মুহাম্মদ আহিল - আল্লাহর জন্য যাকে ভালোবাসি
"ধৈর্য্য থাকলে পড়া সামনে এগুবেই,
না থাকলে থেমে যান এখানেই"
.
যারা আমাকে চিনেন তারা জানেন যে, আমি সাধারণত কারও গল্প বা নিজের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে পোস্ট করি না। তবে আজ একজনের গল্প বলবো। তার গল্প ইতিহাসের পাতা থেকে আনা নয়, বলছি নিজের হৃদয় থেকে।
.
জালিমের কবলে থাকা এক ভাইয়ের গল্প বলবো আপনাদের, যার ঈমানী শক্তি জ্ঞান বল সবই আপনাকে অবাক ও আশ্চর্য করে দিবে, আর তার সাথে যোগাবে দারুন ঈমানী শক্তিও ইন শা আল্লাহ।
.
একটা আয়াত দিয়ে শুরু করা যাক,
.
وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ
.
‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। {সূরাহ আর-রূম, আয়াত : ২২}
.
ভাষা আল্লাহ তায়ালার দেওয়া একটা অনেক বড় কুদরত ও রহমত। কত মানুষের কত শত ভাষা। অনুমান করাও কষ্টসাধ্য।
আচ্ছা আমরা কতটা ভাষা পারি? ২-৩ টা? বা ধরে নেই ১০ টা, এর বেশী? হয়তো খুঁজে পাওয়াটাই বিরল।
.
আমি যার কথা বলছি, তার ভাষার জ্ঞান ছিল সহস্রের ঘরে। অর্থাৎ ৩০ টি ভাষার আঞ্চলিক ফর্ম সহ প্রায় ১০০০ ভাষা তার আয়ত্তে ছিল, আয়ত্তে ছিল হায়ারোগ্লিফিকের মতো সাংকেতিক চিহ্ন জ্ঞানও।
.
বিরল জ্ঞানের অধিকারী এই মানুষকে আল্লাহ দিয়েছিলেন, উত্তম সুরত, বিশাল ও সুঠাম দেহ, প্রচুর ইলম, প্রচুর সম্পদ এমনকি দিয়েছিলেন সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলার রহমতও।
.
বলছিলাম "মুহাম্মদ আহিল" এর কথা।
.
ফেইসবুকের জগতের আমাদের গোত্রের সিংহভাগ মানুষই তার সাথে পরিচিত। তার সাথে যারা দুই একবার কথা বলেছেন, তারা নিশ্চয়ই তার জ্ঞান সম্পর্কে সামান্য ধারণা পেয়েছেন। যদিও ব্যাক্তিবিশেষে তার ব্যাবহার ও আচরণ ভিন্ন ভিন্ন ছিল।
.
আহিল আমাকে সবসময় বলতো "আমি আহিল জাহিল" আর এই ওই প্রশ্ন করতো। দেখাতো যে সে আসোলে কিছুই জানে নাহ। অথচ তার জ্ঞান, ফিক্বহী ও ইতিহাসের পর্যালোচনা ছিল বর্তমানের অনেক আলেমদের থেকেও সমৃদ্ধ।
.
ঘন্টার পর ঘন্টা কথা, আড্ডা আর আলোচনার ফলে তার ইলম সম্পর্কে সামান্য ধারণা আগেই পেয়েছিলাম, তবে তার মাকাম সম্পর্কে ধারণা করতে পারিনি!
আমি বারবার বলতাম চলে যাই, আহিল বলতোঃ কই যাবি? কি করবি? আরেকটু থাক! মাঝে মাঝে ও বলতো, আজ আমি তোকে খুঁজি, একদিন তুই আমাকে খুঁজবি!
আহ! সেই দিনগুলো! যদি তার ইলম সম্পর্কে আমি আগেই জানতাম, তাহলে তাকে উস্তায বানিয়ে তার ছাত্র হয়ে ইলম অর্জন করতাম! ওর কথাই সঠিক হয়েছে, আজ সত্যিই আমি তাকে খুঁজি!
.
প্রকৃত জ্ঞানী ও নেককার'রা এমনই হয়! নিজেকে ঢেকে রাখতেই তারা ভালোবাসেন!
.
আল্লাহ অশেষ ক্ষমতার অধিকারী!
.
তিনি সব পারেন, তিনি পারেন ফিৎনা ও অকল্যানের ভূমিতে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের জন্ম দিতে। আর তাদের মাঝে জমা করে দিতে পারেন সাহস, শক্তি, জ্ঞান, যোগ্যতা এবং সংযমও।
.
বিশ্বের সবচেয়ে নাম করা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া একজনের কথা বলছি। এমন সব প্রতিষ্ঠানে সে সেরাদের সেরা ছিল যেখানে কেবল চান্স পাওয়াই মানুষের অনন্য স্বপ্ন থাকে! MIT থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ সবচেয়ে সেরা একজন স্টুডেন্ট ছিল সে!
.
তার কথা বলছি যাকে হাঁক দিতো Apple এবং Google এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। যে চাইলেই হয়তো অনায়াসে বিশাল প্রাসাদ গড়ে থাকতে পারতো, অথচ সে তা করেনি! বিশ্ব ভ্রমণ ও তার অর্থায়ন সম্পর্কে না হয় আজকে না বলাই থাক 🙂
.
