দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ও তাদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
ছাপাখানাঃ
--------------
বই পুস্তক বা কোন তথ্য ছাপার কথা বললেই আসে ছাপাখানার কথা। পূর্বে বিভিন্ন ফাইল, বই পুস্তক হাতে লিখে প্রকাশ করা হত। এটি সর্বপ্রথম ১৪৪০ সালে জন গুটারবারগ আবিষ্কার করেন। একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে তার এই আবিষ্কার। যদিও প্রাথমিক দিকে এর গঠন আজকের মত ছিল না। তবে এশিয়াতে প্রথম ছাপাখানার ব্যবহার শুরু হয় চীনে। কম্পিউটার আবিষ্কারের সাথে সাথে এর বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ছাপাখানা কিন্তু আমাদের বাড়িতেই যা প্রিন্টার হিসেবে পরিচিত।
ক্যালকুলেটরঃ
--------------
প্রতিদিনের হিসাবের কাজে সবচেয়ে বেশি বাবহ্রিত হয় ক্যালকুলেটর।নবম শতকে চীনে আবিষ্কৃত ক্ষুদ্র ক্যালকুলেটর অ্যাবাকাস। সর্বপ্রথম ১৬৪২ সালে গণিতবিদ ব্লেইসি প্যাসকেল ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। উইলিয়াম সেওয়ারদ ১৮৮৬ সালে বাণিজ্যিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তবে আধুনিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার ১৯৬৩ সালে এবং আবিস্কারক বেল পাঞ্চ কোম্পানি।
বিদ্যুৎঃ
--------------
বিজ্ঞানের সকল আবিষ্কারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ আবিষ্কার ছাড়া চার্জ বাবহ্রিত সকল আবিষ্কার বিফলে পরিণত হত। বিদ্যুৎ কে আবিষ্কার করেছে তা সঠিকভাবে বলা দুরুহ। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে শুরু করে খ্রিস্টাব্দ ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ভিবিন্ন গবেষণার ফলে আজকের অবস্থানে বিদ্যুৎ । বিদ্যুৎ তৈরির উৎসগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, নিউক্লিয়ার শক্তি, সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি অন্যতম।
টেলিফোনঃ
--------------
মোবাইলের ব্যাবহারে টেলিফোন চাহিদা কমে গেলেও এর গুরুত্ব অনেক। আলেকজেনডার গ্রাহাম বেল ১৮৭০ সালে টেলিফোন আবিষ্কার করেন। এটি আবিষ্কারের পিছনে ছিলেন অ্যান্টনি মিউকি, ফিলিপ রিস, ইলিশা গ্রে এবং আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। কিন্তু ১০ মার্চ ১৮৭৬ সফলভাবে টেলিফোন আবিষ্কার করেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। আর টেলিফোনের ব্যাবহারে প্রথম বাক্য ছিল “এখানে আসো, তোমাকে আমার প্রয়োজন”।
বৈদ্যুতিক বাতিঃ
--------------
বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে মানুষ এর বিভিন্ন ব্যবহার শুরু করে। পাশাপাশি রাতের অন্ধকার দূর করে আলোকিত করার সপ্ন বাতিক্রম কিছু নয়। এর থেকেই আবিষ্কার বৈদ্যুতিক বাতির। এর আবিস্কারক আমেরিকান বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। তার আবিষ্কারের এক বছর পূর্বে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জোসেফ সন একই ধরনের বাতি আবিষ্কার করেন। কিন্তু তা ব্যবহার উপযোগী ছিল না। সর্বপ্রথম মানুষ সফলভাবে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু করে ১৮৭৯ সালে। আর বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করে।
কম্পিউটারঃ
--------------
যুগে যুগে বিখ্যাত কিছু আবিষ্কার হয়েছে যা মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। তেমনি এক বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। কম্পিউটার আবিষ্কার যেন মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। যুগান্তকারী এই কম্পিউটারের আবিস্কারক হাওয়ারড আইকেন। ডেস্কটপ কম্পিউটার সর্বপ্রথম মানুষের হাতে আসে ১৯৭৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে অ্যাডাম অসবর্ণ ল্যাপটপ আবিষ্কার করেন।
টেলিভিশনঃ
--------------
মানুষের বিনোদন জোগাতে বিজ্ঞানের সর্বপ্রথম আবিষ্কার টেলিভিশন। এর আবিস্কারক জন লেজি বেয়ারড, ফার্নসয়রথ এবং জরিকিন। টেলিভিশনের ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৯৫৮ সালে। এটি শোনার পাশাপাশি দেখার সুবিধাও রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের তিন বিলিয়নেরও বেশি মানুষ টেলিভিশন ব্যবহার করে। আবিষ্কারের শুরু থেকে টেলিভিশনের গঠন পরিবর্তন। হচ্ছে। একসময়ের বারো ইঞ্চি লম্বা টিউবযুক্ত টেলিভিশন থেকে আজ আমরা পঞ্চাশ ইঞ্চি এল.সি.ডি টেলিভিশন দেখতে পায়।
বিমানঃ
--------------
বিমানের ধারণা আসে মুলত রাইট ভাত্রিদয়ের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অরভিল এবং উইল্ভার রাইট প্রথম মানুষের ভাসমানের সম্ভাব্যতা নিয়ে পরীক্ষা চালান। আর বাণিজ্যিকভাবে ১৯১১ সালে এরোপ্লেন আবিষ্কার করা হয়। বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সবচেয়ে দ্রুতগামী মাধ্যম হচ্ছে এরোপ্লেন। এরোপ্লেন এর নীতির উপর ভিত্তি করেই জেট বিমান, রকেট ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে বিমানের যাত্রী সংখ্যার সঠিক হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হয় বিমান যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ১.৫ বিলিয়ন।
