দোয়া কবুল না হওয়ার কারন গুলো কি কি?
দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ গুলো কি কি? কি করলে আমাদের সব দোয়া কবুল হবে? দোয়া কবুলের ১৯ টি সময় বা স্থান যখন দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়ঃ
===============================
(১) হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র
--------------------------------------------
কেউ হারাম কোনো খাবার খেলে বা কারো খাবার হারাম টাকায় কেনা হলে, পোশাক হারাম বা হারাম টাকায় কেনা হলে আল্লাহ ঐ অবস্থায় তার দুয়া কবুল করেন না।
-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদেরকে। আল্লাহ বলেছেন, “হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।” আর আল্লাহ (মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য) করে বলেছেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা হতে আহার কর।” একথা বলার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধূসরিত করেছে। অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দুয়া করে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কিভাবে তার দুয়া কবুল করা হবে?”
📚 (সহীহ মুসলিম)
(২) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করাঃ
মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহবান না করলে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না বললে অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগে অবহেলা করলে তার দুয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। আর যদি তোমরা তা না করো, আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দুয়া করবে, কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না।”
📚 (তিরমিজী)
(৩) দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা
----------------------------------------------
অনেকে কিছুদিন দোয়া করার পরে আল্লাহর বিশেষ কোনো হেকমত অনুযায়ী দোয়া কবুল হতে দেরী হলে তাড়াহুড়া করে বা হতাশ হয়ে পড়ে। অভিযোগ করা শুরু করে দেয়, কই এতো দোয়া করলাম, আল্লাহ দোয়া কবুল করেন না। আল্লাহ মনে হয় আমাদের কথা শুনেন না। (নাউযুবিল্লাহ! নাফরমানী ও কুফুরী কথা)। এমন কথা বলার শাস্তিস্বরূপ সত্যিই আল্লাহ তার দোয়া আর কবুল করেন না। এইজন্য ধৈর্য ধরে দোয়া করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জাকারিয়া (আঃ) অনেক বছর দোয়া করার পরে তাঁর দোয়া কবুল হয়েছিলো, তিনি পুত্র সন্তান পেয়েছিলেন একেবারে বৃদ্ধ বয়সে। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী, আর আমরা নিশ্চয়ই তাঁর থেকে উত্তম না। এইজন্য অবস্থা যাইহোক, ধৈর্য ধরতে হবে ও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর কাছে আশা রেখে দোয়া করে যেতে হবে।
-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল করা হয়, যদি সে দোয়াতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসুল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দুয়াতে তাড়াহুড়া হল, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দোয়া করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়।”
📚 (সহীহ মুসলিম)
-
(৪) দোয়াতে এ ধরনের তাড়াহুড়া করা আল্লাহ অপছন্দ করেন।
-------------------------------------------
যেমন তিঁনি বলেছেন, “আর মানুষ অকল্যাণের দোয়া করে, যেভাবে সে কল্যাণের দোয়া করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়।”
📚 (আল ইসরাঃ ১১)
-
তবে দোয়ার ভিতরে এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দোয়াতে তাড়াহুড়া করার অর্থ হল, দোয়া করে কেন এখনো দোয়া কবুল হলো না, এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়া।
(৫) অন্তরের উদাসীনতাঃ
-----------------------------------------
মুখে দোয়া করে আর যদি দোয়ার প্রতি অন্তর উদাসীন থাকে, তাহলে দোয়া কবুল হয় না। অর্থাৎ যে দোয়া করে সে শুধু মুখে মুখে দোয়া করে, কিন্তু দোয়া কবুল হবে এমন দৃঢ় আশা, বিশ্বাস বা আল্লাহর প্রতি আস্থা নাই (নাউযুবিল্লাহ)! যেমন হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দোয়া কবুল হবে এই দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা দোয়া করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না।”
📚 (তিরমিজী, হাকেম, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ৫৯৪)
-
অতএব দোয়ায় যা কিছু বলা হবে, তার প্রতি অন্তরের একনিষ্ঠ ভাব থাকতে হবে। মুখে যা বলা হল, মন তার কিছুই বুঝল না। আবার অন্তর বুঝল ঠিকই, কিন্তু তার কথার প্রতি একাগ্রতা ছিল না, মনে ছিল অন্য চিন্তা-ভাবনা। তাহলে এ দোয়াকে বলা হবে উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা। যা আল্লাহ কবুল করেন না।
(৬) ব্যক্তিত্বের এক বিশেষ ধরনের দুর্বলতাঃ
কিছু চারিত্রিক ত্রুটির কারণেও দোয়া কবুল করা হয়না। যেমন
---------------- ----------------------
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দুয়া কবুল করা হয় না।
❏ যে ব্যক্তির অধীনে দুশ্চরিত্রা নারী আছে কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না।
❏ যে ব্যক্তি অন্য লোকের কাছে তার পাওনা আছে কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখেনি।
❏ যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয় অথচ আল্লাহ বলেন, “তোমরা নির্বোধ লোকদেরকে তোমাদের সম্পদ দিও না।”
📚 (হাকেম ও তাহাবী, হাদীস সহীহ, সহীহুল জামিঃ ৩০৭৫)
#কি_করলে_আপনার_সব_দোয়া_কবুল_হবে?
