Header Ads

Header ADS

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা

#আল্লাহর_জন্য_ভালোবাসা
-শাইখ আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা কথাটি বলা যত সহজ আমার মনে হয় তার প্রমাণ দেওয়া তত কঠিন। কিন্তু অনেক সময় তা সহজেই অন্যজন বুঝতে পারে। কথাবার্তার ধরণ, আচার-আচরণ থেকে বুঝা যায় কে তার ভালোবাসাতে খাটি। দুনিয়ার সে ভালোবাসাই আখেরাতে কাজে লাগবে যা হবে একান্তভাবে আল্লাহর জন্য। আর এর মাধ্যমেই দুনিয়াতে ঈমান পূর্ণতা পাবে। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা বলতে বুঝাচ্ছি সেই ভালোবাসা যা আল্লাহর কারণে হবে, আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর ভালোবাসার দাবী অনুসারে কাউকে ভালোবাসা। যে ভালোবাসা কোনো দয়া বা মায়ার কারণে সংঘটিত হয়নি।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে, আল্লাহ ও তার রাসূল তার কাছে অপরাপর সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় হবে, কোনো লোককে ভালোবাসবে কেবল আল্লাহর জন্যই আর কুফরীতে ফিরে যাওয়া তার নিকট এতই অপছন্দের বিষয় যেমনটি আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া কারও কাছে অপ্রিয়। [বুখারী:৬৯৪১]

রাসূলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন, “যে কেউ আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে, আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করবে, আল্লাহর জন্য প্রদান করবে আর আল্লাহর জন্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকবে সে তার ঈমান পূর্ণ করতে সমর্থ হলো”। [আবু দাঊদ: ৪৬৮১]

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ সেদিন তার আরশের ছায়ায় জায়গা দিবেন, যেদিন আল্লাহর সে ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না, ... তন্মধ্যে সে দু ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর জন্যই পরস্পরকে ভালোবেসেছে, এর ওপরই তারা একত্রিত হয়েছে এবং এর ওপরই পৃথক হয়েছে।” [বুখারী: ১৪২৩]

রাসূলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি ঈমানের স্বাদ পেতে চায় তাহলে সে যেন কাউকে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালোবাসে”। [সহীহুল জামে‘উ ৬২৮৮]

অপর হাদীসে এসেছে, একলোক তার কোনো ভাইকে দেখতে কোনো এক জনপদে গেল, আল্লাহ সেখানে এক ফেরেশতা পাঠালেন, সেখানে ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ? সে বললো, আমি এ জনপদে আমার এক ভাইকে দেখতে যাচ্ছি। ফেরেশতা বললো, তোমার কাছে কি সে কোনো কিছুর প্রতিদান প্রাপ্তি রয়েছে যা তুমি ভোগ করছ? সে বললো, না, তবে আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তখন ফেরেশতা বললো, তাহলে জেনে রাখ, আমিও তোমার কাছে আল্লাহর দূত, তোমাকে এটা জানানোর জন্য যে আল্লাহ তোমাকে ভালোবেসেছেন যেমনটি তুমি ঐ লোকটিকে ভালোবেসেছ। [মুসলিম, ২৫৭৬]

উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা নবীও নয় আবার শহীদও নয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাদের অবস্থান দেখে নবী ও শহীদগণ আনন্দে উদ্বেলিত হবেন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ, আমাদেরকে জানিয়ে দিন তারা কারা? রাসূল ﷺ বললেন, তারা তো সে সব লোক যারা তাদের মধ্যে কোনোরূপ আত্মীয়তার বন্ধন কিংবা আর্থিক লেনদেন ব্যতিরেকেই পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসেছে, আল্লাহর শপথ তাদের চেহারা হবে নূরের, তারাও থাকবে নূরের ওপর, মানুষ যখন ভয় পাবে তখন তারা ভয় পাবে না, মানুষ যখন পেরেশান হবে তখন তারা পেরেশান হবে না।” [আবু দাঊদ: ৩৫২৭]

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “যারা আমার কারণে পরস্পরকে ভালোবেসেছে তারা কিয়ামতের দিন নূরের মিম্বরের উপর অবস্থান করবে”। [তিরমিযী: ২৩৯০]

