বিয়েতে ভরসা রাখুন একমাত্র আল্লাহর উপর-১
আমি যখন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই, তখন যেই জব করতাম, সেটা ছিল আমার প্রথম জব আর নামমাত্র বেতনের। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যেই মূলত সেই জব করতাম, পরবর্তীতে নানা কারণে সেখানে অনেক দিন ছিলাম।
তো বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আল্লাহ্ যখন একজন পাত্রী মিলিয়ে দিলেন, ঠিক তখনই লোকসানের মুখে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি লিকুইডেটেড হয়ে যায়। ফলাফল- আমি বেকার হয়ে যাই। একদিকে বিয়ের কথাবার্তা চলছে, অন্যদিকে আমি চাকরিহারা।
কোন এক অদ্ভুত কারণে আমি কাউকে এই বিষয়টা জানাই নি। হয়তো ঐ প্রেক্ষাপটে উচিত ছিল নতুন করে পুরো পরিস্থিতি বিবেচনা করা। কিন্তু আমার মনে একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আল্লাহ্ আমাকে অথৈ সাগরে ফেলবেন না। আমি তেমন ধার্মিক কেউ নই, কিন্তু আল্লাহ্র কিতাবের কিছু কথা আমার অন্তরে অনেক গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
সূরা নূরে আল্লাহ্ বলছেন,
“তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন।”
সূরা তালাকে আল্লাহ্ বলছেন,
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাঁর জন্য বের হবার পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাঁকে এমন জায়গা থেকে রিযিক দেবে, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।”
এই আয়াতগুলোর ওপরে আমি ওভার কনফিডেন্ট ছিলাম। পাশাপাশি আলিমদের বিভিন্ন লেকচারেও শুনেছিলাম যে বিয়ে করলে আল্লাহ্ রিযিকের ব্যবস্থা করে দেন। আমি আল্লাহ্র কালামের ওপর একরোখা বিশ্বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
অবশেষে আল্লাহ্র ওপর ভরসা করে বেকারবস্থাতেই বিয়ে করলাম। এক বিন্দুও দুশ্চিন্তা ছিল না যে সামনে কোন বিপদে পড়বো কিনা। একদম নির্ভার ছিলাম। বিশ্বাস করতাম অল্পদিনেই কিছু একটা ম্যানেজ করে ফেলবো, কীভাবে করবো কিচ্ছু জানি না। ওয়াল্লাহি এখন সেই মুহুর্তের কথা মনে হলে আঁতকে উঠি। কিন্তু কীসে আমাকে তখন এতটা নির্ভার করেছিলো জানি না।
কিন্তু আরশের মালিক আর-রাযযাকের কী অপার দয়া! আকদ এর পর যেদিন আমাদের ওয়ালিমা হলো, সেদিন সকালেই আমার কাছে একজন জবের প্রস্তাব করলেন। পরের দিন জয়েন করতে বললেন। আমি যদিও বিশ্বাস করতাম কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে, তবে সেটা যে এত জলদি আল্লাহ্ ব্যবস্থা করে দেবেন, তা কল্পনাতেও ছিল না।
আমার বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা ছাড়িয়ে যায় যখন একই দিন বিকেলে আরো এক জায়গায় জবের অফার পাই। তিনিও পরের দিন জয়েন করতে বললেন। একই দিনে দু’টি জব অফার পাওয়ার পর আমি নিজেই হতবাক হয়ে যাই আল্লাহ্র কালামের সত্যতা চোখের সামনে দেখে। ওয়ালিমার আগেই আল্লাহ্ আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দিলেন! সদাকাল্লাহু আল আলিউ আল আযিম ফি কালামিহি।
এতদিন পর এই কথা বলার কারণ নিজের সৌভাগ্য বোঝানো নয়। নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেদের স্মরণিকা দেয়া। কখনোই, কোন অবস্থাতেই আল্লাহ্র ওপর আস্থা হারানো আমাদের শোভা পায় না। তিনি আমাদের সবচাইতে বেশি ভালোবাসেন। সৃষ্টিকুলের কারোরই মানুষ জাতির দরকার ছিল না। আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র যাতে তাঁর ইবাদত করি। তাঁর প্রতি, তাঁর মহাগ্রন্থের প্রতিটি বাক্যের প্রতি বাস্তব জীবনে ইমান আনি। চলতে ফিরতে সেই ইমানের প্রতিচ্ছবি যাতে আমাদের জীবনে দেখাতে পারি।
আল্লাহ্র কালামে বিশ্বাসের মর্যাদা কতটুকু, সেটা আমরা বান্দারা অনেকেই হয়তো বা বুঝি না। কিন্তু এ যে আল্লাহ্র নিজের কথা! আল-কুর’আনের প্রতিটি কথা সত্য। আল্লাহ্র কৃত প্রতিটি ওয়াদা সত্য। শুধু প্রয়োজন বিশ্বাস। ইমান।
নিঃশর্ত ইমান।
@নাসা
No comments