আছে আমাদের বোনেরা!! এবার আমরা কুরআনের অন্য একটা আয়াতে দৃষ্টিপাত করি যেখানে আল্লাহ স্বয়ং নবী পত্নীদের সতর্ক করে বলেছেন,
“ হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে”। [সূরা আহযাবঃ ৩২]
এবার আমরা একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি নবী পত্নীদের জন্য আল্লাহর আদেশ যদি এরকম হয় তাহলে আমাদের অবস্থা কি হবে!! এসব হচ্ছে কুরআনের কথা, মহান আল্লাহর কথা। এখানে কোন “না মানে ইয়ে” কিংবা মন খুঁতখুঁত করার কিছুই নেই। কোন যুক্তি নেই নারী পুরুষের সম্পর্ককে সহজ মনে করার। “মুমিন মুমেনা একে অপরের সহযোগী” আয়াত দেখে যারা এইসব সুস্পষ্ট আয়াতগুলোকে হালকা ভেবে পর্দা ভেঙ্গে যাচ্ছেন, অপ্রয়োজনীয় কথা বলা কিংবা লুতুপুতু করে যাচ্ছেন তাদের বলব সেই আয়াতের তাফসীর খুলে দেখুন “সহযোগী” মানে কি বুঝানো হয়েছে। সেখানে কোনভাবেই আপনাকে টেম্পু চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি! কোনভাবেই আপনাকে শয়তানের জন্য ফিতনার দরোজা খুলে রাখার কথা বলা হয়নি। আমাদের ভাবটা এমন যেন শয়তানের সাথে আমরা চুক্তি করে রেখেছি যে শয়তান আমাদের পিছু নেবে না! দীনী বোনেরা ফেসবুকে ছবি আপলোড দেবে আর দীনী ভাইয়েরা সেখানে মাশাআল্লাহ, সুবাহানাল্লাহ কমেন্ট করে  সওয়াব হাসিল করবে (!!)! দীনী ভাইয়েরা ভাবুক ভাবুক স্ট্যাটাস হাঁকাবে আর দীনী বোনেরা সেখানে ভেংচি, চোখ মারা ইমুশনের জোয়ার বইয়ে দীনী ফাজলামো করবে!! কি জায়েজ?? ফেসবুকে উঁচু লেভেলের দীনী স্ট্যাটাস থাকা ভাইরাও তলে তলে ফেসবুক ইনবক্সে টেম্পু চালায় এটাও দেখি আর হিজাব, নিকাব এমনকি তীব্র গরমে হাত মোজা পরার প্রশংসনীয় মুমেন নারীরাও টেম্পু চালিয়ে দীনী ভাইদের মনে ঝড় তুলেছে এমনও আছে!
আরেকটা কথা হল ব্যাপারটা এমন না যে বিয়ে করে, বাচ্চা কাচ্চার বাবা মা হয়ে যাওয়া মানে সব কিছু ওকে হয়ে গেল। কিছু মানুষের আচরন দেখে মনে হয় সূরা নূরের ৩০ আর ৩১ নং  আর সূরা আহযাবের ৩২ নং আয়াতগুলো যেন শুধু অবিবাহিতদের জন্য। তারা কি ভাবতে শুরু করেছে তাদের জন্য আয়াতগুলো invalid হয়ে গেছে? দ্বীনের বুঝ আর ঈমান এত বেশী হয়ে গেছে যে যাবতীয় ফিতনাকে damn care  ভাব দেখাচ্ছে?? আল্লাহ আক্বল দান করুন। আল্লাহ দ্বীনের  বুঝ বাড়িয়ে দিন। আমীন।
"মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে। (মেয়েদের প্রতি)" [সুরা নিসাঃ ২৮]
কথা হচ্ছে তাদের সাথে যারা চান দ্বীন ইসলামকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে। আলহামদুলিল্লাহ কিছু মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে যাদের ঈমান সবসময় আমাকে  অনুপ্রেরণা দেয়। যে বিষয়গুলো আমার কাছে একসময় খুবই তুচ্ছ মনে হত কিংবা মনেই হত না এসবের কোন গুরুত্ব আছে দ্বীনের এমন বিষয়েও কিছু কিছু মানুষের সিরিয়াসনেস আমাকে প্রায়ই ঈমানের তাগিদ দেয়। নিজের ভুলগুলো তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়। নিজের দ্বীনকে তখনই অর্থহীন মনে হয়! আল্লাহর দ্বীনকে যারা সিরিয়াসলি নেন আমার ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতা বলে তারা অবশ্যই একদিন নারীদের সাথে ফ্রি মিক্সিং, পর্দা maintain না করা এসবের ভয়াবহতা বুঝতে পারে। একদিন কুরআনের আয়াতগুলো তাদেরকে ভাবায় যারা সত্যিই মনে করে কুরআনের এক একটা আয়াত এক একটা উপদেশ, সমাধান, আদেশ আর নিষেধ মহান আল্লাহর পক্ষ্য থেকে। যে আদেশ নিষেধের বাধ্যতা আর অবাধ্যতার মাঝেই একজন সত্যিকারের মুসলিম আর নামমাত্র মুসলিমের পার্থক্য! আপনার ভূরি ভূরি জ্ঞান নয় আল্লাহ দেখবেন আপনার action. আপনার ডেটিকেশন আপনার দ্বীনের প্রতি। আপনার সিরিয়াসনেস প্রতিটি আয়াত আত্মস্থ করায়!
সে সময়টা আসে যখন দ্বীনের পথে পথচলা আপনাকে শিখিয়ে দেবে এসব মেয়ে প্রীতি, টেম্পু চালানো, ফ্রি মিক্সিং, নন মাহরামকে তোড়াই কেয়ার করে অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা এসব কত তুচ্ছ। এসব দ্বীনের পথে কাজ করাকে ব্যাহত করে,  নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা নষ্ট করে, শয়তানকে মনের ভেতর অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেয়। ইসলামের সবগুলো ইশ্যুর মত এই ইস্যুটাও উপলব্ধির। দ্বীনের জন্য এগুলো ক্ষতিকর এবং শয়তানের জন্য ফিতনার দুয়ার খুলে দেওয়ার মত, এটা বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ হয়ত সবাইকে দেন না। এগুলো ফিতনা মনে করার মত অন্তরের বুঝ হয়ত সবার ভেতর থাকেনা! আল্লাহর হেদায়াত কারো কাছে বলে কয়ে আসেনা। একান্ত চেষ্টা, মহান রবের কাছে আকুতি আর শুদ্ধ নিয়্যতের মাধ্যমেই আমরা মহান আল্লাহর কাছে হেদায়াত আশা করতে পারি। ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করব আমাদের অন্তরে তিনি ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে গন্য করার তাক্বওয়াটুকু যেন দেন। আল্লাহ আমাদের অন্তরকে যেন শয়তানের জিম্মায় ছেড়ে না দেন। খুবই ক্ষুদ্র একটা জীবন, অল্প কিছু সময়। অর্থহীন কিছু ফ্যান্টাসি, রঙিন দুনিয়ার জাহেল ভাবাবেগ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শয়তানী সুড়সুড়িতে অযাচিত সময়ক্ষেপণ করে আমরা যেন আল্লাহর নিকট লজ্জিত না হই। দিনশেষে আখিরাতের জন্য কিছু মূল্যবান পাথেয় নিয়েই যেন মহান রবের কাছে ফিরে যেতে পারি ,আমীন।

লেখা: সাজিদ ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.