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, “কোথায় তারা যারা আমার মর্যাাদার কারণে পরস্পরকে ভালোবেসেছিল? আজকের দিনে আমি তাদেরকে আমার আরশের ছায়ায় জায়গা দিব, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া নেই।” [মুসলিম: ২৫৬৬]

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “মহান আল্লাহ বলেন, আমার ভালোবাসা সে দু’জনের জন্য অবধারিত হয়ে গেছে যারা আমার কারণে পরস্পরকে ভালোবেসেছে, আমার ভালোবাসা সে দু’জনের জন্য অবধারিত হয়ে গেছে যারা আমার কারণে পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করেছে, আমার ভালোবাসা সে দু’জনের জন্য অবধারিত হয়ে গেছে যারা আমার কারণে পরস্পরের জন্য ব্যয় করেছে, আমার ভালোবাসা সে দু’জনের জন্য অবধারিত হয়ে গেছে যারা আমার কারণে পরস্পর সম্পর্ক জুড়ে রেখেছে”। [মুসনাদে আহমাদ: ১৯৪৩৮; ২২০৪০]

ইবনে হিব্বানের বর্ণনায় আরও এসেছে, আমার ভালোবাসা সে দু’জনের জন্য অবধারিত হয়ে গেছে, যারা পরস্পরকে আমার জন্যই নসীহত করেছে বা একে অপরের কল্যাণকামী হয়েছে। [ইবন হিব্বান: ৫৭৭]

এবারের মক্কা সফরে বহু পরিচিত অপরিচিত ভাই, আমার প্রতি আল্লাহর জন্য তাদের ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন, ব্যক্ত করেছেন, দূর-দূরান্ত থেকে সাক্ষাতের জন্য ছুটে এসেছেন, খরছ করেছেন, সময় ব্যয় করেছেন, নসীহত করেছন, তাদের নিখাদ সে ভালোবাসার বিপরীতে আমি শুধু এটাই বলবো, “আমিও আপনাদের সবাইকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসি”। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে তা বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়” [সহীহুল জামে‘উ: ২৮১]

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে তা শুনবে সেও যেন বলবে, “আল্লাহও আপনাকে ভালোবাসুন, যার জন্য আপনি আমাকে ভালোবেসেছেন।” [আবু দাঊদ]

সুতরাং আমি সেসব নাম জানা ভাই যেমন মানজুরুল ইসলাম, সেলিম, মাহবূব, ইউসুফ আযাদ, শামসুল আলম সবাইকে বলবো, আপনাদেরকেও আমি ভালোবাসি। আর যাদের নাম জানি না, যাদের কারও কারও সাথে ইতোপূর্বে কোনোদিন সাক্ষাতও হয়নি এমন সকলকেও বলবো, “আপনাদেরকেও আমি আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।”

আল্লাহর কাছে দো‘আ করি তিনি যেন আমাদের এ ভালোবাসা দুনিয়া ছাড়িয়ে আখেরাতেও বহাল রাখেন, যে ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, “অন্তরঙ্গ বন্ধুরা সেদিন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে তবে যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তারা ব্যতীত”। আল্লাহুম্মা আমীন।

লিখেছেন, শাইখ Abubakar Muhammad Zakaria (হাফিযাহুল্লাহ)

[আল্লাহ আমাদের সকলের সম্পর্ককে তার রাহে কবুল করুন। স্বামী-স্ত্রী, সহদর, বন্ধু-আত্মীয়সজন সকলে সকলকে আল্লাহর জন্যই ভালবাসুন। তার সন্তুষ্টিতে ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার সমাজ গড়ে উঠুক। তার জন্য যে সম্পর্কগুলো গড়া হয়- তাকে অসন্তুষ্টু রেখে সম্পর্ক যেন ধরে রাখা না হয়। আল্লাহর জন্যই ভালবাসুন; তার জন্যই ঘৃণা করুন। আল্লাহ তাওফিক দিন।]

প্রচারে: AnNur Islamic Marriage Media

No comments

Powered by Blogger.