বিয়ে - স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বুক রিভিউ | মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
বিয়ের মতো অনবদ্য একটি আশীর্বাদ দুঃসহ অভিশাপে পরিণত হতে পারে যদি বিয়ের আগের ও পরের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা না হয়। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সাজানো দাম্পত্য জীবন শুধু স্বামী স্ত্রীর উপরেই নয়, বরং গোটা সমাজের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বয়ে আনে।
একটি সুস্থ -সুন্দর সমাজের ভিত্তি হলো পারিবারিক ব্যবস্থা। আর পারিবারিক জীবনের ভিত্তি হলো একটি সুস্থ -সুন্দর দাম্পত্য জীবন।
.
ইসলামে বিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ;একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে সম্পাদিত সবচেয়ে জীবনঘনিষ্ঠ একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। তাই নারী-পুরুষ দু'জনেরই ভালো করে বোঝা উচিত তারা যে চুক্তিটি করতে যাচ্ছেন সেটা কেন? কী তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কী তার তাৎপর্য?
.
বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে আল্লাহ তায়ালা সুকুন তথা প্রশান্তি লাভের কথা বলেছেন। তিনি আমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা তাদের সাথে প্রশান্তি খুঁজে পাই।
ভালোবাসা মূলত সৃষ্টি হয় সম্মানবোধ থেকে। আমরা এমন কাউকে ভালোবাসতে পারিনা যাকে আমরা সম্মান করিনা। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর সম্মানবোধ থাকতে হবে।
.
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন চারটি জিনিস দেখে কোন নারীকে বিয়ে করা হয়।এর মধ্যে দীনদারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষদের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং প্রথমেই দেখতে হবে আপনার সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী ইসলামের ন্যূনতম মৌলিক বিধিনিষেধ পালন করে কিনা। শুদ্ধ করে কোরআন তেলাওয়াত জানে কিনা। বিয়ের বয়সে উপনীত হয়েছে, অথচ সহিশুদ্ধ করে কুরআন তেলাওয়াত জানে না এটা তাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক বিষয়।
.
চরিত্র এবং চেহারা উভয়টি দেখেই বিয়ে করা উচিত, মেয়েদের জন্য পর্দা এবং ছেলেদের জন্য দাড়ি আবশ্যক। রুচিশীল এবং বুদ্ধিমতী কোন মেয়ে এমন পৌরুষহীন পুরুষকে বিয়ে করতে চাইবে না।যাকে দেখতে মেয়েদের মতো লাগে। বিষয়টি সত্যিই বিব্রতকর। চেহারা দেখতে বললাম, কারণ আপনি প্রতিদিন সকালে এই চেহারাটি দেখে দিন শুরু করবেন।
.
এমন কাউকে বিয়ে করবেন না, যে আল্লাহর কথাকে গুরুত্ব দেয় না। কারণ সে আপনার কথাকে মোটেই পাত্তা দিবে না। জীবনের কঠিন মুহূর্তে আল্লাহভীতিই সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আল্লাহভীতি না থাকাটাই একটা বিপদ বরং ভয়াবহ বিপদ। কারণ যেকোন বিরোধ মিমাংসায় আপনার শেষ আশ্রয়স্থল কুরআন-সুন্নাহ। এটাই যদি সে না মানে তাহলে আপনি কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হবেন।
.
এমন কাউকে বিয়ে করুন যাকে দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। যার থেকে আপনি শিখবেন। আপনিও তার মতো একজন হতে চাইবেন। জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনীর ব্যপারে যথেষ্ট খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ে করতে যাবেন না। বিয়ের আগে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং মাহরামের উপস্থিতিতে তার সঙ্গে কথা বলার অধিকার আছে। বিয়ের আগেই সবকিছু ভালোভাবে জেনে নিন।
.
একটা জিনিস আমরা যেন ভুলে না যাই, উপরে যা যা বলা হয়েছে সেগুলো সামনে রেখে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, অন্যের মধ্যে যে জিনিসগুলো খুঁজছি, সেগুলো আমার মধ্যে কতটুকু আছে? যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি আমি কি তার ভালো জীবনসঙ্গী হতে পারবো? বিয়েকে গুরুত্বের সাথে নিন। সচেতন এবং আন্তরিক লোকেরাই সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করতে পারে। তাই আন্তরিকভাবে গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন! কেননা এটা আপনার জীবন! হ্যাঁ, আপনারই।
.
ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য মা-বাবার অবশ্যই পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত আপনার সন্তানের হাতে ছেড়ে দিন। তার অসন্তুষ্টি থাকা সত্ত্বেও জোর করে তাকে বিয়ে করিয়ে দিবেন না। কারণ সংসারটা আপনার নয়, বরং আপনার সন্তানের। আপনার একটু পছন্দের জন্য তার জীবনকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিবেন না। প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে বলেই তো তাকে বিয়ে দিচ্ছেন। তাই তাকে ভালোমন্দ পরামর্শ দিতে পারেন। কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেন না।
.
একজন পুরুষের মূল দায়িত্ব উপার্জন করা, পরিবারের সদস্যদের আর্থিক দায়িত্ব পালন করা। অন্যদিকে একজন নারীর মূল দায়িত্ব ঘরকে একটা সুন্দর সুখের নীড়ে পরিণত করা। এবং সন্তানদের লালনপালন দিকে খেয়াল রাখা।
.
সংসার সুখের করতে টাকা পয়সার গুরুত্ব কম। (লেখক এখানে বলেছেন একেবারে কোন গুরুত্ব নেই।) স্বচ্ছলতা কিংবা অস্বচ্ছতা উভয়ই সাংসারিক বন্ধন দৃঢ় হওয়া কিংবা ভাঙনের কারণ হতে পারে। মূলত পারস্পরিক সম্মান,শ্রদ্ধাবোধ ও সচেতনতাই আসল জিনিস। আর এগুলো হচ্ছে চরিত্র, ধর্মানুরাগ, শিক্ষা, চালচলন ও আচরণের মহত্ত্ব, আত্মবিশ্বাস, আস্থাশীলতা,সম্মান, মমতা, পরস্পরকে খুশি করার অকৃত্রিম ইচ্ছা, এবং নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার মহৎ গুণের ফল। এসব গুণ কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না বা এগুলো অর্জনের জন্য আমাদের টাকার প্রয়োজনও নেই।
--
বই: বিয়ে
লেখক : মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
ভাষান্তর : আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
No comments