দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করার বিধান
দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করার বিধান - সাজ্জাদ সালাদীন
প্রকাশ থাকে যে, এখানে পর পর ৩টি হাদীস সহীহ্ সানাদে
ইমাম বুখারী (রহ.) স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। দাঁড়িয়ে পানি পান করার বৈধতার
পক্ষে উক্ত ৩টি হাদীস দেখা যাচ্ছে। আমাদের এদেশে কাউকে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে
দেখলে তার সম্পর্কে ভীষণ খারাপ ধারণা পোষণ করা হয়, যা
একেবারেই অমূলক, অযৌক্তিক বটে। রসূল ﷺ এবং ‘আলী দাঁড়িয়ে পানি পান
করেছিলেন বলে সহীহ্ সানাদে এখানে যে ৩টি হাদীসের উল্লেখ রয়েছে তাতে সত্যই প্রমাণিত
হয় যে, দাঁড়িয়ে পানি পান করা দূষণীয়
নয়।
হাদীস সমূহ হলো :
أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا مِسْعَرٌ عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ مَيْسَرَةَ عَنْ النَّزَّالِ قَالَ أَتٰى عَلِيٌّ عَلٰى بَابِ الرَّحَبَةِ فَشَرِبَ قَائِمًا فَقَالَ إِنَّ نَاسًا يَكْرَه“ أَحَدُهُمْ أَنْ يَشْرَبَ وَهُوَ قَائِمٌ وَإِنِّي رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فَعَلْتُ.
নাযযাল (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কূফা মসজিদের ফটকে ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট পানি আনা হলে তিনি দাঁড়িয়ে তা পান করলেন। এরপর তিনি
বললেনঃ লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তোমরা আমাকে যেমনভাবে পান করতে দেখলে তিনিও তেমনি করেছেন। [সহীহ বুখারী,
হা : ৫৬১৫]
آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ مَيْسَرَةَ سَمِعْتُ النَّزَّالَ بْنَ سَبْرَةَ يُحَدِّثُ عَنْ عَلِيٍّ أَنَّه“ صَلّٰى الظُّهْرَ ثُمَّ قَعَدَ فِي حَوَائِجِ النَّاسِ فِي رَحَبَةِ الْكُوفَةِ حَتّٰى حَضَرَتْ صَلاَةُ الْعَصْرِ ثُمَّ أُتِيَ بِمَاءٍ فَشَرِبَ وَغَسَلَ وَجْهَه“ وَيَدَيْهِ وَذَكَرَ رَأْسَه“ وَرِجْلَيْهِ ثُمَّ قَامَ فَشَرِبَ فَضْلَه“ وَهُوَ قَائِمٌ ثُمَّ قَالَ إِنَّ نَاسًا يَكْرَهُونَ الشُّرْبَ قِيَامًا وَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُ.
নাযযাল ইবনু সাবরা হতে বর্ণিত। তিনি ‘আলী
ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি
যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি মানুষের নানান প্রয়োজনে কূফা মসজিদের চত্বরে
বসে পড়লেন। অবশেষে ‘আসরের সালাত আদায়ের সময় হয়ে গেল। তখন
পানি আনা হল। তিনি পানি পান করলেন এবং নিজের মুখমন্ডল ও উভয় হাত ধৌত করলেন।
বর্ণনাকারী আদাম এখানে তাঁর মাথা ও দু’ পায়ের কথা উল্লেখ
করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন এরপর ‘আলী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং
তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় অযূর উদ্বৃত্ত পানি পান করে নিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ লোকজন
দাঁড়িয়ে পান করাকে ঘৃণা করে, অথচ আমি যেমন করেছি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তেমন করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা : ৫৬১৬]
أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَاصِمٍ الأَحْوَلِ عَنْ الشَّعْبِيِّ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ شَرِبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا مِنْ زَمْزَمَ.
আবূ নু‘আইম (রহ.) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা :
৫৬১৭]
সুতরাং বলা যায় যে, রসূল (ﷺ)-এর ‘আমালকে অস্বীকার করা
শয়তানের প্ররোচনা ব্যতীত আর কিছুই নয়। যে কোন অবস্থায়ই রসূল (ﷺ) এর চেয়ে বেশী তাক্বওয়া ও পরহেজগারী দেখানো
নিঃসন্দেহে ভন্ডামি। অতএব উপরোক্ত আলোচনা হতে শিক্ষণীয়
এই যে,
রসূল (ﷺ)-এর অনুগমন অনুসরণ করার মধ্যেই পরহেজগারী সীমাবদ্ধ আছে বলে মানতে
হবে।
No comments