ধর্ষন নিয়ে নয়ন চ্যাটার্জির লেখা
আজকে দৈনিক প্রথম আলোর শ্লোগান- “শিশুকে ধর্ষকের বিরুদ্ধে লড়াইটা শেখাতে হবে”
কেন ভাই, আমার শিশুকে আগে কেন ধর্ষকের বিরুদ্ধে লড়াই শেখাবো, তার আগে আমার শিশু যেন ধর্ষকের কাছে না যায়, সেই ব্যবস্থা করি। আর সমাজের সদস্য হিসেবে সমাজের কোন মানুষ যেন ধর্ষক না হয়ে উঠতে পারে, সে ব্যবস্থা আগে করি। আমি প্রাপ্ত বয়স্ক, বোধ জ্ঞান সম্পন্ন, আমি আমার দিক থেকে আগে আগ্রগামী হই, সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এরপর না হয় আমার শিশুকে ধর্ষক বা নিপীড়ক সম্পর্কে জানানো যেতে পারে এবং অবশ্যই সেটা লাস্ট স্টেজ।
আমি শিশু নিপীড়কের বিরুদ্ধে শিশুকে শিক্ষা দেয়ার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু এগুলোর মধ্যে অনেক রিক্সও আছে। যদি নিপীড়নের সময় একজন শিশু নিপীড়কের বিরুদ্ধে অধিক রিয়্যাক্ট করে বসে, তখন নিপীড়ক ঐ শিশুকে হত্যাও করতে পারে। একইভাবে আমরা শিক্ষাচ্ছি, একজন নারী যেন ধর্ষকের বিরুদ্ধে লড়াই করে, প্রতিবাদ করে। আমরা এটাকেই বেশি উৎসাহিত করছি। অবশ্যই একজন নারীর নিপীড়কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত, কিন্তু এতে ঐ নিপীড়কের দ্বারা নারী জীবনহানী বৃদ্ধির সম্ভবনা বৃদ্ধি পাবে।
এজন্য আমি বলছি, আমাদের যেসব মিডিয়া আছে, সেগুলো মূল সমাধান রেখে লাস্ট স্টেজের সমাধান নিয়ে আগে আলোচনা শুরু করেছে। মুসলমানদের ইতিহাসে পাওয়া যায়, তাদের পুরুষরা যখন যুদ্ধে যেতো, বছরের পর পর ফিরতো না, স্ত্রীরা বছরের পর বছর স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতো। এখানে একটা নৈতিক শিক্ষা অদৃশ্যভাবে কাজ করতো, যা ঐ নারীকে নৈতিক অবক্ষয়সূচক কাজ থেকে দূরে রাখতো। অপরদিকে ইউরোপীদের ইতিহাসে পাওয়ায়, ইউরোপীয় পুরুষরা যখন যুদ্ধে যেতো, তখন তাদের স্ত্রীদের এক ধরনের ধাতব প্যান্ট পরিয়ে যেতো, যেন সে অন্য কোন পুরুষের সাথে মিলিত না হতে পারে। যদি খুব শিঘ্রই পুরুষটি ফেরত আসতো তবে সমস্যা ছিলো না, কিন্তু যদি দেরি করতো, তবে ঐ নারীর শরীরে পচন ধরে নারীটি মারা যেতো। তাই বলছি ধর্মীয় নৈতিকতা চর্চা বৃদ্ধিতে যে অদৃশ্যভাবে সংরক্ষণ হয়, সেটা হাজার আইন-নিয়ম-কানুন আর লড়াই যুদ্ধ দিয়েও হয় না।
মূল কথা হলো, আমাদের সমাজে যারা বুদ্ধিদাতা সেজে আছে, তারা কোন বিশেষ কারণ বশতঃ সমস্যার মূল সমাধান চাইছে না, দূরবর্তী ছোট কোন সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।
একটি বিষয় উল্লেখ করার মত, আমরা দেখছি হঠাৎ করে শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
যদি ধরে নেই সমাজে হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে একটাও ক্যালকুলেশন করে নিতে হবে,
সমাজে নতুন করে নিশ্চয়ই এমন কিছু প্রবেশ করেছে, যার দরুণ শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ‘নতুন জিনিস’টা কি সেটা খুজে বের করা দরকার আগে।
শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেছনে কিছু কিছু কারণ, অনেকে আগেই ধরতে পেরেছেন, যেমন-
১) পর্নোগ্রাফী
২) মিডিয়ায় যৌন চুলকানি তৈরী করে এমন নাটক/ওয়েব সিরিজ তৈরী,
৩) সমাজে বিয়ে কঠিন হয়ে যাওয়া
৪) মেয়ে শিশুদের পুরুষ শিক্ষক দিয়ে পড়ানো,
৫) মেয়ে শিশুকে পুরুষ গৃহপরিচালক দিয়ে দেখাশোনা করা।
এছাড়া আরো কিছু কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে-
ক) মিডিয়াতে ছোট বাচ্চাদের দিয়ে বড়দের নাটক/গান তৈরী করা।
খ) ছোট বাচ্চাদের বিদেশী অপসংষ্কৃতির অনুসারে্ উচ্ছৃঙ্খল পোষাক পড়ানো। পাশ্ববর্তী দেশের সাজগোজ দেখে বাচ্চার উপর তা অ্যাপ্লাই করা।
গ) ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করা ক্রাইম পেট্রল কিংবা বাংলাদেশের রেডিওগুলোতে প্রচার করা অপরাধীদের নিজ মুখে জীবন কাহিনী মানুষকে অপরাধের দিকে ধাবিত করতে পারে।
ঘ) আর্থিক অসংগতি বৃদ্ধি পাওয়া। অনেক পুরুষ আর্থিক সমস্যার কারণে স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসেন, শহরে একা মেসে থাকেন। যদি শহরগুলোতে খরচ কম হতো, স্বামীরা স্ত্রীদের কাছে রাখতে পারতো, তবে এ ধরনের সমস্যা অনেক হ্রাস করা সম্ভব ছিলো বলে মনে হয়।
এ ধরনের নতুন নতুন কি সমস্যা সমাজে বাড়তেছে, যার দরুণ হয়ত সমাজে শিশু ধর্ষণ বাড়তে পারে, সেগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ করা উচিত। আগে আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেগুলোকে দমন করি, পরে না হয় শিশুকে শিক্ষা দেয়া যাবে।
No comments