এয়ার-কনডিশনঃ
--------------
বছরের সকল সময় আরমামদায়ক আবহাওয়া সৃষ্টিতে বাবহ্রিত যন্ত্র এয়ার কন্ডিশন । বর্তমান বিশ্বের ৯৫ ভাগ মানুষ অফিস, বাড়িঘরে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করে থাকে। আমেরিকান বিজ্ঞানী উইলিস কারিয়ার এটি আবিষ্কার করেন। ১৯০২ সালে একটি প্রিন্টিং এর দোকানের অতিরিক্ত আদ্রতা কমাতে একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটিই বর্তমানে এয়ার কন্ডিশন হিসেবে সমগ্র বিশ্বে বাবহ্রিত হচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ডঃ
--------------
বর্তমানে বড় বড় বিপণিতে কেনাকাটা করতে নগদ টাকার পরিবর্তে একটি কার্ড ব্যবহার করা হয়। এটি কোনকিছু ক্রয় করে বিপনিবিতানে বসে শুধু একটি কার্ড দিয়ে দাম পরিশোধ করা যায়। আর এই প্লাস্টিক কার্ডই ক্রেডিট কার্ড। সর্বপ্রথম ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার সফলভাবে শুরু হয়। সর্বপ্রথম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী যুক্তরাষ্ট্রের জন.বিগিন ।
ডিজিটাল ক্যামেরাঃ
--------------
১৯৭৫ সালে স্তেভেন সাসন ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কার করেন। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল ০.০১ মেগা পিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন ।আর আজ আমরা ১৬০ মেগা পিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকি। এমনকি বর্তমানে মোবাইল ফোনেও ডিজিটাল ক্যামেরা সুবিধা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সৃতি ধরে রাখা সহ গবেষণায় বিভিন্ন ডিজিটাল ছবির জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা বাবহ্রিত হয়ে থাকে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভঃ
--------------
বর্তমানে যে কোন প্রয়োজনে আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে থাকি। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে ডব্লিউ.ডব্লিউ.ডব্লিউ শব্দটি খুব পরিচিত। আর এই শব্দ তিনটির পূর্ণ রুপ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ। সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বারনারস লি এটি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে ১.৯ বিলিয়ন মানুষ এটি ব্যবহার করে থাকে। এই শব্দ তিনটি দারাই সকল ওয়েভসাইট তৈরি হচ্ছে আর আমরা পেয়ে যাচ্ছি আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য।
অটোমোবাইলঃ
--------------
মানুষ চলার পথকে আরও অনেক আরামদায়ক এবং দ্রুত করতে বিজ্ঞানের এক আবিষ্কার অটোমোবাইল। সর্বপ্রথম জার্মানির একদল বিজ্ঞানী রাস্তায় এটির ব্যবহার শুরু করেন। কিন্তু তারা সফল হতে পারেন নি। পরবর্তীতে স্বদেশীয় দুই বিজ্ঞানী কার্ল বেলজ এবং ডেইলমলারের আবিষ্কৃত অটোমোবাইল খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর এজন্য অটোমোবাইলের আবিস্কারক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কার্ল বেনজকে।
মোবাইল ফোনঃ
--------------
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল। প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ থেকে শুরু করে গেইম খেলা, হিসাব নিকাশ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং সহ সকল কাজে মোবাইল ব্যবহার করা হয়। বহুল বাবহ্রিত এই যন্ত্রটির আবিষ্কার কৌশল এসেছে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের টেলিফোন আবিষ্কারের মাধ্যমে। সর্বপ্রথম তারহীন এই মোবাইল ফোন বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে। আর প্রথম বাজারজাত কোম্পানি মটোরলা। বর্তমানে বিশ্বের শতকরা৭৫ ভাগ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে থাকে।
এ. টি.এমঃ
--------------
জরুরী বা ছুটির দিনে বাংকে গচ্ছিত টাকা উঠানোর একটি বিশেষ পদ্ধতি এ. টি.এম বা অটোমেটেড টেলার মেশিন। বিজ্ঞানী লুথার জর্জ সিমজান এটি আবিষ্কার করেন। এখানে একটি পিন কোডের মাধ্যমে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশে এটি বহুলভাবে বাবহ্রিত হচ্ছে।
রেফ্রিজারেটরঃ
--------------
কোন খাবার টাটকা রাখতে বহুল ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম রেফ্রিজারেটর। সর্বপ্রথম উইলিয়াম কুলেন ১৭৮৪ সালে রেফ্রিজারেটরের ডিজাইন করেন । কিন্তু এর কোন ব্যাবহারিক কোন প্রয়োগ হয় নি। পরবর্তীতে ১৮০৫ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক অলিভার ইভান রেফ্রিজারেটরের নকশা করেন। সবচেয়ে উন্নত রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করেন আফ্রিকান-আমেরিকান বিজ্ঞানী থমাস এল্কিন এবং জন স্ট্যান্ডার্ড। বর্তমানে এটি সকল দেশের মানুষ কম বেশি ব্যবহার করে থাকে।
▬▬▬
No comments