____________________________________
দুনিয়া বা আখিরাতের কোন চাওয়া যখন আমার কাছে জরুরী মনে হয় তখন রাসুল (সাঃ)-এর শেখানো কিছু কৌশল অবলম্বন করি এতেই আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা আমার ফরিয়াদ শুনেন বলে প্রমান পাই অন্তত দুনিয়াবি বিষয়ে আর আখিরাতের ফলাফল তো আমরা মিলিয়ে দেখতে পারবো পরকালে ইন শা আল্লাহ যখন আমাদের প্রতিফল দেওয়া হবে, কিছু কৌশল সবার সাথে শেয়ার করছি ইন শা আল্লাহ।
(১) একজন সামান্য মানুষের কাছে ৫-৭বার চাইলে সেও না বলতে লজ্জা পায় আর আমার মহান রব যিনি সবচেয়ে বড় দাতা তার কাছে চাইবো আর তিনি ফিরিয়ে দিবেন এটা হতে পারে না এমন বিশ্বাস রেখে দোয়া চালিয়ে যাওয়া-
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”(সহিহ বুখারী- ৭৪০৫, সহিহ মুসলিম- ৪৬৭৫)
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া কর।”(সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে- ২৪৫ হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন)
তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।
(২) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া করা-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ ফেরত দেয়া হয় না। সুতরাং তোমরা দুআ কর। (তিরমিজী ও আহমদ) অর্থাৎ আজান হওয়ার পড় মসজিদে সলাত আরম্ভ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
(৩) রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করা-
প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই দোয়া কবুল করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে নিচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (মুসলিম)
(৪) সিয়াম রেখে দোয়া করা, পিতামাতার কাছে দোয়া চাওয়া, কোথাও সফরে গেলে মুসাফির অবস্থায় দোয়া করা বা কোন মুসাফির থেকে দোয়া চাওয়া-
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর কাছ থেকে) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)
.
(৫) অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করা বা তাদের থেকে দোয়া চাওয়া-
রাসুল (সাঃ) বলেন- কোন মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য খাছ মনে দুয়া করলে দুয়া কবুল হয়। সেখানে একজন ফিরিশতা নিযুক্ত থাকেন। যখনই ঐ ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুয়া করে তক্ষণই ঐ ফিরিশতা “আমীন” “আমীন” বলেন। এবং বলেন- তোমার জন্যও অনুরূপ হোক। (মুসলিম, মিশকাতঃ ২২২৮, দোয়া অধ্যায়, অধ্যায়-৯)
#সুতরাং দেখা যাচ্ছে আপনি অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য যা যা দোয়া করবেন আপনাকেও আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা তাই তাই দিবেন ইন শা আল্লাহ কিংবা আপনার অনুপস্থিতিতে কেও আপনার জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল করে নেওয়া হবে।
(৬) দুই হাত তুলে চাওয়া-
রাসুল (সাঃ) বলেন- আল্লাহ্ খুব লজ্জাশীল, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যখন আল্লাহর নিকট দু হাত তুলে কিছু চায়। তখন সেটা যদি তার জন্য কল্যাণকর হয় তবে আল্লাহ্ তা তাকে দেন, আর যদি তা তার জন্য কল্যাণকর না হয় তবে আল্লাহ্ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান, ফলে তাকে কিছু না কিছু দিয়েই থাকেন। (আবু দাউদ)
তাই বুঝা গেল হাত তুলে দুয়া করা অতি লাভজনক, হাত তুলে দুয়া করলে কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই।
এটা দিনে রাতে যে কোন সময় করা যাবে, হাদিসে কোন সময়কে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়নি আবার সবার সাথে সম্মিলিতভাবেও করতে বলা হয়নি তাই যে কোন সময় একাকি হাত তুলে নিজের চাওয়াটা আল্লাহর কাছে চেয়ে নিবেন।
(৭) সেজদায় গিয়ে চাওয়া-
রাসুল (সাঃ) বলেন- সিজদার সময় বান্দা তার রবের সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব ঐ সময় তোমরা সাধ্যমত বেশি বেশি দুয়া কর। (মুসলিম, মিশকাতঃ ৮৯৪,অনুচ্ছেদ-১৪)
(যে জিনিষটা আপনার চাওয়া প্রয়োজন তা যদি আরবিতে চাইতে পারেন তাহলে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর আরবিতে চাওয়াই উত্তম আর আরবিতে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর নিজের ভাষাতেও চাইতে পারবেন মর্মে উলামাদের ফতওয়া রয়েছে তাই কোন সমস্যা নেই ইন শা আল্লাহ)
(৮) ইসমে আজমসহ দো‘আ করা-
======================
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লা-হুল আহাদুছ ছামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল লাহূ কুফুওয়ান আহাদ’
(হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে প্রার্থনা করছি; কেননা তুমি আল্লাহ। তুমি একক ও মুখাপেক্ষীহীন। যিনি কাউকে জন্ম দেননি ও যিনি কারো থেকে জন্মিত নন এবং যাঁর সমতুল্য কেউ নেই)।
জনৈক ব্যক্তিকে এটা পড়তে শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে তাঁর ‘ইসমে আযম’ (মহান নাম) সহ দো‘আ করেছে। যে ব্যক্তি উক্ত নাম সহকারে প্রার্থনা করবে, তাকে তা দেওয়া হবে। আর যখন এর মাধ্যমে দো‘আ করা হবে, তা কবুল করা হবে’।
(ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৭ ‘দো‘আ’ অধ্যায়-৩৪, ‘আল্লাহর ইসমে আযম’ অনুচ্ছেদ-৯; আবুদাঊদ হা/১৪৯৩; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৮২-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
অর্থাৎ এই দোয়া পড়ার পর নিজের চাহিদা আল্লাহর কাছে জানাবে এতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা তার দোয়া কবুল করে নিবেন ইন শা আল্লাহ।
আমরা দুনিয়াবি কোন কাজ কর্মে সফল হওয়ার জন্য যত উপায় উপকরন থাকে প্রায় সবটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করি এক্ষেত্রেও যদি আমরা সব রকমের চেষ্টা প্রচেষ্টা কাজে লাগাই আর হাল ছেড়ে না দিই তবে আশা করা যায় আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা আমাদের দুনিয়া আখিরাতের সব দোয়াই কবুল করে নিবেন ইন শা আল্লাহ আর হাল ছেড়ে দিলে কিন্তু আল্লাহ সুবহানু তা’লা দোয়া কবুল করেন না
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল করা হয়, যদি সে দোয়াতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসুল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দুয়াতে তাড়াহুড়া হল, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দোয়া করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়।” (সহীহ মুসলিম)
#দোয়া_কবুলের_১৯টি_সময়_যখন_দোয়া_করলেদোয়া_কবুল_হয়ঃ
.
.
১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
.
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)
.
২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জোবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)
.
৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ
.
মক্কা কিংবা মদীনার নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজ শুরুর আগে হাত তুলে দোয়া করতে। এ সময়টা দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)
.
৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ
.
জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে।
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাঘরিব পর্যন্ত সময়টা।
৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ
.
জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)।
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।
.
৬। সিজদাহর সময়েঃ
.
আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ
.
উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ বুখারী)
.
৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ
.
আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।
৯। কদরের রাতেঃ
.
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,
“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।
তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি?
কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।
.
১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ
.
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)
.
১১। আযানের সময়ঃ
.
পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়।
১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ
.
মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)
.
১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)
.
১৪। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)
.
১৫। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
.
১৬। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলেঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)
.
১৭। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)
.
১৮। রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)
.
১৯। অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়াঃ
.
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (মুসলিম)
No comments