আপনি আর আমি তার সমপর্যায়ে থাকলে কি করতাম? পারতাম কি নিজেকে সামাল দিতে? বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক তৈরী করার তার কোন দরকার ছিল না। মাত্র ১০ মাস থেকে ১ বছর ছিল তার এদেশীয় প্রোফাইলটি। এরইমধ্যে সে হয়ে গিয়েছিলো অনেকের অন্যতম ভালোবাসার একজন মানুষ। তার অ্যামেরিকার প্রোফাইলে ছিলো লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার! সেটা বন্ধ করে নতুন আইডি খুলে এদেশের কমিউনিটিতে প্রবেশের প্রয়োজনও তার ছিল না!
.
নিজেকে সবকিছু থেকে আড়াল করা এই মানুষটি বাস্তব জীবনে কোন সেলিব্রেটি থেকে কমও ছিল না, পোর্শে ল্যাম্বরঘিনি, ফ্যারারি, ক্যাডিলাক, রোলস রয়েস এগুলো তার গেরেজে পড়ে থাকতো। এমেরিকার মতো দেশের সাবেক আর্মি কর্ণেল ছিল তার বাবা। আছে দুবাইয়ের মতো শহরে হোটেল ইন্ড্রাস্টিও, কানাডায় আছে শপিং মলও।
.
এতো ধনী ও জ্ঞানী একটি যুবকের আচরণ আমাদের সাথে এমনই ছিল যে, মনেই হতো না এমন কারও সাথে কথা বলছি! বরং মনে হতো, আমাদের ক্লাসেরই কারও সাথে কথা হচ্ছে!
আসলে মু'মীন তো এমনই হয়! তাদের ক্লাস হলো ইসলাম! কে ধনী আর কে দরিদ্র সেটা তারা দেখে না!
.
দুনিয়ার কোন কিছুর কমতি ছিলো না তার। আজকে আমরা তার অনুপস্থিতি কে অনুভব করি। আমরা তাকে খুঁজি। বস্তুত সেও হয়তো আমাদেরকে মনে করছে দূরে জালিমের হাতে বন্দি থেকে। তার ৬.৫ ফুটের বিশাল দেহটার উপর হয়তো চলছে জালিমের নির্মম নির্যাতনের স্টিমরোলার।
.
সবচেয়ে জরুরি বিষয় তাকে যখন আটকানো হয় তখন সে কেবল দুইটি কথা বললেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হতো, সেগুলো তেমন কুফরি কথাও না। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে জায়েজও।
.
কিন্তু সে তো মুমিন বান্দা! সে কীভাবে কুফর উচ্চারণ করে? যদি সেটা জায়েজও হয় তবেও? তার জীবনের কলাম হয়তো ছিল নীচের আয়াতটি
.
أَمِ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَۖ فَٱللَّهُ هُوَ ٱلْوَلِىُّ وَهُوَ يُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ وَهُوَ
عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
তারা কি আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্ৰহণ করেছে, কিন্তু আল্লাহ্, অভিভাবক তো তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
.
সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কোথায়?
আমাদের ঈমান কোথায়?
আমাদের তাক্বওয়া কোথায়?
আমরা কি স্থির থাকতে পারবো! পারবো এমন পরিস্থিতে আমাদের ঈমান কে ধরে রাখতে?
.
আজ বারবার তার কথা গুলো মনে পড়ছে, মনে পড়ছে তার আবেগ মেশানো কন্ঠটাকে। আজ মন থেকে দুআ আসছে। আর বারবার নিজেকে বলছি দুনিয়ার সবচেয়ে ফিৎনাপূর্ণ এক ভূমিতে থাকা এক ভাইয়ের ভিতর নিম্নোক্ত আয়াতের উপর আমল আছে। অথচ আমরা খুব সহজেই ভুলে যাই!
.
لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُوا۟ مِنْهُمْ تُقَىٰةًۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلْمَصِيرُ
.
মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ না করে। আর যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ্র কোন সম্পর্ক থাকবেনা; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর । আর আল্লাহ্ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করেছেন । আর আল্লাহ্র দিকেই প্রত্যাবর্তন।
.
প্রিয় বন্ধু আমি জানি না তোমাকে কে কীভাবে জানতো, কিন্তু তোমার বিশেষত্ব বুঝতে পারতো অনেকেই!
জানি না তুমি কীভাবে কোন হালতে আছো! তবে এর মুক্তি নিটকেই।
আমি মনে করি, তোমাকে তো আল্লাহ প্রেরণ করেছেনই সবুজ পাখি হিসেবে জান্নাতে ঘুরে বেড়াবার জন্য, ইন শা আল্লাহ।
তুমি আমাদের হৃদয়ে স্থান করে আছো। তুমি প্রতিটা মুহুর্তে দুআ কুড়াচ্ছো।
.
নিশ্চয়ই আমরা আবারোও জান্নাতে মিলিত হবো, ইন শা আল্লাহ।
.
আল্লাহ তা'আলা আহিল কে দ্রুত মুক্তি দান করুক! আর আমাদের মুত্তাক্বী হওয়ার, সদা তাওহীদ ও তাক্বওয়ার উপর বিদ্যমান থাকার তৌফিক দান করুক। আমিন।
.
আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ
.
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۦنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُو۟لَٰٓئِكَ رَفِيقًا
.
আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলো সে নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ –যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন –তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী !
©সংগৃহীত
No comments